দিনাজপুরে হিমেল হাওয়ায় হাড় কাপানো শীতের দাপটে কাহিল মানুষ। তবে সুর্যের দেখা মিলায় জনমনে স্বস্থি। টানা কয়েকদিন ঘন কুয়াশার পর্দা ভেদ করে সূর্যের দেখা মেলেনি। তবে শুক্রবার দিনাজপুরে দেখা দিয়েছে সূর্য। তাপমাত্রা বেশি না কমলেও সূর্যের আলোয় উষ্ণতার পরশ পেয়ে স্বস্থি পেয়েছেন সাধারণ মানুষ। কর্মজীবীদের কাজে যেতে বেগ পেতে হয়েছে কম। শুক্রবার সকাল ১১টার পর সূর্য দেখায় ঘর থেকে বেরিয়ে কাজে নেমে পড়তে দেখা গেছে অনেককে। হাটবাজার ও গ্রামগুলিতে ফিরেছে কর্মব্যস্থতা। সেই সঙ্গে গৃহিণীরা কাপড় ধোঁয়া ও শুকানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এদিকে, ঠান্ডার সাথে শীতজনিত রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।এতে হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েছে।
আমন চাষের পর এখন চলছে বোরো চাষের প্রস্তুতি। ফসলের মাঠে রয়েছে বিভিন্ন জাতের সবজি ও রবিশস্য। প্রতিদিন এসব ফসলের পরিচর্যা করতে মাঠে কাজ করতে হচ্ছে কৃষি শ্রমিকদের। কৃষিনির্ভর দিনাজপুর জেলায় সাড়ে ৯ লক্ষাধিক কৃষি শ্রমিকের প্রকৃতির বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে ফাঁকা ফসলের মাঠে কাজ করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এতে অনেক ফসলের চাষ পিছিয়ে যাচ্ছে।
কাজের সন্ধানে দিনাজপুর শহরের ষষ্ঠীতলা মোড়ে আসা দিনমজুর অপু রায় জানান, শীতের সকালে গত দুইদিন ধরে এখানে বসে থেকে চলে যাচ্ছি, কাজ পাচ্ছি না। কনকনে ঠান্ডায় কাজ না পেয়ে তাই আজকেও ফিরে যাচ্ছি বাড়িতে। ঠান্ডার কারণে অনেকে কাজও করাতে চায় না।
দিনাজপুর সদরের শঙ্করপুর গ্রামের ফসলের মাঠে গৌতম দাস বলেন, বেজায় (খুবই) জার (শীত), এই জারত কাম করিতে হাত-পাও গেলা থোপসা হই আইসেছে। কি করিমো-কাম না করিলে হামার ভাতও হয়না। আর এই জারত কাম করিতেও বেজায় কষ্ট হচে। খালি হাতে হিমশীতল মাটি নিয়ে কাজ করতে গোটা শরীর থর থর করে কাঁপছিল তার।
জানা যায়, দিনাজপুর প্রশাসনের হিসাব মতে জেলার মোট লোকসংখ্যা ৩৩ লাখ ১৫ হাজার ২৩৪ জন। এদের মধ্যে কৃষি শ্রমিক ২৯ দশমিক ১৯ শতাংশ। এই হিসেব মতে দিনাজপুর জেলায় কৃষি শ্রমিক ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৬জন।বেশিরভাগ শ্রমিকই কাজ না পেয়ে বাড়িতে বসে।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টায় দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৬ ভাগ। বাতাসের গতি ০২ নটস। জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টি পাত হতে পারে।
জেলা প্রশাসন জানায়, শীত নিবারণে দিনাজপুরের ১৩উপজেলায় ইতোমধ্যে ৬২হাজার ৩৮০পিস কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। জেলার চাহিদা অনুযায়ী আরো ৫০হাজার পিস কম্বল এবং শিশুদের গরম কাপড় চেয়ে ১৫জানুয়ারি ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে বিশেষ চাহিদা পাঠানো হয়েছে