চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: প্রতিবছর বর্ষাকালে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা নদী ভাঙনের আতঙ্কে থাকেন। কখন যে নদী ভাঙন দেখা দেয় সেই ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান আত্রাই নদীর পাড়ের মানুষ। এরই মধ্যে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার ভাবকি ইউনিয়নের চাকিনীয়া, খামারপাড়া ইউনিয়নের মালিজালের ঘাট ও জোয়ার গ্রামের অনেক স্থানে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। এতে নদী গর্ভে ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যাওয়ার আতঙ্কে রয়েছে আত্রাই নদী পাড়ের মানুষ। বর্ষায় নদী ভাঙনে ইতিমধ্যেই অত্রাঞ্চলের অন্তত ২৫০ একর আবাদি কৃষি জমি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মধ্যে রয়েছে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবারের মানুষ। নদী ভাঙনের কারণে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্কের ছাপ দেখা দিয়েছে।
সরজমিনে দেখা যায়, ভাবকি ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণে চাকিনীয়া, খামারপাড়া ইউনিয়নের জোয়ার ও মালিজালের ঘাট দাসপাড়ায় আত্রাই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। স্থানীয় মানুষ জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল কৃষি জমি হারিয়ে দিশেহারা ও নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীর পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র সড়ক ভাঙনের মুখে। এতে এসব এলাকায় বসবাসরত লোকজন চরম দুশ্চিন্তায় দিন অতিবাহিত করছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত তিন বছর পূর্বে বর্ষাকালে হঠাৎ নদী গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আবাদি জমির ওপর দিয়ে স্রোত প্রবাহিত হয়। এতে অন্তত ২৫০ একর আবাদী জমি নদীতে পরিণত হয়। এরপর গতবছরের বর্ষায় প্রায় ১০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ বছর নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে আমাদের বাড়ির নিকট এসে পৌঁছেছে। এমনকি নদীর পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র রাস্তা যেকোন সময় ভেঙে যেতে পারে। বাড়িঘর নিয়ে চিন্তার মধ্যে রয়েছি আমরা।
আত্রাই নদী পাড়ের বাসিন্দা আব্দুল গনি বলেন, আমার ৩ বিঘা আবাদি জমি ছিল। এ জমি চাষ করেই সংসার চলত। এ বছর নদীতে সেই শেষ সম্বল জমি ও গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে এখন বসত বাড়িঘর নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছি।
নদীর পাড়ের আরেক বাসিন্দা আব্দুস সামাদ মাথায় হাত দিয়ে জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে আমার বাড়ির নিকট চলে এসেছে। এ বছর মনে হয আমার আর বাড়িতে থাকা হবে না। কেমন করে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকবো, সেই চিন্তায আছি।
রশিদ মিয়া দুঃখের সাথে বলেন, আস্তে আস্তে আত্রাই নদী আমাদের খেয়ে ফেলছে। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ চাকিনিয়া গ্রামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন বলেন, আমারও ৫ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। নদী ভাঙন রোধে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পরামর্শে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি।
ভাবকি ইউপি চেযারম্যান রবিউল আলম তুহিন বলেন, বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদী ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। খামারপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুবকর সিদ্দিক চৌধুরী বলেন, আত্রাই নদী ভাঙনে আমরাও চিন্তিত। দ্রুত ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তাজউদ্দীন জানান, নদী ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নদী ভাঙন রোধে ও বাড়িঘর রক্ষার জন্য নদীতে বাঁধ নির্মাণের জন্য লোকজন স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।