বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ(দিনাজপুর)প্রতিনিধি: দিনাজপুরের বীরগঞ্জে জনগণের উপর লাঠিচার্জ না করায় ইউনিফর্ম পরিহিত গ্রাম পুলিশকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারধরের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বালু খেকো ১০নং মোহনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান চৌধুরীর নেতৃত্বে ঢেপা নদী থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বালু উত্তোলন ও আত্মসাৎ এর খবর পেয়ে কাশিপুর বালু ঘাটে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে স্থানীয় জনতা। পরে ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী জনগণের উপর গ্রামপুলিশদের লাঠিচার্জের নির্দেশ দিলে গ্রাম পুলিশ উত্তম কুমার রায় সেই নির্দেশনা না মানায় জনতার সামনে তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। বর্তমানে গুরুতর আহত উত্তম রায় বীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ইউপি সদস্য, স্থানীয় জনতা জানান, বেশ কিছুদিন পূর্বে স্বৈরশাসক সরকারের সময় নদী খননের স্তূপ করা বালু নিলামে বিক্রি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঢেপা নদীর কাশিপুর মৌজায় নুরুজ্জামান ও নুরল ইসলাম ২ টি লট ক্রয় করে এবং আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন সভাপতি প্রভাষক জিয়াউর রহমান জিয়া, প্রবীন নেতা মজিবর রহমান মাষ্টার, ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীসহ বেশ কয়েক জন পার্টনাশীপে যথারীতি বালু সমুহ অপসারণ করে নিয়ে যায়। কিন্তু সকল অবৈধ এবং অপকর্মের হোতা ইউপি চেয়ারম্যান শাহীনুর রহমান শাহীন চৌধুরী, ফেরদৌস আলী মেম্বার, আজাদ মাষ্টার আইনের প্রতি তোয়াক্কা না করে যৌথভাবে নদীতে ড্রেজার লাগিয়ে দিবারাত্রি অবৈধ ড্রাম্প ট্রাক ও ড্রেজার মেশিন দিয়ে নদী গর্ভের বালু উত্তোলন করে বিক্রি অব্যাহত রাখে। স্থানীয় ভুক্তভোগীদের মতে শাহীন চেয়ারম্যান ও ফেরদৌস আলী মেম্বার বিগত সরকারের সময়ও বালু লুটপাটের সিন্ডিকেটের সাথে জড়িত ছিল। দীর্ঘদিন থেকে লুটপাটের অংক কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলেও তারা মন্তব্য করেন। বর্তমান সরকারের আমলে আধিপত্য বিস্তার করে চেয়ারম্যান শাহীন ও ফেরদৌস আলী অন্যান্য পার্টনারকে বাদ দিয়ে গায়ের জোরে গত ৫/৭দিন থেকে পুনরায় বালু উত্তোলন আরম্ভ করে। জানতে পেরে শনিবার ২৪ (আগষ্ট’২০২৪ ) বেলা ১১ টার দিকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও পৌর প্রশাসক দিপংকর বর্মন বালু ঘাটে গিয়ে বালু উত্তোলন না করার জন্য নিষেধ করে চলে আসেন। কিন্তু শাহিন চেয়ারম্যান নিজ ক্ষমতা বলে প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করে বালু উত্তোলন অব্যাহত রাখেন।পার্টনারশিপদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয় ফলে কাশিপুর গ্রামের লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে বিকেল বেলা বালু উত্তোলনে বাঁধা দেয়, এক পর্যায় একটি বালু বোঝাই ড্রাম্প ট্রাক আটক করে গ্রামবাসী, শুরু হয় সংঘর্ষ। সংবাদ পেয়ে শাহিন চেয়ারম্যান ও ফেরদৌস আলী মেম্বার লোকজন নিয়ে বালুঘাটে উপস্থিত হয়, ডেকে নেয় গ্রাম পুলিশ। চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশকে হুকুম দিয়ে বলে আমি এই ইউনিয়নের হাকিম এবং মালিক, প্রতিবাদী জনগণের উপর লাঠিচার্জ কর কি হয় আমি দেখব। কিন্তু গ্রাম পুলিশেরা তার হুকুম অমান্য করায় চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন চৌধুরী নিজেই জনগণের উপর চড়াও হন এবং গ্রাম পুলিশ উত্তম রায়কে এলোপাধারী মারতে থাকেন।
ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে গ্রাম পুলিশ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফরজ আলী মেম্বারসহ তাদের সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে ঘটনাটি অবহিত করেন। ফরজ আলী মেম্বার সন্ধ্যায় পরে পরিষদের অন্যান্য মেম্বারদের ডেকে বৈঠকে বসলে সেখানেও মেম্বারদেরকে হেনস্থা করার জন্য শাহিনুর চৌধুরী তার লাঠিয়াল বাহিনীকে ডেকে এনে ইউনিয়ন পরিষদ ঘেরাও করে রাখেন।উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং অফিসার ইনচার্জ বীরগঞ্জ থানাকে সংঘর্ষ ও গ্রাম পুলিশকে অন্যায় ভাবে জনতার সামনে ইউনিফর্ম পরিহিত অবস্থায় চেয়ারম্যান কর্তৃক মারপিট করার ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে বেগতিক দেখে চেয়ারম্যান তার বাহিনী নিয়ে পালিয়ে যায়। আটককৃত বালুর ট্রাকটি ইউনিয়ন পরিষদে আটক রয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহীন চৌধুরীর মুঠোফোনে অনেকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ফজলে এলাহী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) দিপংকর বর্মন এবং অফিসার ইনচার্জ মোঃ মজিবুর রহমানের সাথে কথা হলে তারা বলেন ঘটনা শুনেছেন। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা সহ্য করা হবে না, অপরাধী যতবড়ই হোক ছাড় দেয়া হবে না। আইন সবার উর্ধ্বে। চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের এসব অপকর্মের বিচার দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।