মু. রিয়াজুল ইসলাম লিটন দিনাজপুর:
দিনাজপুরে ৯ দিন ব্যাপি পুরোহিত প্রশিক্ষনের সমাপনী ও সনদ বিতরনী অনুষ্ঠান আজ ২৫ মার্চ দুপুরে শহরের বালুবাড়ি এলাকায় দিনাজপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মীয় ও আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধি করণ কার্যক্রম (২য় পর্যায়) এর আওতায় পুরোহিতদের ৯দিন ব্যাপী হিন্দু আইন ও পূজা পদ্ধতি, ভুমি আইন আইসিটি ও ডিজিটাল বাংলাদে এবং খাদ্য পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক প্রশিক্ষন কর্মসূচির আওতায় এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জুনিয়র কনসালটেন্ট (ট্রেনিং-১) জনাব সিধেন চন্দ্র সিং এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন, প্রফেসর শিখা চক্রবর্তী, প্রকল্প পরিচালক ধর্মীয় ও অর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে পুরোহিত ও সেবাইতদের দক্ষতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প (২য় পর্যায়, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট, ধর্ম মন্ত্রণালয়।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, পুরোহিত ও সেবায়েতদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে ধর্ম মন্ত্রনালয় যে আয়োজনটি করেছে, তা প্রশংসনীয়। আজ আপনারা এই প্রশিক্ষণ থেকে যে লব্ধ জ্ঞান অর্জন করেছেন সেটা আপনারা আপনাদের পারিবারিক, সামাজিক, প্রাতিষ্ঠানিক, এবং বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে পূরোহিতদের উত্তরোত্তর দক্ষতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবেন । আর এটা বৃদ্ধি হলে দেশের সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। যশমানদের সঠিক নিয়ম কানুন মেনেই পূজা অর্চনা শেখানোর কথা বলেন। তিনি মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের উদাহরণ টেনে বলেন, মুসলিম ধর্মাবলম্বীরা একই সময়ে একই দিনে ঈদ রোজা, নামাজ, কোরবানি সহ অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলো করে থাকে। আমাদের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরকেও একই নিয়ম ও পদ্ধতি মেনে অনুসরন করে পুজা সহ অন্যান্য অনুষ্ঠানগুলো করতে হবে। সারাদেশের সকল পুরোহিতদের এক সংগে ধরে এনে বলা বা করা সম্ভব নয়। যে কারনে দেশের ৬৪ টি জেলায় আমরা ২৫ জন করে পুরোহিতদের নিয়ে ট্রেনিং করছি এবং আপনাদের মাধ্যমে যারা এই প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন নাই তাদের মধ্যেও এই বিষয়টি ছড়িয়ে দেয়ার অনুরোধ করছি। তিনি আরো বলেন, আপনারা যারা প্রশিক্ষণ গ্রহন করছেন তা পরিবারে, প্রতিষ্ঠানে, মন্দিরে যারা যশমন বাড়িতে যান তাদের অনেক ভক্ত আছে সেখানে পুরোহিত দর্পণ বইটি দেখে প্রত্যেকটি পূজা অর্চনা অনুষ্ঠান সম্পূর্ন করার কথা বলেন। তাহলে প্রত্যেকটি পূজা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান একই নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে করে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তির কথা তুলে ধরে বলেন আমরা একেক জন একেক নিয়ম মানার কারনে আমাদের মধ্যে প্রায়ই মারামারি, ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। এ কারণে সব জায়গায় একই নিয়মে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান চালু করার কথা বলেন। আগত পূরোহিতদের উদ্দেশ্যে করে তিনি বলেন, আপনাদের দ্বারা সব জায়গায় একই নিয়ম চালু করা সম্ভব না হলে আমাদের কিছুই করার নেই। প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজটা সহজ ছিল না মনে করে তিনি বলেন, এটার জন্য আমরা সবাই পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আগে এসব প্রশিক্ষনের কোন ব্যবস্থা ছিল না। আমরা এটা করেছি। আর এটা সম্ভব হয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসার পর। পরবর্তীতে এই প্রশিক্ষণ আর চলবে কি চলবে না তা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনাদের উপর। যদি এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ভালোভাবে চলে এবং হিন্দু সমাজের উপকারে আসে তাহলে এটা আরো দীর্ঘায়িত হবে। তিনি সঠিক নিয়ম মেনে সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানে একই নিয়ম মেনে চলার জন্য অনুরোধ করে বলেন আমরা চাই এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনাদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাক এবং এই দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে হিন্দু ধর্ম চর্চার প্রসার ঘটুক। তিনি ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষাথীদের এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জুনিয়র কনসালটেন্ট (ট্রেনিং-১) সিধেন চন্দ্র সিং প্রশিক্ষাথীদের প্রশিক্ষত তিনটি বিষয়ের উপর আলাদা আলাদা সনদ, সন্মানী হিসেবে নগদ ৭১২৫ টাকা, প্রশিক্ষণ ব্যাগ, পুরোহিত দর্পণ বই, প্যাড ও অন্যান্য সামগ্রী তুলে দেন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, দিনাজপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের জুনিয়র কনসালটেন্ট (ট্রেনিং), শশাংক কুমার দাস।
এর আগে গত ১৬ মার্চ মাননীয় সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন।