যথাযোগ্য মর্যাদা, উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) মহান বিজয় দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ হতে বিভিন্ন কর্মস‚চি গ্রহণ করা হয়। কর্মস‚চির অংশ হিসেবে স‚র্যোদয়ের সাথে সাথে সকাল ৬.৪৪ টায় প্রশাসনিক ভবনের সন্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অতঃপর সকাল ৯.০৫ টায় হাবিপ্রবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনাম উল্যা ও প্রোভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো.শফিকুল ইসলাম সিকদার-এর নেতৃত্বে বিজয় দিবসের বর্ণাঢ্য র্যালি টিএসসির সম্মুখ হতে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস ও এর সামনের মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। র্যালিতে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী অংশগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে সকাল ৯.৩০ টায় মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনাম উল্যা- প্রোভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো.শফিকুল ইসলাম সিকদার, রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. এম. জাহাঙ্গীর কবির, প্রক্টর প্রফেসর ড. মো. শামসুজ্জোহা, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসানকে সাথে নিয়ে সকল শহীদগণের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন অনুষদের ডীন, চেয়ারম্যান, পরিচালকবৃন্দ, রেজিস্ট্রার, হল সুপার, প্রক্টরসহ অন্যান্য শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীবৃন্দ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সহকারী প্রক্টরপ্রফেসর ড. আবুল কালাম।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে উপস্থিত সকলের মাঝে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক প্রদত্ত বাণী পাঠ ও বিতরণ করা হয়। বাণীতে মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনাম উল্যা বলেন, “বিজয়ের ৫৩তম বার্ষিকীর এ আনন্দময় দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি স্বাধীনতার ঘোষনা ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সকল জাতীয় নেতৃবৃন্দকে যাঁদের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিভ্রান্ত জাতিকে দিয়ে ছিল নতুন দিকনির্দেশনা। আজকের এ মহান দিনে আমি গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সে সকলবীর মুক্তিযোদ্ধাকে, যাঁরা দেশ মাতৃকার স্বাধীনতাকে ছিনিয়ে আনতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং যাঁদের জীবণ-মরণ সংগ্রাম ও সীমাহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের মানচিত্র ও জাতীয় পতাকা। মহান মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা আহত ও পঙ্গু হয়েছেন এবং প্রিয় স্বজনদের হারিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমি গভীর শ্রদ্ধা ও সহানুভ‚তি জানাচ্ছি। শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে সম্ভ্রম হারানো এবং নানাভাবে নির্যাতিত মা-বোনদের অবদানের কথা। আমাদের জাতীয় জীবনে মহান বিজয় দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। এদেশের নিরস্ত্র মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণ একাত্তরে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সশস্ত্র পাক্ হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের পরাজিত করে যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল তা রক্ষা কল্পে একই চেতনা ধারণ করে বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য ’২৪ এর জুলাই-আগষ্ট -এ নিরস্ত্র শান্তি কামী ছাত্র-জনতা গড়ে তোলেন গণআন্দোলন ও গণবিপ্লব। সরকার ও পেটুয়া বাহিনী নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার উপর সশস্ত্র হামলা চালায়- যা পরবর্তীতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রুপ নেয়। শহীদ হন আবু সাঈদ-মুগ্ধসহ শতশত তরতাজা শিশু-কিশোর, ছাত্র-যুবক-শ্রমিক। হাজার হাজার ছাত্র-জনতা চিরতরে অন্ধত্ব ও পঙ্গুত্ববরণ করেন এবং স্বৈরাচারী-ফ্যাসিষ্ট সরকারকে হটিয়ে ছিনিয়ে আনে আমাদের দ্বিতীয় স্বাধীনতা। শহীদদের আদর্শকে বুকে ধারণ করে অভ্যন্তরিণ ও বৈশি^ক নানাবিধ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ন্যায্যতার ভিত্তিতে বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক, কল্যাণ কর, আত্মমর্যাদাশীল, সুখী-সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় শপথ নিতে হবে। দেশের এই ক্রান্তিকালে বর্তমান অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউন‚স জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশে সন্ত্রাস নির্মুল, দ‚র্নীতি, অর্থনীতি এবং বিচার বিভাগসহ প্রসাশনের সর্বত্র প্রয়োজনীয় সংস্কারের যে বলিষ্ঠ উদ্যোগ নিয়েছেন তা সফল করতে আমাদের ধৈর্য্য, আন্তরিক সমর্থন ও সহযোগীতা প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি, দেশীয়-আন্তর্জাতিক নানামুখী সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে রক্ষা করতে হবে আমাদের এ প্রিয় মাতৃভ‚মির পবিত্র স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব”।
এছাড়াও বিজয় দিবসের কর্মস‚চির অংশ হিসেবে সকাল ১০ টায় টিএসসি প্রাঙ্গণে শিশুদের চিত্রাংকন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বাদ যোহর কেন্দ্রীয় মসজিদে সকল শহীদগণের রূহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দিনের দ্বিতীয় ভাগে বিকাল ৪টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষদ ভিত্তিক ৩য় আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় (ছাত্র-ছাত্রী) ভলিবল প্রতিযোগিতা- ২০২৪ এর চুড়ান্ত খেলা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মাননীয় ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. এনাম উল্যা, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রোভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.মো. শফিকুল ইসলাম সিকদার। সভাপতিত্ব করবেন শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগের পরিচালক মো. মাহবুব উল হাসান।
এদিকে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য রাতে হল গুলোতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং প্রশাসনিক ভবন, শহীদ মিনার, একাডেমিক ভবন, গেটসহ বিভিন্ন স্থাপনাতে আলোক সজ্জা করা হয়েছে।