শীতপ্রধান দেশের বিদেশী আপেল দিনাজপুরে চাষে সফলতা এনে আগামীদিনের সোনালী স্বপ্ন দেখছেন বৃক্ষ গবেষক কৃষিবিদ ইমরুল আহসান। এখন তার গাছে গাছে সবুজ পাতার ফাঁকে থোকা থোকা সুস্বাদু আপেল ঝুলছে। আপেলের খবর শুনে অনেকে ছুটে আসছেন বাগানে দর্শনার্থীরা। জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষে এই আপেল পরিপক্ক হয় কিন্তু ছোট অবস্থায় অনেকে এর স্বাদও নিচ্ছেন।
আমদানি নির্ভরতা কমাতে আপেলের বাগান এ অঞ্চলে বেশি বেশি করা গেলে, একদিকে কৃষক যেমন লাভবান হবেন, তেমনি বিদেশি ফলের চাহিদাও মিটবে। আসবে অর্থনৈতিক উন্নতি।
দীর্ঘসময়ের পর আপেল চাষে সফলতা এনেছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর ইউপির বর্ষা এলাকায় বৃক্ষ গবেষক কৃষিবিদ মোঃ ইমরুল আহসান। তিনি দিনাজপুর হর্টিকালচারের সহকারী উদ্যাণ কর্মকর্তা। বৃহত্তর দিনাজপুর এলাকায় সামার আপেল, গ্রীন আপেলের ব্যপক সম্ভাবনা আছে। দু’বছর বয়স থেকে এসব গাছে ফল আসা শুরু হয় বলে জানান তিনি।
একটি পরিত্যক্ত জায়গা থেকে চাষ উপযোগী করে আপেলসহ বিভিন্ন ফলের চাষে এনেছেন সফলতা। গবেষনা, ভালো যতœ ও তদারকিতে ভাল ফলনে তার সফলতার অনুপ্রেরণায় বেকার যুবকসহ অনেকে তার ফলের বাগান পরিদর্শন করছেন এবং অনেকে এসব বাগান করতে সংকল্প করছেন।
তাসনিয়া এগ্রো রিসার্স ও ডেভলপমেন্ট সেন্টার নামে তার গবেষনা প্রতিষ্ঠানে শতাধিক জাতের দেশি বিদেশী ফলের গাছের উপর গবেষনা চালাচ্ছেন। বিষমুক্ত ফল নিজে খাবো এরপর বানিজ্যিকভাবে এসব ফল কিংবা চারা বিক্রি করবো এই প্রত্যায় নিয়ে এখানে কয়েকশত ফলের বাগান গড়েছেন। তার বাগানে সামার রাম্বু, কাশ্মীরি গ্রীন আপেল, অষ্ট্রেলিয়ান গ্রীন আপেল, আন্না, ডরসেট, হরিমন ৯৯, গর্ডন, গালা, গেøন স্মীথ জাতের আপেল রয়েছে। ১২টি জাতের ৩০টির মতো গাছ আছে। বয়স আড়াই থেকে তিন বছর। তিনি এই অঞ্চলের জন্য উপযোগী তিনটি আপেলের জাত নির্বাচন করেন। তার গবেষণা প্রতিষ্ঠানে ১২টি আপেল গাছ থাকলেও গতবছর দুটি গাছে মাত্র ৫০টির মতো আপেল আসে। সেই আপেল সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন এবং শুরু করেন গবেষণা ও পরিচর্যা। অবশেষে এবার ৮-১০ ফুটের কয়েকটি গাছে হাজারের অধিক আপেলের ফলন এসেছে।
এ ব্যাপারে কৃষিবিদ ইমরুল আহসান জানান, দিনাজপুর অঞ্চলের মাটি সবুজ আপেল আবাদের জন্য বেশি উপযোগী। তবে শীত প্রধান দেশের ফল হওয়ায় বেশী যতœ নিতে হয়। বিশেষ করে অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এটিকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখতে হয়। আমদানি নির্ভরতা কমাতে আপেলের বাগান এ অঞ্চলে বেশি বেশি হওয়া প্রয়োজন। এতে একদিকে কৃষক যেমন লাভবান হবেন তেমনি বিদেশি ফলের চাহিদাও মিটবে। যদি কেউ আপেল বাগান করতে আগ্রহী হয়, তাহলে সব রকমের সহযোগিতা আশ্বাস দেন এই কৃষিবিদ।
তার বাগানে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন জাতের ফল, সবজি, চারা ও কলম বিক্রির জন্য গড়ে তুলেছেন তাসনিয়া এগ্রো রিসার্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট সেন্টার। সে এক একর জায়গা কেনার পর এটি মাটি ভরাট করে ৩বছর ধরে চাষ উপযোগী করেছেন। এতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ২০লাখ টাকা। এরই মধ্যে বিক্রির জন্য বিভিন্ন ফলের কলম চারাও তৈরী করছেন। এসব ফলের বাগানে তিনি দেখছেন আগামীদিনে লাভবান হবার সোনালী স্বপ্ন।