উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার বাজার দিনাজপুরের রামনগর বাজার। এই চামড়ার বাজারে একসময় ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড় ও জয়পুরহাট থেকে চামড়া নিয়ে এসে বিক্রি করা হতো। সেই রমরমা বাজার এখন আর নেই। গত কয়েক বছর ধরে চামড়ার বাজারে ধস নেমেছে।
এবারেও কোরবানির ঈদে চামড়া ব্যবসা নিয়ে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম দিনাজপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। সবকিছুর দাম বৃদ্ধিতে যুক্ত হয়েছে শ্রমিক ও লবণের দ্বিগুণ মূল্য। এছাড়াও কোরবানীর চামড়া অবৈধভাবে চড়া দামে বিক্রির আশায় সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাঁচারের আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা। এই চামড়া শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন জেলার চামড়া ব্যবসায়ীরা।
দিনাজপুরের রামনগর চামড়ার বাজারে দেখা যায়, কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহ চলছে। সাথে চলছে চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা। শ্রমিক সংকট ও লবণের দ্বিগুণ মূল্য নিয়ে চামড়ার রক্ষণাবেক্ষণে অনিশ্চয়তার কথা জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না দাবি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের। আবার ছাগলের চামড়া ব্যবসায়ীরা না কেনায় ফেলে দিয়ে আসতে হয়েছে তাদের। কাঁচা চামড়া প্রকারভেদে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকায় কিনছেন চামড়া ব্যবসায়ীরা। ছোট গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫০ থেকে ৪০০ টাকায়।
এদিকে, ঈদের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবারও দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা কোরবানীর পশুর বর্জ্য অপসারণ করেছেন। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে কোরবানীর পশুর রক্ত, বর্জ্য এমনকি রাস্তার উপরে পড়ে থাকা ছাগলের চামড়াও অপসারণ করতে ব্যাস্ত থাকে তারা। উত্তরবঙ্গের অন্যতম বৃহত্তম শহরের রামনগর মোড়ে চামড়ার বাজারে পড়ে থাকা ছাগলের চামড়া অপসারণ করতে দেখা গেছে পৌরসভার পরিচ্ছন্নদের। ছাগলের চামড়া বিক্রি না হওয়ায় ফেলে দেয়া হয়।
দিনাজপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক গ্রæপের সভাপতি মো. জুলফিকার আলী স্বপন জানান, এবার ঈদে ৫০হাজার গরু, ছাগল আর মহিষের চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা মিলছে না। কয়েকবছর ধরে ঢাকার ট্যানারী মালিকদের কাছে ৫কোটি টাকার অধিক পাওনা থাকলেও আমরা কোন টাকা পয়সা ঠিকমতো পাচ্ছি না। আবার ট্যানারী মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করলে এর টাকা পেতে লেগে যায় প্রায় এক বছর।
তিনি আরও জানান, প্রকারভেদে ১৮ ফুট চামড়া ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দামে ক্রয় করছি। একটি চামড়া কেনার পর প্রসেসিংয়ে আরও ২৫০টাকা খরচ হয়। সেই সাথে এক রাত কাজ করলেই শ্রমিককে দিতে হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের বেধে দেয়া দামের সাথে তাল মিলিয়ে চললে লোকসান গুনতে হয়।
কাঁচামাল চামড়ার ব্যবসার সাথে জড়িতদের যদি সরকার না দেখে, তাহলে চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি। ট্যানারী শিল্পকে যেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে, একইভাবে চামড়া শিল্পকেও ঋণের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান জেলা চামড়া মালিক গ্রæপের এই নেতা।