রোদের তীব্রতায় বিপাকে পড়েছে দিনাজপুরের মানুষ। জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। পায়ে হেটে চলা ফেরা কঠিন হয়ে পড়েছে। ভ্যাপসা গরমে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। অনেক জায়গায় দেখা যায় ভ্যান-অটো চালকরা গরমে একটু বিশ্রাম নিচ্ছে ছায়ায়। এরপরেও বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় চলছে লোডশেডিং। এ অঞ্চলে তাপমাত্রা ৩৫-৩৭.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করছে। অসহনীয় গরম থেকে একটু স্বস্থি পেতে ভীড় করছে রাস্তার পাশে বিভিন্ন পানীয়, লেবুর শরবত, আখের রস, বেল, তরমুজ, ডাব এ দোকানে।
অপরদিকে এই গরমের কারণে ডায়রিয়া, পেটের পীড়া,জ্বর-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, পানিশূন্যতা রোগীর সংখ্যা বেড়েছে।অসুস্থ, বয়স্ক ও শিশুরা বেশী আক্রান্ত হচ্ছে। বিভিন্ন উপজেলার হাসপাতালে রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। কোন কোন হাসপাতালে মেঝেতে রোগী রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
গরম থেকে পরিত্রাণ পেতে শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছের ছায়ায় রিকশা ও অটোচালকদের বিশ্রাম নিতে দেখা যায়।
সোমবার দুপুরে চিরিরবন্দরের রানীবন্দর কলেজ মোড় এলাকায় ভ্যাপসা গরমে একটু আরামে বিশ্রাম নিচ্ছেন একই এলাকার নশরতপুর ইউপির রানীপুরের ভ্যানচালক মো. লুৎফর রহমান। এসময় তিনি বলেন, ভ্যাপসা গরমে গলা শুকিয়ে আসছে, ভ্যান চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। তাই ভাড়া যাওয়া বাদ দিয়ে ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছি।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.তোফাজ্জল হোসেন বলেন, সোমবার দুপুর ৩টায় দিনাজপুরে ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসে জলীয় বাষ্পের আদ্রতা ২৮শতাংশ এবং বাতাসেন গড় গতিবেগ ১১কিলোমিটার। এ অবস্থা থাকবে আরও কিছুদিন। আপাতত দিনাজপুরে বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে, ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখা যায়, ফাঁকা নেই হাসপাতালের বেড। জরুরি বিভাগ এবং বহির্বিভাগে রোগীর চাপ। সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। কয়েক দিনের ভ্যাপসা গরমে সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে অনেকেই। রোগীর চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় হাসপাতালে নির্ধারিত বেড ছাড়াও মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছে অনেকে। অসুস্থদের মধ্যে বেশির ভাগই শিশু ও বৃদ্ধ বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা নিচ্ছে এখন প্রতিদিনই ৫০০-৫৫০জন রোগী। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ৬০-৬৫জন। ভর্তি রোগী রয়েছে ৮৫জন, এর মধ্যে ডায়রিয়া রোগে ভর্তি রয়েছে ১৪ জন রোগী। অনেক রোগীকে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এ হাসপাতালে আসার আগেই প্রচÐ তাপপ্রবাহে দু’জন মারা গেছেন। এদের একজন ২০ এপ্রিল সন্ধায় এবং অপরজন একইদিন রাতে মারা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত গরমে হিট স্ট্রোকে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন, পৌর এলাকার চকসাবাজপুর গ্রামের সাবেক পৌর কাউন্সিলর মোতাহার আলী (৫৮) এবং অপরজন যশোর কোতোয়ালি থানা এলাকার রাজারহাট গ্রামের ট্রাক চালক বিল্লাল হোসেন (৫২)।