শনিবার , ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিরিরবন্দরে ৫ বছর বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও বেতন তুলছেন প্রধান শিক্ষক

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩ ১:০৫ অপরাহ্ণ

চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর যাবৎ বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়েও নিয়মিত বেতন-ভাতা তুলছেন আসগর আলী নামে এক প্রধান শিক্ষক। ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারির মাধ্যমে শিক্ষক হাজিরা খাতা নিজ বাড়িতে নিয়ে গিয়ে স্বাক্ষর করেন। এ ঘটনাটি উপজেলার রাজাপুর বুড়িহাট দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে।
জানা গেছে, উপজেলার রাজাপুর বুড়িহাট দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়টি বিগত ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় এবং ২০০০ সালে এমপিওভূক্ত হয়। ওই বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০ জন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন আসগর আলী। এ বিদ্যালয়ের সভাপতি আহসান হাবিব হচ্ছেন প্রধান শিক্ষকের আপন বড়ভাই এবং সহকারি প্রধান শিক্ষক মামুনুর রশিদ হচ্ছেন তার আপন ভাতিজা। বিগত ২০১৮ সালে বিদ্যালয়ের পাশের দূর্গাপূজা মন্দির কমিটির সাথে ওই প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। বিরোধ সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তিনি আর বিদ্যালয়ে আসেননি। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষগুলো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। বিদ্যালয়ের নেই কোনো সাইনবোর্ডও। বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণিতে গিয়ে শিক্ষকের দেখা মিলেনি। শ্রেণিকক্ষে বসে গল্প করছে ১০-১২ জন শিক্ষার্থী। এসময় তাদের ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে তারা তা বলতে পারেনি। তারা আরও জানায়, তাদের রোল নম্বর দেয়া হয়নি। তাদের হাজিরাও নেয়া হয় না। এসব শিক্ষার্থীদের নিকট প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, হেড স্যারকে কোনোদিন স্কুলে দেখি নাই। তবে স্যারকে আমাদের বাড়ির ওইদিকে নিয়মিত দেখতে পাই।
ওই বিদ্যালয়ের ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্রী জুঁই আক্তারের নিকট তার ক্লাস রোল জানতে চাওয়া হলে সে তা বলতে পারেনি। সে জানায়, আমাদের ক্লাস রোল দেয়া হয়নি। স্কুলে আমাদের হাজিরা করা হয় না। সে আরও জানায়, আমার বাড়ির কাছেই হেড স্যারের বাড়ি। কিন্তু হেড স্যারকে কোনোদিন স্কুলে দেখিনি। শুধু জানি আসগর আলী স্যার আমাদের স্কুলের হেড স্যার।
একই শ্রেণির শিক্ষার্থী শির্মল সরেন জানায়, হেড স্যারকে আমরা কখনো স্কুলে আসতে দেখিনি। হেড স্যারকে বাইরে দেখি কিন্তু তিনি স্কুলে আসেন না। কী কারণে তিনি স্কুলে আসেন না, তা আমরা জানি না।
এ সময় অফিস কক্ষে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে দেখা করতে চাইলে জনৈক সহকারি শিক্ষক জানান, প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে আসেননি। তাঁর বিদ্যালয়ে আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। প্রধান শিক্ষকের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে হাজিরা খাতা নেই বলে শিক্ষকরা জানান।
বিদ্যালয়ের দপ্তরি মহেশ্বর রায় জানান, হেড স্যার দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে আসেন না। কী কারণে তিনি বিদ্যালয়ে আসেন না তা আমি বলতে পারবো না।
বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক (হিন্দুধর্মীয়) শচীন রায় বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বেশ কয়েক বছর যাবৎ বিদ্যালয়ে আসেন না। কারণ হিসেবে তিনি জানান, আমাদের বিদ্যালয়ের পাশে স্থানীয় দূর্গাপূজার মন্দির কমিটির সাথে প্রধান শিক্ষকের ব্যক্তিগত জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মামলা-মোকদ্দমাও হয়। এরপর থেকে তিনি আর স্কুলে আসেন না।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সহকারি শিক্ষক জানান, মামলার বিষয়টিকে সামনে রেখে উনি বিদ্যালয়ে আসেন না। কারণ বিদ্যালয়ের সভাপতি তার আপন বড়ভাই এবং সহকারি প্রধান শিক্ষক তার ভাতিজা। উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকের সাথে তার সু-সম্পর্ক থাকায় তিনি দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে না আসলেও তার বিরুদ্ধে কেউ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।
রাজাপুর বুড়িহাট দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসগর আলী বলেন, বিদ্যালয়ের পাশে আমার ব্যক্তিগত জমি নিয়ে কয়েক বছর আগে দূর্গাপূজা মন্দির কমিটির সাথে বিবাদ হলে মামলা হয়। সে সময় তারা আমার বিরুদ্ধে মূর্তি ভাঙার মামলা দেয়। বিদ্যালয়ের পাশেই মন্দির হওয়ায় তারা আমাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে থাকে। বিদ্যালয়ে আসলে তারা আমার বিরুদ্ধে আরও মূর্তি ভাঙার মামলা দেবে। আমি বিদ্যালয়ে না গেলেও বিদ্যালয়ের সকল কাজ আমাকেই করতে হয়।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি প্রধান শিক্ষকের আপন বড়ভাই আহসান হাবিবের সেলফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তাঁর বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
অমরপুর ইউপি চেয়ারম্যান কাজি ইকবাল হোসেন জানান, রাজাপুর বুড়িহাট দ্বি-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিভাবক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমাকে অবগত করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয়ে আসেন না। তিনি নিয়মিত বেতন তুলেন। বিষয়টি আমি উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করেছি। তিনি প্রধান শিক্ষকের বিদ্যালয়ে না আসার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমার অফিসে প্রয়োজনীয় কাজে নিয়মিত আসেন এবং দেখা হয়। উনি ২০১৮ সাল থেকে বিদ্যালয় করেন না সে ব্যাপারে কেউ আমাকে লিখিত অভিযোগ করেননি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় বিষয়টি আপনাকে অবহিত করেছিলেন তখন কী আপনি কোন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ফজলে এলাহি বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি নিয়ে তখন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। স্থানীয়ভাবে এসব মতবিরোধ থাকতে পারে তাই সেটা তদন্ত করে দেখা হয়নি। এখন বিষয়টির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

বীরগঞ্জে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই ও লিফলেট সহ আটক ১

আটোয়ারীতে বিল নার্সারি কার্যক্রমের উপকরণ বিতরণ

পৌরসভা নির্বাচন মেয়র পদে ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ জন, রানীশংকৈলে ১২জনের মনোনয়ন পত্র দাখিল

পীরগঞ্জ থানায় ঐতিহাসিক ৭মার্চ দিবস উদযাপন

ওয়ার্ল্ড ভিশনের উপহার হিসেবে ছাতা পেলেন বীরগঞ্জের শিশু শিক্ষার্থীরা

দিনাজপুরে সংবাদ সম্মেলনে ইউপি সদস্য মো: পাভেল ইমরান মিথ্যা সংবাদ তৈরীতে ভুল তথ্যপরিবেশনের সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচার দাবী

বীরগঞ্জের আদিবাসী মিলন মেলায় জীবন সঙ্গীর খোঁজে তরুন-তরুনীরা

সাংবাদিক শীষ নবী মন্ডলের মাতা হাজি মাহমুদা খাতুনের দাফন সম্পন্ন

বীরগঞ্জে গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

দেশের ইতিহাসে প্রথম টিকা নিচ্ছেন নার্স রুনু