পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আমরা অকশন সেন্টার করলাম কিন্তু চা চাষিরা লাভবান হলো না। যারা মাথার ঘাম ঝড়িয়ে চা উৎপাদন করলো তারা উপর্যুক্ত দামে কাঁচা পাতা বিক্রয় করতে পারলো না। তাহলে এই অকশন সেন্টার মূল্যহীন। আমি চা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ পঞ্চগড়ের ডিসিকে বলেছিলাম কেন চা চাষিরা কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ডিসি সাহেব বলল কাঁচা চা পাতা মূল্য নির্ধারত কমিটির নির্ধারিত প্রতি কেজি ১৮ টাকা দর কারখানাগুলো মানে না। তারা ১৩-১৪ টাকার বেশি দরে পাতা কিনছে না। চা চাষিরা যদি পাতার ন্যায্যমূল্য না পায় তাহলে এক সময় চা চাষ বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে অকশন সেন্টারের পাশাপাশি নির্ধারিত মূল্যে কারখানাগুলো পাতা ক্রয় করে এজন্য ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মন্ত্রী গতকাল শনিবার দুপুরে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে পঞ্চগড়ে দেশের তৃতীয় চা নিলাম কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, দেশের মোট চা উৎপাদনের ৬৫ ভাগই উৎপাদিত হয় সিলেট অঞ্চলে। সেখানে চায়ের অকশন মার্কেট করতে সময় লেগেছে একশ বছর। আমরা উত্তরাঞ্চলের মানুষ সৌভাগ্যবান যে, মাত্র ২০ বছরের মাথায় আজ পঞ্চগড়ে চায়ের অকশন সেন্টার উদ্বোধন করতে পারলাম। চা চাষিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, কাঁচা চা পাতার ন্যায্যমূল্য পেতে হলে সঠিকভাবে পাতা চয়ন করতে হবে। বড় আকারের ডালপালাসহ পাতা কারখানায় দিলে চায়ের মান খারাপ হয়ে যায়। অকশনে মার্কেটে চায়ের দাম কম পাওয়া যায়। এ জন্য মেশিন দিয়ে পাতা উত্তোলন করতে হবে। এতে করে সঠিকভাবে চা পাতা চয়ন করা যাবে। তবে একেকটি মেশিনের দাম আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। আমরা মন্ত্রণালয় থেকে চা চাষিদের বিনামূল্যে মেশিন দেব। এসব মেশিনের দেখাদেখি অন্য চা চাষিরাও উদ্বুদ্ধ হবে। তিনি আরও বলেন, শুরুতে অনলাইলে অকশন মার্কেট উদ্বোধন করা হল। অনলাইনে তো আর দীর্ঘদিন মার্কেট চালানো যাবে না। কিছুদিন পর ফিজিক্যালি অকশন মার্কেট করতে হবে। ফিজিক্যালি মার্কেট চালু হলে বায়ারদের থাকা খাওয়ার জন্য তারকা মানের হোটেল করতে হবে। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু করা গেলে বিডার/বায়াররা সকালে ঢাকা থেকে এসে নিলামে অংশ নিয়ে বিকালে আবার ঢাকায় ফিরতে পারবে। আমরা চেষ্টা করব কিভাবে এই বিমানবন্দরটি চালু করা যায়।
‘সমতলে চায়ের ভ‚বন, পঞ্চগড়ে স্বাগতম’ শ্লোগানে স্মল টি গার্ডেন ওনার্স এন্ড টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র আয়োজনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন রেলপথ মন্ত্রী অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, সংসদ সদস্য মজাহারুল হক প্রধান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ, চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. আশরাফুল আলম ও রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলামের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য দেন পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান শেখ, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত স¤্রাট প্রমূখ। স্বাগত বক্তব্য দেন ল টি গার্ডেন ওনার্স এন্ড টি ট্রেডার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ’র সভাপতি আমিরুল হক খোকন।
অনলাইন চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধনী দিনে ১৫ জন বিডারের অংশগ্রহণে সুপ্রিম টি লিমিটেডের উৎপাদিত দুইশ কেজি চা সর্বোচ্চ মূল্য ৫৪৩ টাকা দরে ক্রয় করে তেঁতুলিয়ার ভজনপুরের চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ।