বোদা (পঞ্চগড়) প্রতিনিধিঃ স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চগড়ের বোদায় সব থেকে বড় ভয়াবহ দুর্ঘটনা ছিল গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহালয়ার আনন্দ সেদিন নিমিষেই শোকে পরিণত হয়েছে নৌকাডুবিতে ৭২ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে। বিভীষিকাময় সেই দিনে স্বজন হারানোর বেদনা এখনো বয়ে চলেছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। নৌকাডুবির ঘটনা পুরো দেশকে নাড়া দেয়। এতগুলো মানুষের মৃত্যুতে শোক বিহŸল হয়ে পড়ে সারা দেশের মানুষ। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী নেয়ার কারণে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। তবে প্রশাসনের নজরদারি অভাব, ঘাটে পর্যাপ্ত নৌকা না থাকা আর অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সেদিন এতগুলো মানুষের জীবন কেড়ে নেয়। যারা বেঁচে ফিরেছেন তারা এখনো আঁতকে উঠেন সেদিনের স্মৃতি মনে করে। নৌকাডুবিতে নিহতদের মরদেহ মিলেছিল প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূর অবধি দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলায়। জেলা প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিস টানা ৪ দিন ধরে নৌকা ডুবিতে নিহতের উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেন। প্রথম দিনে ৪৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ দিনে ২২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পঞ্চম হতে ১৮তম দিনে আরো তিন জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। সেই দিনের করতোয়া নদীতে নৌকা ডুবির ঘটনায় সর্বমোট ৭১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হলেও ১ জনের মরদেহ ১ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও খোজে পাওয়া যায়নি। সে উপজেলার সাকোয়া ইউনিয়নের সাকোয়া কলেজপাড়া গ্রামের খগেন্দ্র নাথ বর্মনের ছেলে সুরেন(৬৫)। প্রতিবছর উপজেলার বদেশ^রী মন্দিরে মহালয়া পুজা উৎসবে যোগ দিতে উত্তরের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার আগে মহালয়ার দিন সনাতন ধর্মের হাজার-হাজার পুণ্যার্থী করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট হয়ে বদেশ্বরী মন্দিরে পূজা অর্চনার জন্য যান। সেদিনও পুণ্যার্থীরা সে উদ্দেশ্যেই নৌকায় উঠেন। নৌকাতে প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। কেউ বেঁচে ফিরলেও অনেকে না ফেরার দেশে চলে গেছে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও স্বজন হারানো পরিবারগুলোর কান্না হাহাকার এখনো থামেনি।
উল্লেখ্য যে, এই উপজেলার মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে আউলিয়া ঘাটে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রতিবার আশ্বাস মিললেও সেতু নির্মাণে কোন অগ্রগতির দেখা মেলেনি। সর্বশেষ নৌকা ডুবি ঘটনার পর ৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী (সেতু ডিজাইন) মোহাঃ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের এই ঘাট এলাকা পরিদর্শনে আসেন। এই সময় তারা সেতুর খসড়া লে-আউট যাচাই করেন। এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর রেলমন্ত্রী ও পঞ্চগড়-২ (বোদা-দেবীগঞ্জ) আসনের এমপি এ্যাড়ঃ নূরুল ইসলাম সুজন নৌকাডুবিতে মৃত পরিবারের মাঝে আর্থিক সহায়তার চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে জানিয়েছিলেন ডিসেম্বর বা জানুয়ারির শুরুতেই সেতুর কাজ শুরু হবে। এক বছরে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় এলাকার মানুষরা। পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতর সূত্র জানায়, পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলার বোদা-ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের আউলিয়ার ঘাটে প্রায় এক হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের ওয়াই আকৃতির সেতু নির্মাণের প্রস্তাব ইতো মধ্যে একনেকে পাশ হয়েছে। যার ডিজাইনও চূড়ান্ত হয়েছে। পঞ্চগড়ের স্থানীয় প্রকৌশল দফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মাহমুদ জামান বলেন, টেÐার প্রক্রিয়া ও মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমতি যে কোন সময় হতে পারে।