চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইন থেকে তেল চুরির ঘটনায় থানা পুলিশ ৪ ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ধৃতদের গতকাল শনিবার দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে সোর্পদ করেছে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর শুক্রবার আনুমানিক ভোর ৫টায় চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের চক ইসবপুর গ্রামের ফেরুসাডাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।
পার্বতীপুর রিসিভ টার্মিনাল অফিসার (আর, টি) প্রবীর হীরা জানান, গত শুক্রবার ভোরে ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইনের রাউডার সেন্সরের মাধ্যমে জানতে পারেন ওই পাইপ লাইনের কোথাও পাইপ লিকেজ কিংবা ফুটো হয়েছে। তৎক্ষণাৎ লাইনম্যান জাহাঙ্গীর আলমকে বিষয়টি অবগত করা হলে তিনি পাইপ লাইন চেক করতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের চক ইসবপুর গ্রামের ফেরুসাডাঙ্গা এলাকায় মাটিভেজা ও লাইনে তেলের গন্ধ পান। ঘটনাস্থলে বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইনের রিসিভ টার্মিনাল প্রতিনিধি, থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের প্রতিনিধির সমন্বয়ে ওই স্থানের মাটি খনন করে এবং ১০ ইঞ্চি পাইপ লাইনের মধ্যে ক্লিপ ও চিকন পাইপ লাগিয়ে তেল চুরির চেষ্টা করার দৃশ্য দেখতে পান।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এ কে এম শরিফুল হক, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুলান্ট চাকমা, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বজলুর রশিদসহ বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ পাইপ লাইনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ভারত বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশীপ তেল পাইপলাইনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশনস) প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম জানান, তেল চুরির অপচেষ্টা করা হচ্ছিল। পাইপ লাইনের রাউডার সেন্সরের মাধ্যমে ঘটনাটি জানতে পারা যায়। বর্তমানে ভারত থেকে কারিগরি দল এসেছে। তাঁরা সংস্কারের কাজ করছেন।
থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বজলুর রশীদ জানান, এ ঘটনায় মেঘনা পেট্রোলিয়ামস লিমিটেডের ম্যানেজার (অপারেশনস) প্রবীর হীরা বাদি হয়ে পেনাল কোড-১৮৬০ ও ৩৭৯ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। যার মামলা নং ২৬/৩৭৫, তারিখ: ২৪/১১/২০২৩। ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ চিরিরবন্দর উপজেলার উত্তর ভবানীপুর গ্রামের ডাঙ্গারহাট এলাকার মো. আলাউদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (২৭), পার্বতীপুর উপজেলার সোনাপুকুর গ্রামের মো. মাজুম আলীর ছেলে মো. মানিক শাহ্ (৪৫), নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার শ্বাসকান্দর গ্রামের মৃত তাবিরউদ্দিনের ছেলে মো. নজমুল হক (৬৫) ও একই এলাকার ছলেমান বসুনিয়ার ছেলে মো. আমিনুল ইসলাম (৪৮) কে আটক করেছে। আটককৃতদের গতকাল ২৫ নভেম্বর শনিবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাটি অধিকতর তদন্ত করা হচ্ছে, আরও কেউ জড়িত থাকলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, ভারত থেকে সরাসরি পাইপলাইনে তেল আমদানির জন্য এই পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতের নুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেডের শিলিগুড়ির মার্কেটিং রেল টার্মিনাল থেকে পাইপলাইন শুরু হয়েছে। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে পাইপলাইনটি। এরপর শেষ হয়েছে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) রেলহেড অয়েল ডিপোতে। ১৩১ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পাইপলাইন বাংলাদেশ অংশে ১২৬ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং ভারতীয় অংশে ৫ কিলোমিটার পড়েছে। গত ১৮ মার্চ উভয় দেশের প্রধানমন্ত্রী ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে এই পাইপলাইনের তেল সরবরাহ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।
পার্বতীপুর রিসিভ টার্মিনাল (আরটি) কর্মকর্তা প্রবীর হীরা বলেন, শুক্রবার ভোর পাঁচটায় পাইপলাইনের পার্বতীপুর রাউটারের মাধ্যমে বুঝতে পারি, কোথাও পাইপ ফুটো হয়েছে এবং তেল বের হয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় লাইনম্যান হিসেবে পাঁচজন কর্মরত রয়েছেন। তৎক্ষণাৎ লাইনম্যান জাহাঙ্গীরকে বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বিভিন্ন স্থান ঘুরে চক ইসবপুর এলাকায় তেলের ঘ্রাণ পান। পরে বেলা ১১টায় পার্বতীপুর আরটি প্রতিনিধি, থানা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ওই স্থানের মাটি খোঁড়া হয়। সেখানে ১০ইঞ্চি পাইপলাইনের মধ্যে নতুন সকেট ও চিকন পাইপ লাগানো দেখতে পাই। ওই চিকন পাইপ দিয়ে তেল চুরির চেষ্টা করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে দিনাজপুর জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ বলেন, পাইপলাইনে লিকেজ পাওয়া গেছে জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। লিকেজ আটকানোর জন্য যে ধরনের যন্ত্রপাতি কিংবা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সেটি করা হয়েছে। তবে এটি চুরির চেষ্টা কিংবা চুরি কি না, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পুলিশ তদন্ত করছে।
জানা যায়, শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) ভারতের নুমালীগড রিফাইনারি লিমিটেড সেন্সরের মাধ্যমে বুঝতে পারে বাংলাদেশ সীমান্তে পাইপ লিকেজ হয়েছে। পরে বাংলাদেশের পার্বতীপুর অযলে হেড ডিপোতে জানালে তারা দ্রুত পাইপ চেক করতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা চিরিরবন্দর উপজেলার ফতেজংপুর ইউনিয়নের ফেলুসা ডাঙা এলাকায় দেখতে পান মাটি ভেজা। তখন সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে লাইনম্যানরা মাটি খুঁড়ে দেখতে পান তেলের পাইপ ফুটো করা এবং সেটা ক্লিপ দিয়ে বন্ধ করা।