বিরল (দিনাজপুর) প্রতিনিধি ঃ জীবন সায়াহ্নে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শর্য্যাশায়ী বিরলের বীরমুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র রায়। চিকিৎস্যা অভাবে বুকে যন্ত্রণা নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনলেও শুধুমাত্র বয়স্কভাতা ছাড়া আর কোন সরকারি সাহায্য বা সেবা পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় বাদপড়া এই বীরমুক্তিযোদ্ধা। সহযোদ্ধারা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও সময়মত যোগাযোগ করতে না পারায় আজও তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি বলে জানা গেছে। বীরমুক্তিযোদ্ধা হতদরিদ্র নরেশের বাড়ী দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার ৮নং ধর্মপুর ইউপি’র গোছহাটা গ্রামে।
বীরমুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র রায় জানান, পরিবারের অভাব অনাটনের কারনে আমি ছোট বেলা থেকেই মানুষের বাড়ীতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। ১৯৭১ সালে আমার বয়স তখন ২৩ বছর। বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্যান্যদের মত আমিও অংশ নিয়েছিলাম। তিনি জানান, ভারতের শিববাড়ী ইয়্যুথ ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নেয়ার পর ৩০৩ রাইফেল নিয়ে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত হই। ৭ নং সেক্টরের অধীনে ডুংডুংগি, পলাশবাড়ীসহ বিরলের বিভিন্ন এলাকায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহন করি। যুদ্ধ শেষে দিনাজপুরের আনন্দ সাগর এলাকায় ক্যাপ্টেন শাহরিয়ার-এর কাছে আমি অস্ত্র জমা দেই। ভেবে ছিলাম স্বাধীনতার সুখ ভোগ করতে পারবো। কষ্ট লাঘব হবে, সম্মান পাবো, শান্তিতে ও সুখে থাকবো। আমার যে অসুখ হয়েছে অর্থাভাবে চিকিৎস্যা করাতে পারছিনা। কেই আমার আমার খবর রাখেনা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা সরকার আমলেও আমার নামটি না-কি মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠেনি। আর বুঝি তালিকায় নাম উঠবেনা। আমি যে মুক্তিযোদ্ধা এই কথাটিও কেউ বলবেনা। এই কথা বলেই হাউ-মাউ করে কেঁদে উঠেন তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, নিজের জীবনবাজী রেখে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করলেও স্বাধীনতার অর্ধশত বছর ধরে বুকে মুক্তিযোদ্ধার সনদ বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন নরেশ চন্দ্র রায়। অনেকের কাছে তিনি একাধিকবার ধর্ণা দিয়েছেন। কিন্তু কোন সুফল পাননি। জীবন সায়াহ্নে এসে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে এখন এক প্রকার শর্য্যাশায়ী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র রায় চিকিৎস্যা অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। পরিবারের সদস্যদের দাবী, নরেশের জীবনের প্রদীপ নিভে যাবার আগেই অন্তত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নামটি অন্তর্ভুক্ত করা হোক।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র রায়ের প্রতিবেশীরা জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও অদ্যবধী তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তভুক্ত হয়নি। কি কারনে এবং কেন নরেশ চন্দ্র রায়ের তালিকায় নাম নেই? এমন প্রশ্ন তাদের। তারা জানান,বীরমুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র রায় হতদরিদ্র হওয়ায় অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। পরিবার নিয়ে এক প্রকার অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিরল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ড রহমান আলী বলেন, বিরল উপজেলা থেকে যেসব মুক্তিযোদ্ধার নাম পাঠানো হয়েছিলো, সেখানে নরেশ চন্দ্র রায়ের নামও ছিলো। কিন্তু কি কারণে তাকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি সেটা আমি বলতে পারছিনা। তবে এমন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকায় থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।