গল্পগুলো প্রায় সবার একই রকম। রেজোয়ানার গল্পটিও তাই। এইচএসসিতে সায়েন্স পড়লে প্রাইভেট টিউশনিতে পড়তে হবে, কিন্তু প্রাইভেট টিউশনির টাকা কোথা থেকে আসবে? অর্থাভাবে গরীব পিতা-মাতার মেধাবী একমাত্র কন্যাটি সিদ্ধান্ত নেয় এবার বিভাগ পরিবর্তনের।
রেজোয়ানা নিজেকে বোঝায়, সায়েন্স যথেষ্ট হয়েছে, এবার তাহলে আর্টস পড়া যাক।
ইজিবাইক চালক পিতা কন্যার সিদ্ধান্তে বিচলিত হয়, অসহায়ত্ব তাকে গ্রাস করে। রাতে পাঠরত একমাত্র কন্যার মাথায় হাত রাখে বাবা, চোখের জল লুকিয়ে বলে~
‘তুই আমার একমাত্র বেটি, তোকে আমি সায়েন্সই পড়াবো…প্রয়োজনে অটোরিক্সা (ইজিবাইক) বিক্রি করে দেবো, আমি অন্য কাজ করবো……’
ইত্যাদি ইত্যাদি।
রেজোয়ানা হাসে, সে জানে, তাদের পরিবারের আয়ের একমাত্র উৎস ঐ ইজিবাইক। রেজোয়ানা বাবাকে বুঝিয়ে বলে, কলেজে আর্টস পড়েই সেই ভাল করতে চায়, অনেক দূরে যেতে চায়। কথা বলতে বলতে রেজোয়ানার স্বপ্নীল চোখ ছলছল করে উঠে। She has miles to go.
বাবাকে দেওয়া রেজোয়ানার কথা মিথ্যা হয় নি একটুও।
রেজোয়ানার মা জানালেন, পড়াশুনা করতে পঞ্চগড় ছেড়ে সে দূরে চলে যাচ্ছে। এবার গন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সহজ সরল রেজোয়ানাকে প্রশ্ন করা হল,
‘কী হতে চাও, রেজোয়ানা?’
রেজোয়ানা একটু হাসল, সরাসরি চোখের দিকে তাকিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো~
‘স্যার, আমি সারা জীবন পড়াশুনার মধ্যে থাকতে চাই…!’
আমরা উত্তর পেয়ে গেলাম, আমাদের রেজোয়ানা শিক্ষক হবে, মানুষ গড়ার কারিগর হবে।
জয়তু রেজোয়ানা।
[ বি.দ্র. জেলা প্রশাসক, পঞ্চগড় স্যার রেজোয়ানার বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি ফির সমুদয় অর্থের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ]