মঙ্গলবার , ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তেঁতুলিয়ায় কমিউনিটি ক্লিনিকে নরমাল ডেলিভারিতে বাড়ছে আস্থা ৬ বছরে ৬শ স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে লিলির রেকর্ড

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা
সিএসবিএ প্রশিক্ষণের পর কমিউনিটি ক্লিনিকে ছয়শো নরমাল ডেলিভারির রেকর্ড করলেন মেহেরুন নেহার লিলি নামের এক সিএইচসিপি কর্মী। ৬ বছরে ৬শ স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত করলেন তিনি। এতে করে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে আস্থা তৈরি করে এলাকায় প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে নরমাল ডেলিভারি ৬শ-তে সম্পন্ন হলেও শনিবার পর্যন্ত ৬০২ পর্যন্ত করেছেন। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের কাজিপাড়া ক্লিনিকে সিএইচসিপি হিসেবে কাজ করছেন এ স্বাস্থ্য কর্মী। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সবার কাছে আস্থা হয়ে উঠেছেন এই নারী। সরকার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় পৌছে দেয়া স্বাস্থ্যসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি আস্থা বহুগুণে বেড়েছে।

তেঁতুলিয়া হাসপাতালের দূরত্ব ২০ কি.মি ও জেলা আধুনিক সদর হাসপাতাল ৩৫ কি.মিটার দূরত্বে সীমান্তের এক অজপাড়াগায় এই কমিউনিটি ক্লিনিক। ১৯৯৮ সালে ক্লিনিকটি স্থাপনে এ এলাকার জমি দিয়েছিলেন রমিনা খাতুন। ২০১১ সালে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) হিসেবে চাকরিতে যোগ দিয়ে তেঁতুলিয়া হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসার উপর প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন প্রাথমিক চিকিৎসা।

২০১৪ সালে ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালে কমিউনিটি স্কীল বার্থ এটেনেডেন্ট (সিএসবিএ) বিষয়ে ৬ মাসের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে পরের বছর থেকেই অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি নরমাল ডেলিভারি কার্যক্রম শুরু করেন। প্রথম ডেলিভারির কাজটি করেছিলেন বুকে দুরু দুরু ভয় নিয়ে। ১ ঘন্টার চেষ্টায় সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে স্বাভাবিক বাচ্চা প্রসবের পর ছড়িয়ে পরে কাজের পরিচিতি। একে একে দীর্ঘ ৮ বছরে ৬শ নরমাল ডেলিভারি করে এলাকার হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষের কাছে হয়ে উঠেন আস্থার নতুন ঠিকানা।

মেহেরুন নেহার লিলি বলেন, ‘প্রথম প্রথম আমার প্রচন্ড ভয় লাগতো। ভাবতাম আমার দ্বারা এ জটিল কাজ কিভাবে সম্ভব হবে। ফরিদা আক্তার নামের এক নারীর প্রথম ডেলিভারী সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে আমার সাহস বেড়ে যায়। শীত কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে রাতভর পরিশ্রম করে যখন গর্ভবতী মায়ের গর্ভ হতে ফুটফুটে সুস্থ্য সন্তান ভূমিষ্ঠ হয় তখন ভুলে যেতাম সব কষ্ট। ডেলিভারী করতে পারলে আমার খুব আনন্দ হয়। আমার নিকট আত্মীয় অনেকের ডেলিভারী করেছি যেটা আমার অতৃপ্ত ভাললাগা ও প্রাপ্তি। আমার এ অসাধ্য কাজে সার্বিক পরামর্শসহ সাহস জুগিয়েছেন তৎকালীন সিভিল সার্জন ডা: পীতাম্বর রায়, এইচ আই শরীফ উদ্দিন, এএইচআই জমির উদ্দিন এবং এইচএ দেলোয়ার হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই।

লিলি আরও বলেন, ভালোবাসা দিবসে আল্পনা বেগম নামের এক প্রসূতির নরমাল ডেলিভারি করে ৬শ পূর্ণ করলাম। নতুন বছরে জানুয়ারিতে ১১টি ও চলতি মাস ফেব্রæয়ারির ৫টি নরমাল ডেলিভারি করেছি। বিশেষ করে এখানকার হতদরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত মানুষ যারা সিজার করাতে পারেন না, তারা খুব সহজে নরমাল ডেলিভারির আস্থা নিয়ে আমার কাছে আসছেন। এখন পর্যন্ত কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি। প্রতিটি শিশু ও মা সুস্থ্য রয়েছেন। এখন রাত-দিনে সমস্যা হলেই ডাক পড়ে। রোগীরা সরাসরি কিংবা মুঠোফোনে সমস্যার কথা বলছেন। তাদের সেবা করতে পেরে ভালোলাগে।

প্রসূতি আল্পনা বেগমসহ কয়েকজন প্রসূতি জানান, লিলি আপা ভালো মানুষ। যখনই তাঁকে ফোন দিই তখনই পাওয়া যায়। নরমাল ডেলিভারিতে তাকে ডাকলেই পাওয়া যায়। খুব সুন্দরভাবে অল্প সময়েই আমার ডেলিভারী সম্পন্ন করেছেন। এতে আমার খরচও বেঁচে গেছে। তাঁর কাজে আমিসহ সবাই সন্তুষ্ট।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.আবুল কাশেম বলেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাভাবিক সন্তান প্রসবে ৬শ পূর্ণ হওয়াটা অত্যন্ত গৌরবের। উত্তরাঞ্চলে এরকম রেকর্ড খুবই কম। অত্র উপজেলার অন্যান্য ক্লিনিকগুলোতে গর্ভবতী নারীর অভিভাবকরা কমিউনিটি ক্লিনিকে এনে নরমালি ডেলিভারি করাচ্ছেন। সিএইচসিপি মেহেরুন নেহার লিলির এ রেকর্ড প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পুরস্কার পাওয়ার যোগ্য। তাকে বিশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত