বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০০৫ সালে ঢাকার বাইরে অন্যান্য নগরে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৩ কেজি। ২০২০ সালে হয়েছে ৯ কেজি। ঢাকা শহরে ৯ কেজি থেকে বেড়ে ২৪ কেজি হয়েছে। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, তার ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য থেকে আসে।
রাজধানী ঢাকায় একজন মানুষ বছরে ২৪ কেজি প্লাস্টিক ব্যবহার করেন। ২০০৫ সালে করতেন ৯ কেজি। এ হিসাবে ১৫ বছরে ঢাকার মানুষের প্লাস্টিক ব্যবহার বেড়েছে আড়াই গুণের বেশি।
বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
সোমবার ঢাকায় একটি হোটেলে ‘টুয়ার্ডস আ মাল্টিসেক্টরাল অ্যাকশন প্ল্যান ফর প্লাস্টিক ম্যানেজমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি প্রjfশ করা হয়।
তাতে বলা হয়, ২০০৫ সালে ঢাকার বাইরে অন্যান্য নগরে মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ছিল ৩ কেজি। ২০২০ সালে হয়েছে ৯ কেজি। ঢাকা শহরে ৯ কেজি থেকে বেড়ে ২৪ কেজি হয়েছে। দেশে সারা বছর যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয়, তার ১০ শতাংশ প্লাস্টিক পণ্য থেকে আসে। এর ৪৮ শতাংশ মাটিতে পড়ে, আর ৩৭ শতাংশ পুনরায় ব্যবহৃত হয়। ১২ শতাংশ পড়ে খাল ও নদীতে। আর ৩ শতাংশ নালায় গিয়ে মেশে।
মাটিতে পড়া প্লাস্টিকের বড় অংশ পলিথিন ব্যাগ, পণ্যের মোড়ক ও প্যাকেট হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া।
‘দেশের পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে প্লাস্টিক বর্জ্য’ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, করোনাভাইরাস মহামারি প্লাস্টিক দূষণকে আরও খারাপ করেছে। বিশেষ করে মাস্ক, গ্লাভস এবং ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জামগুলো তৈরিতে প্লাস্টিক ব্যবহার করা হয়। এই প্লাস্টিকের প্রায় অর্ধেক মাটি ও পানিতে রয়ে যায়। তৈরি করে মারাত্মক দূষণ। জনস্বাস্থ্যকে ফেলে হুমকিতে। শুধু তা-ই নয়, দেশের নদ-নদী, খাল-বিল ও নালায় গিয়ে এসব প্লাস্টিক জমা হয়ে জলাবদ্ধতা বাড়াচ্ছে।
এই অবস্থা থেকে উত্তরণে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার অর্ধেকে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা তৈরি করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় করা ওই পরিকল্পনায় প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হয়।
বিশ্বব্যাংক থেকে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জন্য এ গবেষণা ও প্রকাশনা তৈরি করা হয়। দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে তা তৈরি করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে ২০২১ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনতে একটি কর্মপরিকল্পনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। তাতে এ সময়ের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনা, প্লাস্টিক বর্জ্য ৩০ শতাংশ কমানো এবং ২০২৬ সালের মধ্যে প্লাস্টিকের পুনর্ব্যবহার ৫০ শতাংশে উত্তীর্ণ করার কথা বলা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
তিনি পাটের ব্যাগের উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আগে আমাদের এখানে বাজারের ব্যাগ হিসেবে পাট ব্যবহৃত হতো। এখন সবাই খালি হাতে বাজারে গিয়ে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে বাজার নিয়ে ফেরে। এই সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে এসে টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পণ্যকে মোড়ক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।’
বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর দানদান চেন বলেন, ‘দ্রুত প্রবৃদ্ধি ও নগরায়ণের কারণে বাংলাদেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার ও দূষণ উভয়ই হঠাৎ বেড়ে গেছে। করোনাভাইরাস মহামারি প্লাস্টিক আবর্জনার অব্যবস্থাপনাকে আরও বাড়িয়েছে।’
টেকসই প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য ‘সবুজ প্রবৃদ্ধি’ অর্জনের মূল চাবিকাঠি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন প্লাস্টিকের বিকল্প পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে পরিবেশবান্ধব পণ্য উদ্ভাবনের ওপর জোর দেন। বিকল্প পণ্যের দাম ও সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিশ্বব্যাংকের পরিবেশ বিশেষজ্ঞ বুশরা নিশাত অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনার সময় বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে গড় মাথাপিছু প্লাস্টিকের ব্যবহার ১০০ কেজির বেশি, যেটি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি। তবে বাংলাদেশ প্লাস্টিক দূষণের শিকার হওয়া দেশগুলোর তালিকার সবচেয়ে ওপরে থাকা দেশগুলোর অন্যতম এবং প্লাস্টিক বর্জ্যের অব্যবস্থাপনাই এর জন্য দায়ী।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, ‘ঢাকা শহরে বর্জ্য এখন টাকার খনি। এই বর্জ্য কে কীভাবে সংগ্রহ করবে, তা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি পর্যন্ত হয়। তবে আমাদের বর্জ্য থেকে প্লাস্টিককে আলাদা করে ফেলতে হবে। এর পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মনিরুজ্জামানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্যানেল আলোচনায় অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ চন্দ্র দে, ওয়েস্ট কনসার্নের নির্বাহী পরিচালক আবু হাসনাত মো. মাকসুদ সিনহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক গাউসিয়া চৌধুরী বক্তব্য দেন। সূত্র- নিউজ বাংলা