বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)প্রতিনিধি \ দিনাজপুরের বীরগঞ্জের ঐতিহাসিক মিলন মেলায় জীবন সঙ্গীর খোঁজে ছুটে আসেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে কয়েক হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী লোকেরা। স্থানীয় ভাবে এরা আদিবাসী বলে পরিচিত।
শারদীয় দূর্গা পুজার বিজয়া দশমীর পরের দিন উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মিলন মেলায় উৎসবে মেতে উঠে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তরুন-তরুনীরা। তবে এবছর একদিন পিছিয়ে মেলাটি গত মঙ্গলবার ব্যাপক আয়োজনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই মেলা।
মেলায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিভিন্ন বয়সের মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন ধর্ম ও বর্ণের মানুষের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় উৎসব মুখর পরিবেশে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ব্যতিক্রমধর্মী মেলা। এটি অনেকের কাছে কাছে বাসিয়া হাটি নামে পরিচিত।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত মেলায় মুলত দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, রাজশাহী ও নওগাঁও জেলার আদিবাসীদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ হলো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা এখান থেকে পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতে পারেন। এখানে কোনো পাত্র বা পাত্রী পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে ধুমধামে বিয়ে দেওয়া হয়। তবে মেলার এই ঐতিহ্যবাহী রীতিতে কিছুটা ভাটা পড়েছে।
উপজেলার আদিবাসী নারী নেত্রী রাণী রাসদা বলেন, সময়ের সাথে আদিবাসীদের জীবন যাত্রায় এখন অনেক পরিবর্তন এসেছে। বেশির ভাগ আদিবাসী ছেলে মেয়েরা এখন বিদ্যালয়মুখী হয়েছে। তাই পুরনো ঐতিহ্যগুলি অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে।
মেলা আসা পঞ্জগড় জেলার আদিবাসী যুবক বলেন,বন্ধুদের সাথে মেলায় এসেছি।এখানে আদিবাসীদের নাচগান কৃষ্টি কালচারসহ অনেক প্রিয় মানুষের দেখা মেলে। একটা সময় এ মেলার জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে।
মেলা আয়োজক কমিটি বীরগঞ্জ থানা আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির কমলা কান্ত হাসদা বলেন, আদিবাসী মিলন মেলার মুল উদ্যেশ্য হচ্ছে আমাদের আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারকে তুলে ধরা। এখানে অনেক আত্মীয় স্বজনের সাথে দেখা হয়। এই মেলার প্রচলন আদিকাল থেকে। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটি সঠিক ভাবে বলা যাবে না। আনুমানিক ভাবে কয়েক শত বছর পুর্ব থেকে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে এটি বাপ-দাদার কাছে শুনেছি। তবে বিয়ের বিষয়টি আগের মতো করে এখন আর হয় না। মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে এলাকার সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক ও কেন্দ্রিয় কৃষকদলের সদস্য আলহাজ্ব মনজুরুল ইসলাম মনজু বলেন, এই মেলাটি আমাদের পুর্ব পুরুষের আমল হতে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এই মেলাকে ঘিরে সব আয়োজন এই বেশ নন্দিত হয়েছে। দেশবাসীর কাছে আমাদের আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ঐতিহ্য কৃষ্টি কালচার পরিচিতি লাভ করেছে। তবে এ বছর আর্থিক সংকটের কারণে এই মেলা অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে বেশ জটিলতা তৈরী হয়েছিল। আমি ব্যক্তিগত ভাবে উদ্যোগ নিয়ে সকলের সহযোগিতায় মেলা আনন্দ মুখর এবং বর্ণিল ভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
মেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সব বয়সী নারী-পুরুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বাহারি সব কাঁচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, লিপস্টিক, কানের দুল, ঝিনুকের ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র খেলনা, গৃহস্তালিকাজে ব্যবহৃত দা কুড়াল,হাড়ি পাতিলসহ বিভিন্ন খাবারের দোকানে পসরা সাজিয়ে রেখেছেন বিক্রেতারা।