মিজানুর রহমান হরিপুর প্রতিনিধি: নির্বাচনী সহিংসতার কারণে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ৪নং ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের মুন্নাগড়,খেকিডাঙ্গী,বাঁকাডাঙ্গী,তালতলা,ডাঙ্গীপাড়া ভাঙ্গামনিসহ পাঁচটি গ্রাম গ্রেফতার আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে৷
সম্প্রতি ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে শেষ হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ৪নং ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে ভাঙ্গামনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট গনণা নিয়ে সাধারণ সদস্য (মেম্বার) প্রার্থী ও কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকা প্রিজাইপিটং অফিসারদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষিত জনতা ভোট কেন্দ্রে হামলা চালায়। এতে প্রিজাইপিটং অফিসার নুর আলম ও সহকারি প্রিজাইপিটং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন আহত হয়।
পরের দিন (১২ নভেম্বর) প্রিজাইপিটং অফিসার নুর আলম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও ১০০০/১২০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে থানায় মামলা করেন। যাহার মামলা নং ০৫।
স্থানীয় ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে হরিপুর উপজেলার ৪নং ডাঙ্গীপাড়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য (মেম্বার) পদে আবুল কালাম ক্রিকেট (ব্যাট মার্কা), আবুল কালাম আজাদ (ফুটবল মার্কা),আমিরুল ইসলাম (বৈদ্যুতিক পাখা মার্কা), তসির উদ্দীন (মোরগ মার্কা) ও শাহাজাহান কবির (তালা মার্কা) মিলে পাঁচ জন নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে৷
১১ নভেম্বর ভাঙ্গামনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলে৷ ভোট গণনা শেষে শাহাজাহান কবির (তালা মার্কা) কে বে-সরকারিভাবে বিজয়ী প্রার্থী ঘোষণা করে প্রিজাইটিং অফিসার নুর আলম৷ ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা পর পরাজিত মেম্বার প্রার্থী আবুল কালাম ক্রিকেট (ব্যাট মার্কা), আবুল কালাম আজাদ (ফুটবল মার্কা),আমিরুল আসলাম (বৈদ্যুতিক পাখা মার্কা), তসির উদ্দীন (মোরগ মার্কা) সন্ধ্যা অনুমানিক সাড়ে ৭ টার সময় ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে প্রিজাইটিং অফিসার নুর আলমের সঙ্গে বাকবিতন্ড শুরু করে। এক পর্যায় বিক্ষিত জনতা ভোট কেন্দ্রে হামলা চালায়। এতে প্রিজাইপিটং অফিসার নুর আলম ও সহকারি প্রিজাইপিটং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটন আহত হয়। নির্বাহী ম্যাজিসট্রেটসহ আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রিজাইপিটং অফিসার নুর আলম ও সহকারি প্রিজাইপিটং অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে লিটনসহ ভোট কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা সকলকে ও ছিনিয়ে নেওয়া মালামাল উদ্ধার করে নিয়ে আসে।
পরের দিন সকালে ভোট কেন্দ্রের নির্বাচনী মালামাল, ব্যালট পেপার, ব্যালট বক্স জোর করে ছিনিয়ে নেওয়া এবং হামলাম অভিযোগ এনে প্রিজাইপিটং অফিসার নুর আলম ছয়জনের নাম উল্লেখ ও ১০০০ থেকে ১২০০ জনকে অজ্ঞাত নামা আসামী করে হরিপুর থানায় মামলা করেন৷ মামলা দায়েরের পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ৫টি গ্রামের পুরুষরা এলাকা ছাড়া হয়েছে ৷ এখন গ্রামগুলো প্রায় পুরুষশূন্য হয়েছে। নিদিষ্ট কিছু মানুষের অপরাধের জন্য সাধারণ মানুষজন গ্রেফতার আতঙ্কে যেখানে সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্তে থাকা পুরুষটি গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়ার কারণে পরিবারের লোকজন মানবেতর জীবন যাপন করছে বলে ভুক্তভুগিরা জানিয়েছে।
ডাঙ্গীপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের স্ত্রী জাহেরা বেগম ও ওসমান আলী স্ত্রী মর্জিনা খাতুন বলেন, যে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে তাদেরকে গ্রেফতার করা হোক৷ আমরাও চাই প্রকৃত অপরাধীর শাস্তি হোক কিন্তু অজ্ঞাতনামা আসামি গ্রেফতার বন্ধ করতে হবে৷ গ্রেপ্তার আতঙ্কে গ্রামগুলো পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে৷ ছেলে মেয়ে নিয়ে বাড়িতে একাই রাত্রি যাপন করতে হয়৷ আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। অজ্ঞাত নামা গ্রেফতার বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি আমরা৷ আমাদের পরিবারের ভরণ পোষণের একমাত্র মানুষটি গ্রেফতার আতঙ্কে পালিয়ে বেড়াচ্ছে এতে আমাদের খাওয়া-দাওয়ার অনেক কষ্ট হচ্ছে৷
ভাঙ্গামননি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিজাইডিং অফিসার ও কেবি ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক নুর আলম বলেন, ভোটগ্রহণ গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণার পরে আমাদের উপর অতর্কিত ভাবে হামলা করে এবং ব্যালট পেপার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে ৷ পরে পুলিশ ছিনতাই হওয়া জিনিসপত্র উদ্ধার করে ৷
অতর্কিত হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দানকারীর কাউকে চিনতে পেরেছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে প্রিজাইডিং অফিসার নুর আলম বলেন, আমি তাৎক্ষণিক কাউকে চিনতে পারিনি৷
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই তারেকুল তৌফিক জানান এ পর্যন্ত তদন্তে জড়িত থাকার অভিযোগে অঙ্গাতনামা পাচজন আসামি ধরা পরেছে এবং এজাহার নামীয় আসামীদের ধরার জোর চেষ্টা চলছে।