মহিলা পরিষদ দিনাজপুর শাখার দ্বাদশ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ফওজিয়া মোসলেম
সমাজে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠিত
না হলে টেকসই উন্নয়ন হবে না
নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই নারীর প্রতি সহিংসতা দ‚র করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ডা: ফওজিয়া মোসলেম। এই সমতা প্রতিষ্ঠায় অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন ও নারীকে সম্পত্তির অধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সমাজে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠিত না হলে টেকসই উন্নয়ন কখনো সম্ভব হবে না।
শুক্রবার দিনাজপুর প্রেসক্লাবের এম আব্দুর রহিম মিলনায়তনে নারী জাগরণের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন-সংগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার দ্বাদশ জেলা সম্মেলনে মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ডাঃ ফওজিয়া মোসলেম এ কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ‘নারী আন্দোলন শক্তিশালী হলেও সেই তুলনায় নারীর প্রতি সহিংসতা কমে আসছে না। এর অন্যতম কারণ হলো, নারীকে অধস্তন বলে ভাবা ও মানুষ বলে মনে না করা। এসবের অবসান ঘটিয়ে আমরা নারী-পুরুষের সমতার সমাজ গড়ে তুলতে চাই। নারী সমাজের সমতা প্রতিষ্ঠিত হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার হাত ধরে। নারী-পুরুষের সমতা না হলে টেকসই উন্নয়ন হবে না। সমগ্র জাতিকে এই সমতার পক্ষে দাঁড়াতে হবে। লিঙ্গনির্বিশেষে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই সমতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার পথে কিছু বাধার কথা তুলে ধরে ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সমতার আন্দোলনের পথে বাধাগুলোর মধ্যে আছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা, সম্পত্তির উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে বাধা, নারী-পুরুষের সম্পর্ক ও শ্রমবিভাজনের ক্ষেত্রে বাধা ইত্যাদি। নারী-পুরুষের শ্রমে কোনো বিভাজন থাকা যাবে না, সম্পর্কে সমতা থাকতে হবে। এর জন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন করতে হবে, নারীকে সম্পত্তির অধিকার দিতে হবে। এর মধ্য দিয়েই নারীর প্রতি সহিংসতা দূর হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
দিনাজপুর জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি কানিজ রহমান-এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড-এর চেয়ারম্যান প্রফেসর স:ম: আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, স্বাধীনতা অর্জনের আগে থেকেই নারীর অধিকার বাস্তবায়নে মহিলা পরিষদ কাজ করে আসছে। এর ফলে নারীরা আজ এগিয়ে এসেছে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। এই উন্নয়নে বাংলাদেশের নারী সমাজের ভূমিকা রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরাও সাফল্য অর্জন করছে। এমনকি বর্তমানে দেখা যায় শিক্ষা ক্ষেত্রে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা এগিয়ে থাকছে।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা ল²ী চক্রবর্তী, প্রশিক্ষণ ও গবেষণা সম্পাদক রিনা আহমেদ, জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান সুলতানা বুলবুল, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তারিকুন বেগম লাবুন, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মিলি চৌধুরী, রংপুর জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রুখসানা জামান, রবীন্দ্র সম্মেলন পরিষদের সভাপতি রবিউল আউয়াল খোকা, উদীচী জেলা সংসদের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবুল, নাট্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউর রহমান রেজু, প্রগতিশীল লেখক সংঘের সভাপতি জলিল আহমেদ, জেলা অনাচার প্রতিরোধ কমিটির আহবায়ক মো. সফিকুল ইসলাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সুলতান কামাল উদ্দীন বাচ্চু, পল্লীশ্রী’র ম্যানেজার শামসুন্নাহার, দৈনিক উত্তরবাংলার নির্বাহী সম্পাদক জিনাত রহমান, এডাব এর প্রতিনিধি মোজাফফর হোসেন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ড. মারুফা বেগম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা পলি।
জাতীয় ও সংগঠনের পতাকা উত্তোলন, বেলুন, ফেস্টুন ও পায়রা উড়িয়ে সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার দ্বাদশ জেলা সম্মেলনের উদ্বোধন করেন অতিথিরা। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে দ্বাদশ জেলা সম্মেলন উপলক্ষ্যে প্রেসক্লাব চত্বর থেকে এক র্যালী বের হয়ে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে।