বর্ষার এ ভরা মওসুমে আকাশে মেঘের ভেলা দেখা দিলেও বৃষ্টির দেখা নাই। তীব্র গরমে মানুষসহ প্রাণীকুলের অস্বস্থিকর অবস্থায় পড়েছে। পানির অভাবে আমন ধানের চারা রোপন করতে পারছেন কৃষক। ফসলের মাঠ ফেটে যাচ্ছে। অন্যদিকে পাটকে জাগ দিতে পারছে না কৃষক। ব্যাহত হচ্ছে কৃষিকাজ। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবার বৃষ্টির আশায় বৃষ্টির দেবতা হিসেবে পরিচিত ইন্দ্র দেবের নগর বিয়ের আয়োজন করে দিনাজপুর সদর উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীর লোকজন।
বাজনা, সাদনা তলায় পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, সাতপাকে বাধা, মালাবদল, সিদুরদান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুযায়ী সব আয়োজনের মধ্যে বিয়ে দেওয়া হয়। পৃথক তিনটি বিয়ের আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করা হয়। বিয়ের পুরোহিত ছিলেন পরিতোষ চক্রবর্তী।
সোমবার রাত ১০টার দিকে দিনাজপুর সদর উপজেলার শেখপুরা ইউনিয়নের নুলাইবাড়ী কর্মকারপাড়ায় এ বিয়ের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় শেখপুরা ইউপির দক্ষিণ নগর গ্রামেও এ বিয়ের আয়োজন করা হয়। রাত ২টার পর একই ইউনিয়নের উত্তর গোপালপুরেও এরকম বিয়ের আয়োজন করা হয়। নুলাইবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ও দিঘন এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক রতন কুমার কর্মকার এ নগর বিয়ের আয়োজন করেন।
তিনটি বিয়েতেই বর ইন্দ্র দেব হিসেবে আসনে বসেন প্রাণকৃষ্ণ ও কনে সেজে কলাবতীর আসনে বসেন প্রদীপ রায়।
এরমধ্যে নুলাইবাড়ী কর্মকারপাড়ায় বিয়েতে বরের বাবা ছিলেন ললিত মোহন রায়। আর কন্যার বাবা ছিলেন রতন কুমার কর্মকার।
বিয়ে দেখতে আসা কিশোরী সঞ্চিতা রায় বলেন, এ ধরনের বিয়ে আমি কোনোদিন দেখিনি। আজ জীবনে প্রথম এ বিয়ের আয়োজন দেখলাম। কিন্তু দাদা-দাদির কাছে শুনেছি, যখন অনাবৃষ্টি ও খরা দেখা দেয় তখন এ ধরনের বিয়ের আয়োজন করা হয়। আজ নিজে উপস্থিত থেকে বিয়েটা দেখার সৌভাগ্য হয়েছে আমার।
৫৫ বছর বয়সী নীরেন চন্দ্র রায় বলেন, ‘বৃষ্টির আশায় আমরা বিয়ের আয়োজন করেছি। সৃষ্টিকর্তার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করেছি।’
আয়োজক রতন কুমার কর্মকার বলেন, ‘বর্তমানে দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে অনাবৃষ্টি দেখা দিয়েছে। তীব্র রোদে জমি ফেটে চৌচির হয়ে পড়েছে। জনজীবন একেবারে বিপর্যস্ত। ঠিকমতো কৃষকরা ধান লাগাতে পারছে না। তীব্র গরমে কোন ভাবেই ক্ষেতেও কাজ করা যাচ্ছে না। পাট জাগ নিয়ে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। তাই আমরা বৃষ্টির জন্য বৃষ্টির দেবতা ইন্দ্র দেব ও কলাবতীর এ বিয়ের আয়োজন করেছি।’
পুরোহিত পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, লোকাচার মেনে পূর্ব পুরুষদের আমল থেকে নগর বিয়ের এ রীতি চলে আসছে। এমন রীতি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। ইন্দ্ররাজ ও শচিদেবীর এই বিয়ে দেয়া হয় অনাবৃষ্টি দেখা দিলে।
যখন কোথাও অনাবৃষ্টি দেখা দেয় তখন সেই এলাকায় নেচে গেয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে ইন্দ্র রাজার বিয়ের আয়োজন করা হয়। সেই পূর্ব পুরুষদের রীতি ধরে রাখছি। এই প্রতীকি বিয়েতে আমাদের প্রার্থনা অনাবৃষ্টির হাত থেকে জনগনকে ভগবান রক্ষা করুন।
তিনি আরও বলেন, বিয়েতে অংশগ্রহণকারী সকলেরই প্রার্থনা ছিল চলমান খরা ও তাপদাহ থেকে রক্ষা করতে বজ্র, বৃষ্টি ও ঝড়ের নিয়ন্ত্রনকর্তা ইন্দ্রদেব ধরায় দেবেন শান্তির বৃষ্টি।