দিনাজপুর প্রতিনিধি \
হাঁতুড়ি পেটার ঠুকঠাক আর ভাঁতির ফাসফুস, টুং-টাং শব্দে মুখর এখন কামারশালাগুলো। নীরব পরিবেশে হঠাৎ করে কানে ভেসে আসতো টুং টাং আওয়াজ। নিঃশব্দ পরিবেশটাকে ছাপিয়ে চলতো কামারের হাতুড়ি আর হাঁপড়। সেই টুং টাং শব্দ তেমন আর নেই। আছে শুধু হতাশায় ভরা কর্মহীন কিছু মুখ। সময় আর প্রযুক্তি কেড়ে নিয়েছে কামারদের সব খুশি। মানুষ নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে বিদেশী প্রযুক্তির ওপর। দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি কামার শিল্পের চাহিদাও দিন দিন কমছে। তবে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে টুং টাং শব্দে মুখরিত হয়ে উঠলেও কামার পল্লীর শিল্পীরা ভাল নেই। এরপরেও আশায় বুক বেধে ব্যস্তার সময় পার করছে।
যদিও নতুন তৈরী এবং পুরাতন দা-কুড়াল ধারালো করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন দিনাজপুরের কামাররা। কিন্তু সংশয় কাটছে না যেন তাদের। বেচাকেনা আগের তুলনায় কমেছে। কোরবানি পশুর মাংস কাঁটাকাটি আর চামড়া ছড়ানোর কাজে ব্যবহৃত চাপাতি, দা, ছুঁরি, বটিসহ কিছু ধারালো জিনিস ব্যবহৃত হয়। ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের পেশায় কিছুটা ব্যস্ততা বাড়লেও ভাল নেই কামার শিল্পীরা।
কয়েকজন কামার শিল্পী বলেন, বর্তমানে কাঁচা লোহা ও উৎপাদনের উপকরণ সমূহের মূল্য বৃদ্ধি,উৎপাদিত পন্যের মূল্য হ্রাস, ইস্পাত নির্মিত মেশিনে তৈরি জিনিসপত্রের সঙ্গে অসম প্রতিযোগিতা এবং অর্থাভাবসহ নানা প্রতিকুল পরিস্থিতির কারণে কামারশালা প্রায় হারাতে বসেছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিচ্ছে, আবার যারা আকঁড়ে ধরে আছে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
বীরগঞ্জ পৌরসভার কামার পল্লীর প্রবীন কামার মোঃ শাহ আলম (৬৫) বলেন, আমি যখন এই পেশায় আসি তখন আমার বয়স ১৪/১৫বছর। তখন ১০০ দোকান ছিলো। বর্তমানে ২০/২২টি দোকান আছে।
ফুলবাড়ী পৌরসভার সুজাপুর, কামারপাড়া, কাঁটাবাড়ী কামার পল্লীতে আগের মত ব্যস্ততা নেই। যেন ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে সময় পার করছে। কাঁটাবাড়ী কামারশালার পরিমল চন্দ্র রায়, কালিকান্ত রায়, কামার পাড়ার মানিক চন্দ্র রায়, সুজাপুরের সন্তোস রায় ও বিষ্ণু রায় বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবারে কোরবানির ঈদের তেমন কোন কাজ নেই। তারপরও লোহা ও কয়লার দাম অনেক বেড়ে গেছে। সুজাপুরের সন্তোস রায় বলেন, দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতায় তিনি এমন কর্মহীন জীবন আগে কখনই দেখেননি। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলে এ ব্যস্ততা। কিন্তু বর্তমানে চিত্র একেবারেই উল্টো। বাদল আলীসহ ক্রেতারা বলেন, ছুরি, বটি, দাঁ প্রতি বছর আর কিনতে হয়না। এবার চামড়া ছড়ানোর জন্য কয়েকটা চাকু লাগবে তাই চাকু ক্রয় করতে এসেছি।