তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
দেশের চতুদের্শীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় চাঁদাবাজির অভিযোগে হট্টগোলে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। । এসব ঘটনায় বন্দরটিতে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। গত সোমবার জেলা প্রশাসক বরাবর স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের করা এক অভিযোগকে কেন্দ্র করে ঘটেছে মারধরের ঘটনা। আব্দুল্লাহ আল মুসা নামের এক সিএন্ডএফ এজেন্টকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে খোদ বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে। বন্দরটির আমদানি-রপ্তানীকারক গ্রæপের সাধারণ সম্পাদকও তিনি। ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে মিলন ও তার বাহিনীর হাতে নির্যাতনে শিকার হচ্ছেন সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সদস্যরা।
গত ১৭ এপ্রিল জেলা প্রশাসক বরাবর দেয়া অভিযোগপত্রের মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের সদস্যদের কাছ থেকে বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান মিলনের বাহিনী দ্বারা রপ্তানীকৃত প্রতি গাড়ী হতে ১শ টাকা চাঁদা আদায় করছে। বিষয়টি প্রতিবাদ করলে বিভিন্ন হুমকি প্রদান করা হচ্ছে তাদের। এরই জেরে সোমবার দুপুরে সহকারি কমিশনার মবিন উল হকের কার্যালয় হতে সিএন্ডএফ এজেন্ট আব্দুল্লাহ আল মুসাকে ধরে নিয়ে মারধর করার ঘটনা ঘটে। তবে মারধরের লিখিত কোন অভিযোগ না থাকলেও মৌখিকভাবে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী সিএন্ডএফ এজেন্ট আব্দুল্লাহ আল মুসা অভিযোগ করে বলেন, গত সোমবার দুপুরে আমি সহকারি কমিশনার স্যারের রুমে ছিলাম। সেখানে মিলন ও তার লোকজন এসে আমাকে জেলা প্রশাসকের বরাবর অভিযোগ দেয়ার কারণ উল্লেখ করেই আমার উপর ক্ষীপ্ত হয়ে মারধর শুরু করে। আমি জানাই আমি কোন অভিযোগ করিনি। কিন্তুতা না শুনে তারা মারধর করতে থাকেন। ইউপি নির্বাচনের সময় প্রার্থীতা নিয়ে ক্ষীপ্ততার জের ধরে আমাকে মারধর করে। আমরা সিএন্ডএফ এজেন্টরা তার কারণে শান্তিমত ব্যবসায়ী কার্যক্রম চালাতে পারছি না। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে চাদা দাবি করছে। তাছাড়া এই মিলন চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত আদালতে ৩০টির বেশি মামলা চলমান রয়েছে। বিষয়টি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তার উপর মারধরের উপযুক্ত বিচার চান এ ভুক্তভোগী।
সিএন্ডএফ খন্দকার লিপ্টন জানান, মারধরের বিষয়টিতে আমরা স্তম্ভিত। আমাদের সিএন্ডএফ সদস্যকে মারধর করা হয়েছে। তবে ঘটনাটি একটি অভিযোগ ঘিরে। যেটি মুসা করেনি বলে জেনেছি। আর চাঁদার বিষয়টিতে বলতে পারি, বন্দরের গাড়ি প্রতি যে ১শ টাকা তোলা হয় তা দিয়ে নিরাপত্তা কর্মী (আনসার) দের মাসিক বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক বরাবর স্থলবন্দর সিএন্ডএফ এসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত অভিযোগটির বিষয়ে কেউ স্বীকার করতে চাচ্ছে না। অস্বীকার করেছেন জাহাঙ্গীর আলমও। তিনি জানান, এটা আমার স্বাক্ষর নয়। আমার নাম দিয়ে কে বা কারা অভিযোগটি করেছে তা বুঝতে পারছি না। এ কারণে অভিযোগের চিঠিটিকে উড়ো চিঠি হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে চিঠির অভিযোগ ঘটনা সত্য বলে বলছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে মারধর ও চাঁদা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন। তিনি জানান, আমার বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি ভিত্তিহীন অভিযোগ করায় হতবাক হয়েছি। এ অভিযোগ সিএন্ডএফ এজেন্ট আব্দুল্লাহ আল মুসার মাধ্যমে করা হয়েছে মর্মে জানতে পেরে বিষয়টির সত্যতা মুসার কাছে জানতে চাইলে আমার ও আমার লোকজনের উপর ক্ষীপ্ত হয় সে। উত্তেজনা পরিস্থিতিতে আমিও মারধরের শিকার হয়েছি।
চাঁদাবাজির যে অভিযোগটি করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। মূলত স্থলবন্দরের নিরাপত্তার রক্ষার্থে এখানে কিছু নিরাপত্তাকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এদের যেহেতু নির্দিষ্ট সরকারি কোন বেতন ভাতা নেই, তাই প্রতি মাসে গাড়ি প্রতি যে ১শ টাকা উত্তোলন করা হয়, তা দিয়ে এই নিরাপত্তাকর্মীদের বেতন-ভাতা প্রদান করা হয়। বিষয়টি বন্দর সংশ্লিষ্ট অবগত রয়েছেন। এখানে চাঁদাবাজি বিষয়টি আসে কীভাবে? বিশেষ করে ওইসব সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীরা গাড়ি প্রতি নির্ধারিত টাকা নিয়মিত না দেয়ায় তা চাইতে গেলে তারা চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলছেন। অন্যদিকে আব্দুল্লাহ আল মুসার বিরুদ্ধে রয়েছে নানান অভিযোগ। তবে ঘটনার দিন রাতে বিষয়টি নিয়ে মীমাংসা হয়ে গেছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের মারধরের বিষয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ছে কীনা জানতে চাইলে কাস্টমের সহকারি কমিশনার মবিন উল হক জানান, এ বিষয়ে মূলত আমি কিছুই জানি না। তবে স্থলবন্দরে এরূপ মারধর ঘটনা বিরূপ প্রভাব তৈরি করে। এ স্থলবন্দরের দেশের অন্যান্য স্থলবন্দর হতে অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
তেঁতুলিয়া মডেল থানার ওসি আবু ছায়েম মিয়া জানান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে মারধরের ঘটনায় থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে কীনা জানতে চাইলে এ বিষয়ে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। তবে বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে শুনেছি।
জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।