পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের (কাদিয়ানী) ওপর হামলা পরিকল্পিত দাবি করে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, তৌহিদী জনতার ব্যানারে বিএনপি জামাত যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা একাত্তারের নৃশংসশতাকেও হার মানায়। বিএনপি জামাত নানা নামে বেনামে গুপ্ত হামলা করে মানুষের মনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। একটি গোষ্ঠী সব সময় ধর্মকে ব্যবহার করে আসছে। তারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা ফৌজদারী অপরাধ ঘটাচ্ছে। তিনি গতকাল সোমবার সকালে আহমদিয়া স¤প্রদায়ের মানুষজনকে খাদ্য ও মানবিক সহায়তাদান এবং আগুন ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রী আশ্বাষ দেন সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে।
মন্ত্রী আরো বলেন, হামলাকারীরা প‚র্ব পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছে। তাদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের নিরাপত্তা দেয়ার দ্বায়িত্ব সরকারের। তবে এত বড় ঘটনা ঘটনার আগে আইনশৃংখলা বাহিনী কেন কোন তথ্য পেলো না। এখানে তাদের কোন গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির এই দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে একটি মহল রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তাদের এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে সকলকে সজাগ থাকতে হবে। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকার জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার উন্নয়ন করে যাচ্ছে। সব ধর্মের মানুষ সমভাবে উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে। প্রতিটি ধর্মীয় স¤প্রদায়ের কল্যাণে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি সুদঢ় হচ্ছে। পরে মন্ত্রী পুড়ে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৯টি পরিবারের মধ্যে প্রত্যেকটি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল, ১টি করে শাড়ি ও লুঙ্গি এবং কম্বল বিতরণ করেন। পরে হামলায় পুড়ে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শনে যান রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
এসময় রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার সাবিরুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল আলিম মাহমুদ, পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক জহুরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, আহমদিয়া মুসলিম জামাতের বহিঃসম্পর্ক, গণসংযোগ ও প্রেস বিভাগের প্রধান আহমদ তবশির চৌধুরীসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে বোদা উপজেলার বেংহারী ইউনিয়নের ফুলতলা বাজার এলাকায় হামলা, অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্থ বাড়ি ঘর পরিদর্শন করতে গেলে মন্ত্রীর গাড়ির সামনে এসে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানান ক্ষতিগ্রস্থরা।
সহিংসতার ঘটনায় ৬ মামলায় মোট আসামী ৮২০০ \ মোট গ্রেফতার ৮৫
পঞ্চগড়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের জলসাকে কেন্দ্র করে সহিসংতার ঘটনায় পঞ্চগড় সদর থানায় রোববার আরও ৩টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে সহিংসতার ঘটনায় মামলায় সংখ্যা দাড়াল ৬’এ। এসব মামলার মধ্যে পুলিশ বাদী হয়েছে ৪টিতে, র্যাব ১টিতে এবং আহমদিয়া সম্প্রদায় ১তে। এসব মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামী করা হয়েছে ৮ হাজার ২শ জনকে। আগের ২৩ জনের সাথে গতকাল সোমবার নতুন করে আরও ৬২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী। গতকাল সোমবার সকালে জেলা পুলিশের তথ্য বিবরণী থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতারের সংখ্যা দাড়াল ৮৫ জনে।
পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এসএম সিরাজুল হুদা বলেন, সৃষ্ট ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৮৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন অভিযোগে ছয়টি মামলা হয়েছে। আরও মামলা প্রক্রিয়াধীন। এই ঘটনায় কমবেশি ২০টির মত মামলা হবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে ঘটনায় জড়িত প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।