মঙ্গলবার , ১ আগস্ট ২০২৩ | ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
আগস্ট ১, ২০২৩ ৩:০৪ অপরাহ্ণ

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি :
দেশের সর্ববৃহৎ চারদেশিয় বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৬৪ কোটি ৭ লক্ষ টাকা আদায় হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় করেছে কাস্টম শুল্ক স্টেশন। গত অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৮ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা। করোনার কারণে বিশ্ব মন্দার পরিস্থিতির মধ্যেও বন্দরটি সচল থাকায় এ অর্থ আদায় সম্ভব হচ্ছে।

কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৫৮ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭ লক্ষ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। অর্থ বছরের চলতি জুন মাসের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৩ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। আদায় হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জুনে আদায় বেশি হয়েছে ১২ কোটি ১৭ লক্ষ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৬৪ কোটি ০৭ লক্ষ টাকা। গত বছরের এই সময়ের তুলনায় বেশী আদায় হয়েছে ২২ কেটি ৪৩ লক্ষ টাকা। ২০২১-২২ অর্থ বছরের জুন মাসে আদায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। আদায় হয় ১৫ কোটি ৭৪ লক্ষ টাকা। বিগত বছরের জুন মাসের তুলনায় বেশি আদায় হয়েছে ১৩ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা।

২০২২-২৩ অর্থ বছরে জুন মাসে আদায় করা হয়েছে ১৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরে জুনে আদায় হয়েছিল ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। যা বিগত জুনের তুলনায় ১৩ কোটি ৩২ লাখ আদায় হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আদায় হয় ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। যা ২০২১-২২ অর্থ বছরে আদায় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। গত অর্থ বছরের তুলনায় ২২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়।

২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭০ কোটি ৫৭ লক্ষ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪১ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আদায়ের পার্থক্য ২৮ কোটি ৯২ লক্ষ টাকা কম আদায় হয়েছে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি করোনায় বৈশ্বিক মন্দা, ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, বন্দর অভ্যন্তরে প্রয়োজন অনুযায়ী অবকাঠামো গড়ে না ওঠা ও বিভিন্ন সময় ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে পণ্য আমদানি কমে গেলেও বন্দরটিতে উল্লেখযোগ্য হারে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। বছর জুড়ে ডলার সংকট, এলসি জটিলতা ও পণ্য আমদানি ধীরগতি সমস্যা না থাকলে এ বন্দরে দ্বিগুন রাজস্ব আদায় হতো।

বাংলাবান্ধা বন্দরের তথ্যমতে, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ঐতিহাসিক মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সম্ভাবনার বীজ রোপিত হয়। ১৯৯৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর নেপাল এবং ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম। ২০১৬ সালে এই বন্দরের মাধ্যমে ইমিগ্রেশন চালু হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ভুটান থেকে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্থলবন্দরের সঙ্গে চতুর্দেশীয় ব্যবসা কার্যক্রম। বিপুল পরিমাণ রাজস্বও আয় হচ্ছে এই বন্দরের মাধ্যমে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পাথর, মেশিনারিজ, প্লাস্টিক দানা, ভুট্টা, অয়েল কেক (খৈল), আদা, গম, চাল, ফল ইত্যাদি ও নেপাল ও ভুটান থেকে উৎপাদিত ও বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। একই ভাবে দেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, আলু, ব্যাটারি, কোমল পানীয়, গার্মেন্ট সামগ্রী, ক্যাপ, হ্যাঙ্গার, সাবান, বিস্কুট, চানাচুর, জুস, কাচ, পার্টস, কটনব্যাগ, ঔষুধ, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য রপ্তানি হচ্ছে।

বাংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহামারি করোনাকাল থেকেই উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। তাছাড়া এ স্থলবন্দর হতে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব বেশি হওয়ায় খরচ বেশি বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পণ্যের খরচ বেশি পড়ে যায়। এসব সমস্যা নিরসন হলে বন্দরটিতে লক্ষ্যমাত্রার থেকে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব।

বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন জানান, করোনার মধ্যেও বাংলাবান্ধা বন্দরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আয় হয়েছে। করোনার পর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে মন্দা, ডলার সংকটসহ সৃষ্ট কিছু সমস্যা তৈরি হলেও বন্দরটিতে ভালো রাজস্ব আদায় হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। সেটি পূরণ হলে সম্ভাবনাময়ী এ বন্দর দিয়ে শতশত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভৌগলিক অবস্থানগত দিক থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান সরকারের আমলে বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানীতে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিন তিনশোর বেশি বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানীর পণ্যবাহী ট্রাক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে যাতায়াত করছে। এ বন্দরে প্রধান আমদানি হচ্ছে পাথর। ভুটান ও ভারত থেকে এই পাথর আমদানি করা হয়। পাথর ছাড়াও গম, ভুট্টা, গমের ভূসি, প্লাস্টিক দানা, আদা, অয়েল কেক (খৈল), চাল, প্রশাধনী কাজে ব্যবহৃত রমেটেরিয়ালস আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। তাই বন্দরটিতে রাজস্ব আয় হচ্ছে। করোনাকালেও দ্বিগুন রাজস্ব আদায় হয়েছে।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের সহকারি কমিশনার জেএম আলী আহসান জানান, শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দক্ষতা ও বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের হযোগিতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। তারা আরও বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এ স্থলবন্দরটি অপার সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হিসেবে জাতীয় রাজস্ব আয় হবে বলে আশা করছি।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত