দিনাজপুরে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবে ব্যাপক গাছপালা, আম-লিচুসহ কাঁচা ও টিনের ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সড়কের উপর গাছপালা ভেঙে পগে চলাচলে বিঘœ ঘটে। আম-লিচু ঝড়ে পড়ে, এ ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় গাছ ভেঙে বৈদ্যুতিক খুটিঁতে পড়ায় এবং কোন কোন স্থানে তার ছিড়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ঝড়ের পর থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দিনাজপুর শহর বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন থাকে। তবে ঝড়ের পর ভোর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট সড়ক থেকে ভেঙে যাওয়া গাছ অপসারণের কাজ শুরু করে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিভাগও কাজ শুরু করে।
অপরদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় শহরের বিভিন্ন বাড়ীর মানুষেরা খাবার পানি সংগ্রহে টিউবওয়েল এর খোজ করতে এবং পানি নিতে দেখা যায়।
বুধবার দিবাগত মধ্যরাত পৌনে ২টার দিকে এই আকষ্মিক কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ড চলে। তবে এই ঝড়ের স্থায়ী ছিল মাত্র ৫মিনিট এবং প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো শিলাবৃষ্টি হয় বলে আবহাওয়া অফিস জানায়। বুধবার দিবাগত রাত ১টা ৪৬ মিনিট থেকে ১টা ৫১ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
বৃহস্পতিবার দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জল হোসেন বলেন, রাতে আঘাত হানা কালবৈশাখী ঝড়টি তীব্র গতি প্রায় ৫ মিনিটের মতো স্থায়ী ছিল। এসময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৫-৬০ কিলোমিটার। পাশাপাশি প্রায় ৩০ সেকেন্ডের মতো শিলাবৃষ্টি হয়। মোট বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ২ মিলিমিটার।
এদিকে, ঝড়ে দিনাজপুর-বোচাগঞ্জ ও দিনাজপুর-কাহারোল উপজেলা সড়কে গাছ পড়ে সড়কযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ঝড়ের পর ভোর থেকেই ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট সড়ক থেকে গাছ অপসারণের কাজ শুরু করে। দিনাজপুর শহরের ঐতিহাসিক গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানের গাছপালা, হাউজিং অফিসের গাছপালা, উপশহরের বিভিন্ন সড়কের গাছপালার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রশাসন চত্বর ও সামনের সড়কে থাকা কিছু গাছ ভেঙে পড়ে। এসময় বেশ কয়েকটি বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে ইন্টারনেটের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় ইন্টারনেট নেটওয়ার্কও বাধাগ্রস্ত হয়। মোবাইল ফোনের নেটওয়র্কেও বিঘœ ঘটে। ঝড়ে বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে এবং গাছ ভেঙে বৈদ্যুতিক তার ছিঁড়ে পড়ায় দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন থাকে।
দিনাজপুর পিডিবি কর্তৃপক্ষ জানায়, ঝড়ে শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ায় বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিদ্যুৎ সচল রাখার জন্য কাজ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরে বড় বড় গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় যান ও পথচারীদের চলাচল বিঘœ হচ্ছে। ভুতুড়ে পরিবেশ। ১৫ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো বিদ্যুৎ আসেনি।
জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আনিছুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১০ বান্ডিল টিন ও ৩০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। রাত ৩টার পর দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ ও পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে কিছু টিন ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়েছে। তালিকা তৈরি করে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।
বোচাগঞ্জ
বোচাগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় ঘুর্ণিঝড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঘড় বাড়ী, ফসলীমাঠ, আম, কাঠাল, লিচু ও কলা বাগানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন নবনির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আফছার আলী।
২৯ মে বুধবার দিবাগত রাত ১টার দিকে আচমকা ঘুর্ণিঝড়ে উপজেলার ছাতইল ও আটগাঁও ইউনিয়নে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আটগাঁও ইউনিয়নের মোল্লাপাড়া দাখিল মাদরাসার সিমানা প্রাচির, অফিস কক্ষ ও শ্রেনী কক্ষের চাল ঝড়ের তান্ডপে দুমড়েমুচড়ে গেছে। মোল্লাপাড়া গ্রামের হাজারও গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। ছাতইল ইউনিয়নের চেঙ্গন, হাজিপুর ও ভাদুয়ারি গ্রামের চিত্র একই। সেখানেও বাড়ীঘড় গাছপালা ভেঙ্গে পড়েছে। ভাদুয়ারী গ্রামের মোঃ শাহ আলম অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে ১৪ শত কলা গাছ রোপন করেছিলেন। ঝড়ে তার কলা বাগানের একটি গাছও দাড়িয়ে নেই। দেখে মনে হয় কোন এক দানব প্রতিটি কলা গাছ মধ্যে থেকে ভেঙ্গে দিয়েছে। কলার বাগানের মালিক শাহ আলম জানান, এই ঘুর্ণিঝড়ে তার কলা বাগানে প্রায় ৮ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মোল্লাপাড়া দাখিল মাদরাসার সুপার মোঃ আব্দুল মতিন বলেন, এই মাদরাসার যে ক্ষতি হয়েছে তা পুরণ করতে বেশ সময় লাগবে। সেতাবগঞ্জ পৌরশহরের নেসকো ১৬ ঘন্টা পর বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ঠিক করলেও পল্লি বিদ্যুৎ নেই। কারণ বিদ্যুৎ এর সঞ্চালন লাইনের উপর শত শত গাছ ভেঙ্গে পড়েছে। বোচাগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নব-নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ আফছার আলী ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সাথে দেখা করেন এবং তাদের সার্বিক সহযোগীতার আশ^াস দেন।
শুক্রবার , ৩১ মে ২০২৪ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
