পঞ্চগড় প্রতিনিধি,গত তিনদিন ধরে অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়ে পড়েছে মানুষজন। পানি নিস্কাসনের সুব্যবস্থা না থাকায় পানি উঠে পড়েছে বসতবাড়িতে। সেই সাথে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতা ও নদীর পানি বসতবাড়িতে প্রবেশ করায় রান্না করতে পারছে না অনেক পরিবার। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকায় শুকনো খাবার বিতরণ করা হলেও চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিস বলছে এই বৃষ্টিপাত আরও দু-একদিন অব্যাহত থাকতে পারে। বৃষ্টিপাত বেশি হলে দূর্ভোগ আরও বাড়বে।
গত সোমবার শুরু হয়ে গতকাল বুধবার পর্যন্ত থেমে থেমে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে পঞ্চগড় জেলায়। পানি নিস্কানের সুব্যবস্থা না থাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতার। এতে করে জেলার বিভিন্ন স্থানে পানি সরে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় বসতবাড়িতে পানি উঠে গেছে পঞ্চগড় পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে জলবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে সদর উপজেলার হাড়িভাসা, সদর, অমরখানা, চাকলাহাট, ধাক্কামারাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের অনেক এলাকায় কোথাও হাটু আবার কোথায় কোমর পানি জমে আছে। অনেক এলাকায় রান্নাঘরে পানি উঠায় চুলায় আগুন জ্বলেনি। যাদের গ্যাস ও বৈদ্যুতিক চুলা নাই নি¤œ আয়ের এমন পরিবারগুলো রান্না করতে না পারায় পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছে। পঞ্চগড় সদর ইউনিয়নের বলেয়াপাড়া গ্রামের আব্দুল হাকিম জানান, আমাদের বাড়ির পাশে একটি রিং কার্লভার্ট দিয়ে পানি সরে যেতে পারছে না। বাড়িতে পানি প্রবেশ করায় গত দুইদিন ধরে অর্ধশত পরিবার চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। রান্নাঘরে পানি উঠে পড়ায় চুলা জ্বলছে না। এদিকে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিমনগর, রামের ডাঙ্গা ও তুলার ডাঙ্গা গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। নদীর পানি বৃদ্ধি এবং অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে পৌর এলাকায় অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। জেলা শহরের বানিয়াপাড়া থেকে কামাতপাড়া যাওয়ার রাস্তায় হাটু পানি থাকায় চরম বিড়ম্বনায় পড়ছেন পথচারীসহ এলাকার মানুষজন।
পঞ্চগড় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুদুল হক জানান, সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অনেক স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে চাকলাহাট ইউনিয়নের শতাধিক পরিবার তিনটি আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের খিচুরী রান্না করে খাওয়ানো হচ্ছে। ওই ইউনিয়নে ৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাকি ৯ ইউনিয়নে দেয়া হয়েছে দুই মেট্রিক টন করে চাল।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গতকাল বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বিগত ২৪ ঘন্টায় তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বোচ্চ ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে সোমবার ১০৩ এবং মঙ্গলবার ১১৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, আজ (বুধবার) বিকেল থেকে বৃষ্টির প্রকোপ কমে আসবে। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে। বর্ষাকাল হওয়ায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। তবে আপাতত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস নেই বলে তিনি জানান।