চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: অনেকেই প্রতিদিনের রান্নায় আদা ব্যবহার করে থাকেন। আদা খাবারকে করে তোলে সুস্বাদু। আদা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী একটি ঔষধি। জমিতে নয়, এবার বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক। তুলনামূলক কম খরচ ও লাভ বেশি হওয়ায় সাধারণ নিয়মের বাইরে বস্তায় আদা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন অনেকেই। বস্তায় আদা চাষে মাটি নরম থাকে, ঘাস কম হয়, পরিচর্যা সহজ হয়, কীটনাশক কম লাগে, বর্ষা মৌসুমে পানি জমে না, স্যাঁতসেঁতে হয় না, ছত্রাক ও রোগ-বালাই কম হয়, আদা পঁচে না। গাছও হৃষ্টপুষ্ট হয়। বীজ লাগানোর সময় মাটি শোধন করে নিলে আদার কন্দ পঁচা রোগের সম্ভাবনা কমে যায়। ফলে আদার ফলন বেশি হয় ও কৃষক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। গাছতলায়, বাড়ির আঙ্গিনায় ও অন্যান্য ফসলের সাথে সাথী ফসল হিসেবে বস্তায় আদা চাষ করছেন অনেকেই। বস্তায় আদা চাষে স্বল্প খরচ ও লাভ বেশি হওয়ায় পরিবারের খরচ মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন চাষিরা। ফলে দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বস্তায় আদা চাষ করে লাভের মুখ দেখায় বস্তায় আদা চাষির সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এভাবে বস্তায় আদা চাষ করে সফল হয়েছেন উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের বৈকুন্ঠপুর গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুল মান্নান সরকার। তিনি গত বছর পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় আদা চাষ করে লাভবান হয়েছেন। তিনি এ বছর তাঁর গ্রামের পতিত জমি ও গাছতলায় ১ হাজার ২শ’ বস্তায় আদা চাষ করেছেন। বস্তায় আদা চাষে বস্তা প্রতি সার ও মাটি ভরাট করতে খরচ পড়েছে মাত্র ২০ টাকা। গত বছর পরীক্ষামূলক বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় আদা চাষ করে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা আয় করেছি। এবারও গাছগুলো বেশ হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। তেমন কোন রোগ-বালাইও নেই। গত বছরের চেয়ে এবার বেশি আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন। তিনি আরো জানান, এ জন্য আলাদা কোন জমির প্রয়োজন নেই। যাদের আবাদি জমি নেই তারা ইচ্ছে করলেই বসতবাড়ির আনাচে-কানাচে, বাড়ির আঙ্গিনায় অথবা অন্যান্য পতিত জমিতে বস্তায় আদা চাষ করতে পারেন। এভাবে উপজেলার নশরতপুর, সাতনালা, বাসুদেবপুর, বিন্যাকুড়িসহ বিভিন্ন গ্রামে অনেক শৌখিন চাষি বস্তায় আদা চাষ শুরু করছেন। আরো দেখা গেছে, উপজেলার দক্ষিণ নশরতপুর গ্রামের সফেজ আলী, নিশিকান্ত, মশিউর রহমানসহ আরো অনেকেই বস্তায় আদা চাষ করছেন। যাদের নিজস্ব আবাদি জমি নেই তারা বাড়ির আনাচে-কানাচে ও বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় আদা চাষ করছেন।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মো. খাদেমুল ইসলাম ও সুভাশীষ অধিকারী জানান, আদা প্রাকৃতিক ঔষধি গুণে ভরপুর। আদা লাগানোর ৯-১০ মাসের মধ্যে উত্তোলন করা যায়। একটি বস্তায় ৩০ গ্রাম করে ৩টি আদার বীজ রোপণ করে অন্তত ২ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। পতিত ও গাছের নিচে এমনকি বাঁশতলার নিচে বস্তায় মাটি ভরে আদা চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা বলেন, আদা মসলা জাতীয় ফসল। বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি একটি বিকল্প পদ্ধতি। যেখানে মাটি নেই, কিংবা মাটির সংকট রয়েছে সেখানে এটি কার্যকর। অনেকে এখন বাসা-বাড়ির ছাদেও বস্তায় আদা চাষ করছেন। যাদের চাষাবাদের জমি নেই, তাদের বাড়ির অব্যবহৃত ও পরিত্যক্ত জায়গায় বা বাড়ির আঙ্গিনায় বস্তায় আদা চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। স্বল্প খরচে বস্তা পদ্ধতিতে আদা চাষ করে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আয় ও লাভবান হতে পারবেন চাষিরা। উপজেলায় দিনদিন বস্তায় আদা চাষির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য আদা চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।