কুয়াশায় ঢাকা ৩য়দিনের মতো দিনাজপুরে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। গতকাল সোমবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দিনাজপুরে রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলমান শৈত্যপ্রবাহে নাকাল দিনাজপুর অঞ্চলের মানুষ। রাতভর বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। দিনব্যাপী কুয়াশার চাদরে ঢাকা চারিপাশ।সেই সাথে বইছে হিমেল হাওয়া। প্রায় সপ্তাহ ধরে সুর্য্যরে দেখা মিলছে না। বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে দূরপাল্লার যানবাহনগুলো। দিনভর ঠান্ডা বাতাসে কাবু হয়ে পড়ছে জনজীবন।
দিনাজপুরে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ আবহাওয়া আরও দুই-তিন দিন থাকতে পারে। দিনাজপুরসহ এ অঞ্চলের মানুষের পাশাপাশি গবাদীপশু-গুলো কনকনে ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় কাহিল হয়ে পড়েছে। ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়েছে গবাদীপশুগুলো।
বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালের তথ্য মতে, প্রতিদিন গড়ে ২৫-৩০ জন ভুক্তভোগী মানুষ তাদের পশুর চিকিৎসা নিতে আসছেন। খামার মালিকদের শুকনো খাবার, গোয়ালে তাপের ব্যবস্থা রাখাসহ পশুর গায়ে চটের বস্তা জড়িয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রাণীসম্পদ অফিস।
এদিকে, কনকনে শীতে বিপর্যস্থ জনজীবন। কুয়াশায় দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। রাস্তাঘাটে কমে গেছে সাধারণ মানুষের চলাচল। শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও বয়স্ক মানুষ।
কাজের সন্ধানে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলা মোড়ে এসেছেন দিনমজুর আব্দুর রহিম। তিনি জানান, শীতের সকালে গত দুই দিন ধরে এখানে বসে থেকে চলে যাচ্ছি, কাজ পাচ্ছি না। কনকনে ঠান্ডায় কাজ না পেয়ে তাই আজকেও ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে। ঠান্ডার কারণে অনেকে কাজও করাতে চায় না।
অটোচালক ফারুক জানান, কনকনে শীতের কারণে মানুষ বেশির ভাগ কাজ বন্ধ রেখেছে। বাড়ীর বাইরে প্রয়োজন ছাড়া বের হয়না তাই ভাড়া পাওয়া যায় না।
চিরিরবন্দরের নশরতপুর গ্রামের রফিকুল ইসলাম জানান, তারা নিজেরাই শীতে কাহিল। এরপরেও গরুগুলোকে রাতে চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। গোয়াল ঘরে আগুন জ্বালিয়ে তাপ দেয়ার পাশাপাশি গোয়াল ঘরের চারদিকে আটকে দেয়া হয়। হিমেল হাওয়ার সাথে ঠান্ডা বেশী হওয়ায় গরুগুলোকে বাইরে আনা যায়নি।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, শনিবার থেকে জেলায় চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। সোমবার দিনাজপুরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৭শতাংশ। আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পুরোপুরি আসছে না। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। আরও দুই-তিন দিন এ ধরনের আবহাওয়া চলমান থাকতে পারে। চলতি সপ্তাহের শেষে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
শহরের ঘাসিপাড়ায় ইজিবাইকচালক সোহেল রানা বলেন, শীতে লোকজন জরুরি কাজ ছাড়া বাহিরই হয় না। ভাড়াই নাই। কামাই তো অর্ধেক কমি গেইছে।
সুইহারী এলাকার ষাটোর্ধ্ব বেলাল হোসেন বলেন, যে শীত পড়ছে আমাদের মতো বৃদ্ধদের জন্য খুব কষ্ট হয়ে গেছে। বাইরে চলাফেরাই করতে পারছি না।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে বেড়েছে ঠান্ডাজনিত রোগবালাই ও ডায়ারিয়ার প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে ভিড় বেড়েছে ঠান্ডায় আক্রান্ত রোগীদের।
দিনাজপুরের সিভিল সার্জন ডা. এএইচএম বোরহানুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, টানা এক সপ্তাহ থেকে সূর্যের দেখা নেই। তীব্র শীতের কারণে সবাইকে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সব সময় গরম খাবার ও গরম পানি খেতে হবে। সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি শাকসবজি খেতে হবে।এসময় সবাইকে খেজুরের কাঁচা রস খাওয়ার ব্যাপারেও সকলকে সতর্ক করেন সিভিল সার্জন।
চিরিরবন্দর
চিরিরবন্দর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে গত কয়েকদিন ধরে মানুষ সূর্যের উষ্ণতা পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় মেঘে ঢাকা আকাশ ও ঘনকুয়াশার জন্য সূর্যের তাপ অনুভূত না হওয়ার পাশাপাশি কনকনে ঠান্ডা বাতাসের কারণে দিনরাত কাঁপছে উপজেলার মানুষ। মানুষের পাশাপাশি ঠান্ডায় কাঁপছে পশুও। চলমান শৈত্যপ্রবাহের কারণে রাতভর বৃষ্টির মতো ঝড়ছে কুয়াশা। দিনব্যাপি কুয়াশার কারণে ঢাকা থাকছে মাঠঘাট ও সড়ক। সেই সাথে হিমেল বাতাসে বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতের তীব্রতা। শীত ও ঠান্ডায় স্বাভাবিক কর্মজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হচ্ছেন না কেউ। গত এক সপ্তাহ ধরে ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাসে জীবনযাত্রা জবুথবু ও স্থবির হয়ে পড়েছে এ জনপদের মানুষের। কর্মহীন হয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেক নিম্ন আয়ের শ্রমজীবি মানুষ। তারা ঠিকমতো কাজে যেতে পারছেন না। তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজের সন্ধানে বের হলেও তারা স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারছেন না। হাড় কাঁপানো শীতে নাজেহাল হয়ে পড়েছে শিশু ও বয়োজ্যেষ্ঠরা। শীতের তীব্রতা থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে তাপ নিচ্ছেন। চায়ের দোকানগুলোর চুলার পাশে লাগছে মানুষের জটলা।
প্রচন্ড শীতের কারণে বোরো বীজতলা ও আলুক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে বোরো বীজতলা। প্রচন্ড শীত ও ঠান্ডার কারণে রিকশাভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা পাচ্ছেন না ভাড়া।
উপজেলার রানীরবন্দর বাসস্ট্যান্ডে রিকশাভ্যান চালক রবিউল ইসলাম ও ইজিবাইক চালক গোলাম মোস্তফা জানান, ‘ঠান্ডা কমছে না। বরং বাড়ছে। হামার গরিব মানুষের যত জ্বালা। জার (ঠান্ডা) সহ্য হয় না। বাড়িত বসিও থাকা যাচ্ছে না। গরিব মানুষ বাড়িত বসি থাকিলে কে খাবার দিবে। বাইর হইছি, যা কামাই (আয়) হচে, গাড়ির জমা দিয়া কিছু থাকে না। দিন চলা কঠিন হয়া (হয়ে) গেইছে। হিমশীতল বাতাস আর ঠান্ডার কারণে কাহো (কেউ) (হামার) আমাদের গাড়িত উঠির (উঠতে) চাছে (চাচ্ছে) না।
এদিকে, ঘনকুয়াশার কারণে সড়ক ও মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। অর্থাভাবে অনেকে শীতবস্ত্র কিনতে পারছেন নট। সরকারি-বেসরকারিভাবে যে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ করা হচ্ছে না প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।