পঞ্চগড়\ পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের খগেন্দ্র নাথ বর্মনের ছেলে সুরেন্দ্র নাথ বর্মন (৬৫)। মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দুই মেয়েসহ ছয় স্বজনকে সাথে নিয়ে নৌকায় করতোয়া নদী পার হচ্ছিলেন সুরেন্দ্র নাথ বর্মন। নৌকায় উঠে সবাই ছিলেন কাছাকাছি। মাঝ নদীতে নৌকা তলিয়ে যাওয়ার পরই কোনমতে সাঁতরে তীরে উঠেন বিনয় চন্দ্র বর্মন নামের এক স্বজন। দূর্ঘটনার পর একে একে নিখোঁজ পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার হলেও ভয়াবহ নৌ ট্রাজেডির ১৬ দিনেও খোঁজ মেলেনি সুরেন্দ্র নাথের। স্বজনদের দাহ-শ্রাদ্ধ শেষ হলেও স্বামীর জন্যে অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছেনা শান্তি রানীর। মৃত্যুকে মানতে না পেরে হাতের শাখা আর কপালের সিদুর এখনো মুছতে পারেননি তিনি। এখনও শোকাচ্ছন্ন গোটা পরিবার।
ঘটনার দিন স্ত্রী রুপালী রানী ও ৩ বছরের শিশু দীপুকে নিয়ে নদী পার হচ্ছিলেন দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙ্গা ইউনিয়নের হাতিডুবা ছত্রশিকার পুর গ্রামের ভ‚পেন্দ্র নাথ বর্মন ওরফে পানিয়া (৪২)। নৌকা ডুবির পর শিশু দীপু উদ্ধার হলেও নিখোঁজ থাকেন ভ‚পেন-রুপালী দম্পতি। দূর্ঘটনার পরদিন স্ত্রী রুপালীর মরদেহ উদ্ধার হলেও এখনও নিখোঁজ স্বামী ভ‚পেন ওরফে পানিয়া। বৃদ্ধা দাদির কোলে এখন ঠাঁই হয়েছে ভয়াবহ দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া শিশু দীপুর। পানিয়ার বড় ছেলে দীপন এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। নিখোঁজ পিতার শোক সামলিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে দীপন।
দুই পরিবারের স্বজনদের মতো শোকের সাথে অপেক্ষার পালা চলছে পঞ্চগড় সদর উপজেলার কামাত কাজলদিঘী ইউয়িনের ঘাটিয়ার পাড়া গ্রামের আলেশ্বরীর পরিবারে। দূর্ঘটনার দিন দুই মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ির লোকজনের সঙ্গে নদী পার হচ্ছিলেন আলেশ্বরী রাণী। ২ বছরের জ্যোতি রানীকে নিজের কাছে রেখে বড় মেয়ে ৪ বছরের জয়া রানীকে দিয়েছিলেন নানীর কোলে। মাঝ নদীতে নৌকা ডুবে গেলে মা ও নানীর কোল থেকে জ্যোতি ও জয়া পানিতে পড়ে যায়। উদ্ধারকারীদের মাধ্যমে আলেশ্বরী পাড়ে উঠতে পারলেও বাকিরা হারিয়ে যায়। পরে জ্যোতি সহ বাকিদের মরদেহ উদ্ধার হলেও জয়া এখনো নিখোঁজ।
এরই মধ্যে কেটে গেছে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। কিন্তু পূজার কোন আনন্দ ছিল না এই তিন পরিবারে। যদিও তারা নিশ্চিত হয়েছে নিখোঁজদের মরদেহ আর ফিরে পাওয়ার আশা নেই। তারপরও প্রতিদিন তারা ঘুরে ফিরছে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে। এই আশায় যে ভগবানের কৃপায় যদি গলে যাওয়া মৃতদেহটি উদ্ধার হয়। মনকে প্রবোধ দিতে পারবেন নিজে মরদেহটি সৎকার করতে পেরেছেন।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার মাডেয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে বোদেশ্বরী মন্দিরগামী প্রায় দেড় শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। মর্মস্পর্শী এই ঘটনায় এ পর্যন্ত ৬৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ডুবুরি দলসহ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের অন্যান্যরা চলে গেলেও সীমিত আকারে নিখোঁজ ৩ জনের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে বোদা ফায়ার সার্ভিসের ছোট একটি দল। উর্দ্ধতন মহলের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলবে বলে জানালেন পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ সহকারী পরিচালক শেখ মাহাবুবুল ইসলাম।