চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: তিন বার খাওয়া জুটতো না, ভালো পোশাক কল্পনাও করেনি সে। তার বাড়ি থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে পাঁয়ে হেটে যাতায়াত করতো। মাঝে মাঝে বন্ধুদের সাইকেলে চেপে যাতায়াত করতো। তার মা বেলি বেগম মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা আয় করতো, তা দিয়ে তাদের সংসার চলতো। এছাড়াও তার মা মরহুম আকতার চেয়ারম্যান এর ভাটায় ইট শুকানোর কাজ করতো। স্কুল বন্ধ থাকলে সাইফুল নিজেও ভাটায় কাজ করতো। মাঝেমাঝে দিনমুজুরের কাজ করতো। অবকাশ সময়ে অন্য ছেলেদের মতো সময় অতিবাহিত না করে তার মায়ের সাথে ইট ভাটায় কাজ করতো। এত কষ্টের মাঝেও সে তার লেখাপড়া চালিয়ে যেত। তার লেখাপড়া করার মত আলাদা একটা ঘর বা পরিবেশ তো দুরের কথা, মাথা গুজার মতো ভালো কোন আশ্রয় ছিলো না। তাদের আর্থিক অবস্থা অতীব শোচনীয় থাকায়, তারা কোন মতে জরাজীর্ণ একটি ঘরে রাত কাটাতো। ফতেজংপুর ইউনিয়নের মরহুম আকতার চেয়ারম্যান এর ইট ভাটা বন্ধ হয়ে গেলে ওই ইটভাটার ব্যবহার করা অফিসটি সে তার পড়ার কক্ষ বানিয়ে লেখাপড়া করত। স্কুল জীবনে তার মায়ের হাতের সেলাই করা পুরাতন শার্ট প্যান্ট পড়ে স্কুলে যেত। এভাবেই দারিদ্রতাকে জয় করে অদম্য মনোবল নিয়ে সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ফতেজংপুর কলেজের পূর্বপাশে মরহুম আকতার চেয়ারম্যান এর ইটভাটার সন্নিকটে রাজাপাড়ার সলেমান হোসেনের ছেলে সাইফুল ইসলাম। সে বর্তমানে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ এ গনিতের প্রভাষক ও ইন্সটিটিউট অফ ন্যাচারাল সাইন্স ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে খন্ডকালীণ প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছে। এখন সে একটা ভাল সরকারি চাকুরীর জন্য নিজেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে। এ মুহুর্তে তার একটা স্থায়ী চাকুরী খুব প্রয়োজন।
জানা গেছে, ২০১২ সালে হাশিমপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান শাখায় এসএসসিতে জিপিএ-৫, ২০১৪ সালে নীলফামারি সরকারি কলেজ থেকে বিজ্ঞান শাখায় এইচএসসি তে জিপিএ-৪.৮০ পেয়ে কৃতিত্বের সাথে পাশ করে। এরপর কোন প্রকার কোচিং ছাড়াই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে টিউশনি করে পড়ার খরচ চালাতো। তিনি গণিত বিষয়ে ২০১৮ সালে সম্মান ও ২০১৯ (২০২১) সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে।
ফতেজংপুর ইউপি চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ লুনার জানান, সাইফুলের পারিবারিক অবস্থা অতীব শোচনীয়। সে অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিল। তার মা একজন আদর্শ নারী। তার অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।
হাশিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ময়েনউদ্দিন জানান, ওই ছাত্রটি খুব কষ্টে লেখাপড়া করেছে। অত্যন্ত মেধাবী হওয়ায় বিদ্যালয় হতে কিছু সুবিধা দেয়া হত। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।