বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুর বীরগঞ্জ উপজেলার পল্লীতে মারামারির মামলার অভিযুক্ত বিবাদীকে ফিল্মী স্টাইলে শশুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে এসে গাছের সাথে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন ও স্বামীকে উদ্ধার করতে গিয়ে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর পেটে লাথি মেড়ে গর্ভপাতের চেষ্টার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা সুত্রে ঘটনার বিবরনে জানা যায়, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের চিলকুড়া বীরচন্দ্রপুর পল্লীতে ধান ক্ষেতে পানি দেওয়ার সেলো মেশিনের বোডিং নিয়ে ঝগড়া ও মারামারির একপর্যায়ে জনৈক মাসুদের কোদালের লাঠির আঘাতে একই গ্রামের মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে আব্দুর রউফ রুনু (৪৫) এর হাতের কনইয়ের একাংশ রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় ২৮ জুলাই আহতের বোন শাহানাজ আক্তার শাহেনা বাদী হয়ে মাসুদ ও তার দুই সহদর ভাই সহ মোট তিনজনের বিরুদ্ধে বীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা আনয়ন করেন এবং মামলাটির তদন্ত চলমান রয়েছে বলে জানান তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা। জানা যায়, উল্লেখিত মামলার ১ নং বিবাদি মাসুদ রানা (৩৫) পুলিশের হাতে ধরা পরার ভয়ে ঘটনার পরেই তার শশুর বাড়ি মিরাটুঙ্গি গ্রামে আত্মগোপন করে। এই সংবাদ পেয়ে ২৯ জুলাই দুপুরে আঃ লতিফের ছেলে রবিউল(৩০), মৃত জালাল উদ্দীনের ছেলে জুবায়েদ সপেন(৪০), মোকাদ্দেস এর ছেলে বাবু (৪৫) সহ বাদী পক্ষের আরোও ৩/৪ জন বে-আইনি জনতায় দলবদ্ধ হয়ে লাঠিসোটা,লোহার রড, দেশিয় মারাত্মক অস্ত্রেসজ্জিত হয়ে মাসুদকে জোরপুর্বক চেংদোলা করে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তার গর্ভবতী স্ত্রী মিনা আক্তার (৩০) বাধা দিলে সন্ত্রাসীরা তার পেটে লাথি মারে। লাথির আঘাতে প্রচন্ড ব্যথার অনুভব হলে তার পরিবারের সদস্যরা আহত গর্ভবতী মিনাকে প্রথমে বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে ডাক্তারের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে ঘটনার দিনদুপুরে সন্ত্রাসীরা মাসুদ রানাকে চার্জার রিক্সা ভেনে উঠিয়ে এলোপাতাড়ি কিল,ঘুষি, চর- থাপ্পর দিতে দিতে প্রায় ৩/৪কিলোমিটার দুরে( মাটিয়াকুড়া থেকে চিলকুড়া) এনে রুনুর বাড়ির ভিতরের আঙ্গিনায় থাকা গাছের সাথে দড়ি ও গামছা দিয়ে হাত -পা বেধে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেদম প্রহার করে ও অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে পুলিশকে খবর দিয়ে আইনের হাতে তুলে দেয়। অতঃপর পুলিশ ঘটনাস্থল চিলকুড়ার রুনুর বাড়ি থেকে মাসুদকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে এসে আদালতে সোপর্দ করেন।
অন্যদিকে মামলা চলমান থাকলেও বাদীপক্ষের লোকজন আইনকে নিজের হাতে তুলে নিয়ে পুলিশকে সহযেগীতা করার নামে সম্পূর্ন বে- আইনিভাবে ফিল্মী স্টাইলে ধরে এনে নির্যাতন করে পুলিশের নিকট সোপর্দ করার ঘটনায় বিচার প্রার্থনা করে মাসুদের বোন কমলা বেগম বাদী হয়ে বীরগঞ্জ থানায় পৃথক একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং -২, তাং- ০২/০৮/২০২২ ইং।
সরেজমিনে চিলকুড়া গ্রামে গেলে দরিদ্র দিনমজুর মাসুদের পরিবারের লোকজন সাংবাদিকদের জানান, প্রভাবশালী হওয়ায় উল্লেখিত মারামারির ঘটনার পর থেকে বাদীপক্ষের লোকজন যত্রতত্র বিভিন্ন সময় তাদের প্রতি প্রাননাশ সহ চরম প্রকারের ক্ষতিসাধনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে যাচ্ছে।
এঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় নিরপেক্ষ সচেতন মহলের অনেকেই মাসুদের প্রতি এই অমানবিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিষয়টির ব্যাপক সমালোচনা করে নির্যাতনের শিকার মাসুদ ও মারামারির সময় উপস্থিত না থাকলেও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে তার নিরপরাধ দুই সহোদর ভাইদের সাথে হওয়া কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান।
এব্যাপারে রুনুর বৃদ্ধা মা সহ তার পরিবারের সদস্যরা মাসুদকে তার শশুর বাড়ির এলাকা মাটিয়াকুড়া থেকে ধরে এনে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় থাকা গাছের সাথে গামছা দিয়ে বেধে নির্যাতনের সত্যতা স্বীকার করে জানান, আসামী যেন পালিয়ে যেতে না পারে তাই পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্য মাসুদ রানা কে খুঁজে বের করে ধরে এনে গামছা দিয়ে গাছে বেধে রাখা হয়েছিল।