তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি:
উত্তরের জেলার হিমালয়কন্যাখ্যাত তেঁতুলিয়া উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশী ফুল টিউলিপ চাষের পাইলট প্রকল্পের বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের নিয়ে অবহিতকরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে মহানন্দা কটেজের হল রুমে গণমাধ্যমকর্মীদের অবহিতকরণ সভা করে বেসরকারি এনজিও ইএসডিও। ইএসডিও’র সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর আইনুল হক শীত প্রধান দেশের জনপ্রিয় টিউলিপ ফুল বাংলাদেশে প্রান্তিক চাষীদের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন । এতে অংশ নেন পঞ্চগড়ের শীর্ষ গণমাধ্যমের সাংবাদিকবৃন্দ।
আইনুল হক বলেন, টিউলিপ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফুল। এটি ভারতের কাস্মীর, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, তুরস্কসহ বেশির ভাগ শীত প্রধান দেশগুলোতে চাষ হয়। এবার বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের টিউলিপ চাষ সম্প্রসারণের উপযোগিতা সম্ভাবতা শীর্ষক ভ্যালুচেইন পাইলটিং প্রকল্পের মাধ্যমে ৪০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করছে ইকো সোশ্যাল ডেভলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। প্রকল্পটি আর্থিক সহযোগিতা করেছেন পিকেএসএফ। চলতি সালের ১ জানুয়ারীতে এ ফুলের চাষের উদ্বোধন করেছেন ইএসডিও’র নির্বাহী পরিচালক ড.মুহম্মদ শহীদ উজ জামান ও পরিচালক (প্রশাসন) সেলিমা আখতার মহোদয়।
দেশের সীমান্তঘেষা জেলা হিমালয়কন্যাখ্যাত শীত অঞ্চল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দর্জিপাড়া ও শারিয়াল জোত গ্রামে ৩৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা বাজেটে টিউলিপ চাষ শুরু করা হয়েছে। উন্নত ব্যবস্থাপনায় ৪০ শতক জমির তিনটি প্লটে ৪০ হাজার বøাব (বীজ) বপন করেছেন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ৮ নারী চাষী। ২০-২১ দিনের মধ্যেই ফুল ফুটতে শুরু করে। টিউলিপ চাষের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রাতে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এ ফুল চাষ সহনশীল। বীজ বপনের ১৮-২০ দিনের মধ্যে কলি আসে এবং ২৫-৬০ দিন পর্যন্ত স্থায়ীত্ব থাকে।
ইএসডিও’র প্রকল্পের আওতায় চাষীরা ৬টি প্রজাতির ১২ কালারের টিউলিপ চাষ করছেন। এর মধ্যে অ্যান্টাকর্টিকা (হোয়াইট), ডাচ সানরাইস (ইয়োলো), পারপেল প্রিন্স (পারপেল), টাইমলেস (রেড হোয়াইট শেডি), মিল্কসেক (লাইট পিংঙ্ক), বারসেলোনা (ডার্ক পিংঙ্ক), নামে রংবেরঙ্গে টিউলিপ ফুলে ভরে উঠেছে বাগানে। এ ছাড়া অ্যাড রেম (অরেঞ্জ), লালিবেলা (রেড), দি ফ্রান্স ( রেড), রিপ্লে (অরেঞ্জ), ডেনমার্ক (অরেঞ্জ), স্ট্রং গোল্ডসহ (ইয়েলো) বিভিন্ন প্রজাতির টিউলিপ কলিতে ভরে গেছে প্রতি দিনই নতুন নতুন ফুল ফুটছে বাগানগুলোতে।
আইনুল হক আরও জানান, আমাদের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বাস করেন টিউলিপ ফুল চাষের মাধ্যমে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র চাষীদের মধ্যে অর্থনৈতিক আয়, সম্ভাবনা অনেককাংশে বেড়ে যাবে। সেই সাথে পর্যটন শিল্পেও তেঁতুলিয়ার যে বিদ্যমান কাঞ্চনজঙ্ঘাসহ অপূর্ব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আধার সেটিও সম্প্রসারিত হবে। টিউলিপ চাষের পাশাপাশি এখানে ইকো ট্যুরিজম গড়ে তোলার বেশ কিছু নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ইএসডিও।
অবহিতকরণ সভা শেষে সাংবাদিকরা ইএসডিওর টিউলিপ চাষ প্রকল্প দেখতে দর্জিপাড়া ও শারিয়াল জোত গ্রামে যান। সেখানে দেখা যায় তিনটি শেডে কয়েকটি রঙের টিউলিপ ফুল ফুটতে দেখা যায়। দেখতে অনন্য, নজর কাড়ছে ফুলগুলো। টিউলিপ ফুল দেখতে দেখা গেছে বিভিন্ন বয়সী উৎসুক পর্যটকদের। চাষীদের সাথে কথা হলে তারা খুব খুশির আমেজ নিয়ে বলেন, ফুল ভালোবাসে না এমন নেই। আমরা সুভাগ্যবশত বিশ্বের দামী ফুল চাষ করতে পেরেছি। ফুল ফোটায় খুব আনন্দিত। অনেক পর্যটক, ফুল প্রেমিরা এসে ১০০ টাকা দিয়ে ফুল কিনছেন। আমরা বাগান ঘুরে দেখার জন্য টিকেট সিস্টেম চালু করেছি।
সংস্কৃতিকর্মী সরকার হায়দার জানান, তেঁতুলিয়ায় টিউলিপ ফুল চাষ, কল্পনাই করা যায় না। সেখানে এ ফুল ফোটে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে। শুনেই চলে এসেছি। এ ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ হলে চা শিল্পের মতো টিউলিপ চাষের নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে। অর্থনীতি, শৈল্পিক ও পর্যটনে নতুনমাত্রা তৈরি করবে।