পঞ্চগড় প্রতিনিধি\ ‘বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এমন একটি সাধারণ বাক্য প্রায় দোকানে ঝুলিয়ে রাখে দোকানিরা। বাকিখোরদের কাছ থেকে মুক্তি পেতে সাধারণত এমন কাজ করে থাকেন দোকানিরা। তবে এমন ম্যাসেজ দেখে বাকিখোরদের থামানো না গেলেও নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুটা অস্বস্থিতে ভোগেন। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার মাঝে দুঃস্থ ও নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বিপন্ন। আয় ব্যয়ের হিসাব মেলাতে অনেকের কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় কিছুটা ধার দেনা করে দোকান থেকে পণ্য না পেলে অভুক্ত থাকতে হয় তাদের। সাধারণ দোকানদাররা বাকীতে পণ্য দিতে না চাইলেও এবার ঠিক উল্টো কাজটি করতে যাচ্ছে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন। গরীব ও দুঃস্থদের বাকীতে পণ্য দিতে এবার তারা আয়োজন করেছে ‘বাকীর হাট’।
শুক্রবার পঞ্চগড় জেলার চেম্বার কনভেনশন হলে বাকীর হাটে পণ্য কেনা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো: রিয়াজ উদ্দিন। এ সময় বিদ্যানন্দের ভাইস চেয়ারম্যান ফারুখ আহমেদ, সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ফরহাদ আহমেদ, পঞ্চগড় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ, সাধারণ সম্পাদক জামিল চৌধুরী ডলারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরই ‘বাকীর হাটে’ দিনব্যাপী ২৫০ পরিবার বাকীতে পণ্য কেনার সুযোগ পায়। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, লবণ, শাকসবজি, মাছ, মুরগী, বাচ্চাদের শিক্ষা উপকরণ, কাপড়সহ প্রায় ২৫টি আইটেম নিয়ে বসেছিল ওই বাকীর হাট। বিদ্যানন্দের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘বাকী চাহিয়া লজ্জা দেবেন না’ এই ¯েøাগানের পরিবর্তে ‘বাকী চাইতে লজ্জা পাবেন না’ এই ¯েøাগানটি তারা প্রমোট করছেন হত দরিদ্র মানুষের জন্য। এই পরিবারগুলোর আজকে টাকা নেই, কিন্তু একদিন তাদের টাকা হবে। সেদিন তারা এই টাকা পরিশোধ করবে। তবে বিদ্যানন্দকে নয়, সমপরিমাণ টাকা পরিশোধ করতে হবে অন্য কোন অভাবীকে। এমন একটি শর্ত দিয়েই ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকার পণ্য দেয়া হচ্ছে। বাজার শেষে প্রতিটি ক্রেতার নাম ও বাকীর পরিমাণ লিখে একটি আঙ্গুলের ছাপ নিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। যা দিয়ে প্রতীকীভাবে এই বাকীর কথা খাতায় লিপিবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। বিদ্যানন্দের সদস্যরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় জরিপের মাধ্যমে অভাবী পরিবার চিহ্নিত করে নির্দিষ্ট কার্ড প্রদান করে। সে কার্ড দেখিয়ে পরিবারগুলো ‘বাকীর হাট’ থেকে কেনাকাটার সুযোগ পায়।
দেশ বিদেশে ভিন্নতর ও অভিনব সব আইডিয়া নিয়ে সেবামূলক কাজ করে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে বিদ্যানন্দ। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে কেউ যখন ভয়ে ঘর থেকে বের হচ্ছেনা তখন জীবনবাজি রেখে করোনা মহামারী মোকাবেলায় সম্মুখসমরে যুদ্ধ করে সাধারণ মানুষের ভালবাসা অর্জন করে নেয় এই প্রতিষ্ঠান। সমাজসেবায় তাদের অসামান্য সব অবদানের জন্য ২০২৩ সালে সরকার তাদের একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়াও ২০২২ সালে সমাজকল্যান মন্ত্রনালয় কতৃক জাতীয় মানবকল্যান পদক ও ২০২১ সালে বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কতৃক “কমনওয়েলথ পয়েন্টস অফ লাইট” পদকে ভূষিত হয় এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।