খানসামা (দিনাজপুর)প্রতিনিধি\ দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় বিদ্যালয়ের জমি দখল করে প্রধান শিক্ষকের ঘরবাড়ি নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় বুধবার বিকালে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনাটি খানসামা উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে।
বিদ্যালয়ের জমি কৌশলে হাতিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়। প্রধান শিক্ষকের এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী ও চিত্তরঞ্জন রায়, স্থানীয় রহিদুল ইসলাম রাফি ও মহিউদ্দিন।
অভিযোগ করা হয়েছে, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের পাশেই প্রথম মন্দির নির্মাণ করে কৌশলে বেড়া দিয়ে আস্তে আস্তে জমি দখল করে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। বিদ্যালয়ের জমিতেই দোকান তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।
অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৫নভেম্বর সরেজমিন ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন। গত ৫আগস্টের পর থেকে জমি দখল, আর্থিক অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন করছেন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং স্থানীয়রা। একাধিক ব্যক্তির কয়েকটি অভিযোগ তুলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রদান করলে ইতিপূর্বে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশিক আহমেদ তদন্ত করেন। তাঁরা সর্বশেষ গত ২৭অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা গেছে, স্থানীয় লোকজনের উদ্যোগে জমি সংগ্রহ ও অবকাঠামো নির্মাণ করে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন চিত্তরঞ্জন রায় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালনকালা ১৯৯৬ সালের ৮ আগস্ট ৩০২৮ নং দানপত্র দলিলমূলে বিভিন্ন দাগে ১ একর ৩০শতাংশ জমি নি¤œ মাধ্যমিক/উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অনুক‚লে উপজেলার ভেড়ভেড়ী ইউনিয়নের টংগুয়া মৌজায় টংগুয়া আদর্শ নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয়োর সভাপতি বরাবরে পার্শ্ববর্তী নীলফামারীর দুকুড়ী এলাকার গয়চাঁদ ব্রজবাসীর ছেলে হরেক চাঁদ ব্রজবাসী পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত নিজ দখলীয় মালিকানা জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। সেই মোতাবেক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জমির খাজনা পরিশোধ করে ব্যবহার করে আসছে। জমির স্কেচ ম্যাপেও তা দৃশ্যমান রয়েছে। গত ১৯৯৭ সালের ২৯ আগস্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে সতীশ চন্দ্র রায় তৎকালীন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চিত্তরঞ্জন রায়ের নিয়োগপত্রের আলোকে ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে যোগদান করে অদ্যাবধি চাকরি করে আসছেন। এমতাবস্থায় বিদ্যালয়ের জমি সংরক্ষণ না করে প্রধান শিক্ষক হয়েও বিদ্যালয়ের নাম সংশোধনী রেজিস্ট্রি না নিয়ে অন্য ওয়ারিশের নিকট নিয়মবহির্ভূতভাবে সতীশ চন্দ্র রায় তার নিজ নামে ৪৮ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে নেন। বিদ্যালয়ের পুরোনো খেলার মাঠে আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে নিজ দখলে নিয়ে বসবাস করছেন ওই প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়ের নামীয় ২৭ শতাংশ জমি নিয়ম না মেনেই গোপনে স্থানীয় জনৈক ব্যক্তিকে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। ওই ব্যক্তি জমিতে পুকুর খনন এবং নিজের বাড়ি নির্মাণ করেছেন।
স্থানীয় রহিদুল ইসলাম রাফি জানান, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জমি দখলসহ নানা অনিয়ম করেছেন। তাঁকে দ্রæত অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
তবে প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায় অভিযোগের বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি জানান,বিষয়টি ইউএনও স্যার তদন্ত করছেন। যদি আমার জমি না টিকে তাহলে তিনি যেটা করবেন সেটাই হবে। এছাড়া আমার কিছু বলার নেই।
খানসামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. তাজ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্তে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। এ কারণে বুধবার বিকালে ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সতীশ চন্দ্র রায়কে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।