চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: বিরল প্রজাতির ও বিলুপ্ত প্রায় একটি মদনটাক পাখি অসুস্থ অবস্থায় দিনাজপুরের খানসামার চাষকৃত জমি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
মদনটাক আজ বিলুপ্তির পথে। অথচ মদনটাক পাখি পরিবেশের জন্য উপকারী একটি পাখি খাদ্যাভাব ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে এ পাখি এ অঞ্চলে এখন তেমন দেখা যায়না।
উদ্ধারকৃত বিলুপ্তপ্রায় মদনটাক পাখিটি চিকিৎসাসেবা শেষে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান খানসামা উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা হুমাযুন কবির।
গত মঙ্গলবার দিবাগত সন্ধ্যায় চাষকৃত জমি থেকে খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউপির গুলিয়ারা গ্রামের শিবু মাস্টারপাড়ায় স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় পাখিটিকে উদ্ধার করা হয়। এসময় পাখিটি অসুস্থ ছিল।
উত্তম কুমার,কাজল রায়সহ স্থানীয়রা বলেন, পাখিটির পা ও ঠোঁট অনেক লম্বা। পিঠের ওপর ধূসর কালো রং ও সাদা বর্ণের শরীর। পাখিটি শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় ঠিকমতো উড়তে পারছে না। পাখিটির মাথায় পালক না থাকায় ধারণা করা হচ্ছে এটি বিরল প্রজাতির মদন টাকপাখি। পাখিটি প্রাপ্ত বয়স্ক। এ প্রজাতির প্রাপ্ত বয়স্ক পাখির মাথায় সাধারণত পালক থাকে না। গভীর অরণ্য, সুন্দরবনসহ হাওর অঞ্চলে এ প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায়। আমাদের এলাকায় এ পাখি দেখা যায় না। বিরল প্রজাতির এ পাখিটি উদ্ধার হওয়ার ঘটনা এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পাখিটিকে দেখতে মানুষ ভিড় করেন।
খানসামা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হুমাযুন কবির এর সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, উদ্ধাকৃত পাখিটি মদনটাক। এটি সাধারণত বাংলাদেশে বিলুপ্তির পথে। খাদ্যের খোঁজে তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে চলে। খাদ্যের খোজে ছুটতে ছুটতে এক সময় দুর্বল হয়ে লোকালয়ে এসে পড়ে।বিরল প্রজাতির মদন টাকপাখির সংবাদ পাওযা মাত্র সেখানে একজন কর্মকর্তাকে পাঠিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে। পাখিটি অসুস্থ। তার চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষে পাখিটিকে বন বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
খানসামা উপজেলা বন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) এস এম মঞ্জুরুল কাদের জানান, বিষয়টি অবগত আছি। চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে পাখিটিকে।
উল্লেখ্য, দিনাজপুর অঞ্চলে মদনটাক পাখি এখন আর দেখা যায় না। এদের অস্থিত্ব আজ বিলুপ্তির পথে।এটি জলচর পাখি হিসেবেও পরিচিত। প্রাপ্তবয়স্ক মদনটাকের পিঠ উজ্জ্বল কালো। শরীর সাদা বর্ণের। ডানার গোড়ায় কালো রং থাকে। পালকহীন মুখের চামড়া ও ঘাড় লালচে। গলা হলদে বা লালচে। চোখ সাদা কিংবা ধূসর। পা লম্বা। পায়ের পাতা, নখর ও পা সবুজে ধূসর থেকে কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ে বিক্ষিপ্ত ঘন পালক থাকে। মদনটাক পানির ধারে, ঘাসযুক্ত এলাকা অথবা নরম কাদায় খাবার খুঁজে খায়। প্রধান খাদ্য মাছ। এছাড়া ব্যাঙ, সরীসৃপ, কাঁকড়া ও বিভিন্ন জলজ প্রাণী খায়। এরা কদাচিৎ গলিত পঁচা মাংসও খেয়ে থাকে। কখনো একাকী, কখনো জোড়ায় জোড়ায় আবার কখনো দলবদ্ধভাবে বিচরণ করে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে উঁচু গাছের মগডালে ডালপালা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। স্ত্রী জাতীয় মদনটাক তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম দেয়। ২৮ থেকে ৩০দিন পরই ডিম থেকে বাচ্চা হয়।