বৃহস্পতিবার , ২৫ মার্চ ২০২১ | ১লা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যেদিন মেয়ের জম্ম হল, সেদিন আমি বাবা হলাম, ঘটনাটি দারুন এক কষ্টের- লেখেছেন “নিখিল রায়”

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
মার্চ ২৫, ২০২১ ১২:০০ অপরাহ্ণ

এসএম মশিউর রহমান সরকার, বালিয়াডাঙ্গী প্রতিনিধি : বাবা হওয়ার জন্মদিন— যেদিন মেয়ের জন্ম হল, সেদিন আমিও তো বাবা হলাম ৷ তাই ২২/৩ যেমন হিমুর ১৫ তম জন্মদিন, তেমনি আমারও ১৫ তম বাবা হওয়ার দিন ৷ বাপ-বেটির জন্মদিনের কথকতাকে শীবের গীত গাওয়া মনে করতে পারেন, তবু প্রথমবার একটু গাইব ৷ নিজে ডাক্তার নই, তাই ডাক্তারসাহেবের নিকট শোনা কথাই বয়ান করছি ৷
আমাদের মা বোনদের গর্ভকালীন সময়ে পেটে বাচ্চা থাকে, বাচ্চার উপরিভাগে “ফুল” থাকে ৷তাই নরমাল ডেলিভারীর ক্ষেত্রে আগে বাচ্চা ইস্যু হয়, তারপর ফুল পরে বা ইস্যু হয় ৷ শোনামতে ২/৩ হাজারে ১টা ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটে ৷ মায়ের পেটে উপরের অংশে বাচ্চা থাকে, নীচের দিকে ফুল থাকে ৷ এসব ক্ষেত্রে নরমাল ডেলিভারী প্রায় অসম্ভব ৷ আমার মেয়ের জন্মের ক্ষেত্রে বিরল ব্যতিক্রমী ঘটনাই ঘটেছে ৷ হিমুর মা কনসেপ্ট করার মাসখানেক পর থেকেই ব্লিডিং শুরু হয় ৷ ডাক্তারকে দেখানোর পর আলটাসোনোগ্রাম শেষে এ বিরল ঘটনার কথা জানা যায় ৷ শুরু হয় চিকিৎসা ৷ ঔষধ ছাড়াও কয়েকবার রক্ত দেওয়া হয় ৷ ডাক্তারের ভাষ্য, বাচ্চা ইস্যু হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে ৷ ক্রমেই ব্লিডিং বাড়তে থাকে ৷
গর্ভের বাচ্চার বয়স যখন প্রায় ২৭ সপ্তাহ সেসময় ব্লিডিং বেড়ে গেলে ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ হাসপাতালে ২ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয় ৷ বিরামহীন স্যলাইন, ইনজেকশন এবং অন্যান্য ঔষধ চলতে থাকে ৷ পরদিন ব্লিডিং আরো বেড়ে গেলে ডাক্তার জানান, সিজার করা ছাড়া ব্লিডিং বন্ধ হবে না ৷

রোগীকে বাঁচাতে চাইলে দ্রুত সিজার করতে হবে, বাচ্চার কি হবে- বলা যাবে না ৷ সকাল ৯টায় সিজার করার সিদ্ধান্ত হয় এবং ৯’৪০ মিনিটে সিজার সম্পন্ন হয় ৷ বাড়ীর লোক এবং আত্বীয় স্বজন পৌছার পূর্বে সিজারের পর মেয়েকে নার্সের কাছ হতে গ্রহন করেন বৌদি(সুবাস দার বৌ) ৷ বাচ্চার ওজন ১’৪ পাউন্ড ৷ নীচের অংশে জায়গা বেশী থাকায় ফুল অনেক বড় হয়েছে, ফুলের চাপে বাচ্চা হয়েছে খুব ছোট ৷
তাছাড়া প্রিম্যচিউরড বেবি ৷ বাচ্চার চোখ ফোটেনি, চোখের পাতা নাই, ভুরু গজায়নি, মাথায় চুল নাই, মাথার উপরিভাগ বা খুলি শক্ত হয়নি, নরাচরা নাই, কান্না নাই- একটা মাংসপিন্ড মাত্র ৷ সাথে সাথেই তুলার মধ্যে জড়ানো হল ৷ নাকে অক্সিজেন নল লাগানো হল, স্যলাইন পুশ করা হল এবং স্যলাইনের মধ্যে বিভিন্ন ইনজেকশন দেওয়া শুরু হল ৷ তার মা অচেতন ৷ তাকেও অক্সিজেন, স্যলাইন এবং রক্ত দেওয়া চলতে থাকল ৷ মা ১ম তলায় প্রসুতি ওয়ার্ডে, মেয়ে ৩য় তলায় শিশু ওয়ার্ডে ৷ মেয়েকে তুলার মধ্যে দেখি আর ভাবি এটুকু বাচ্চাকে কিভাবে বড় করব ৷ ৩দিন পর মা প্রথমবার মেয়েকে দেখে স্যলাইন চলা অবস্থায় স্ট্রেচারে ৩ তলায় নিয়ে গিয়ে ৷ ৭ দিন পর মেয়েকে তুলার ভিতর হতে বের করা হয় ৷ ইতিমধ্যে মেয়ে আক্রান্ত হয় জন্ডিসে ৷ বক্সের মত ছোট কারেন্টের ঘরে শুরু হয় হিট দেওয়া ৷ চোখ বেধে ৩০ মিনিট কারেন্টের ঘরে, ১০ মিনিট বাইরে, আবার ৩০ মিনিট ভিতরে- ১০ মিনিট বাইরে, এভাবে চলে একটানা ৯৬ ঘন্টা ৷ ৯৬ ঘন্টা পর আবার তুলার ভিতর ৷ ক্যানুলার মাধ্যমে চলতে থাকে ইনজেকশন আর খাওয়া বলতে ল্যকটোজেন দুধ ৷ এভাবে চলার পর ১৫ তম দিনে হাসপাতাল হতে রিলিজ করে ৷ বেশীরভাগ মানুষ কৃতজ্ঞতার বোঝা নাকি দীর্ঘদিন বহন করতে পারে না ৷ আমিও কতদিন বহন করতে পারব জানি না ৷ তবে মেয়ের ১৫ তম জন্মদিনে পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি বৌদি(সুবাস দার বৌ), পাল বৌদি (অতুল বাবুর বৌ), ভাবী(হোসেন ভাইর বৌ), বৌমা(সুবাস বাবাজীর বৌ), মুক্তাদি, মন্জুদি, জবা, আমার ৩ বোন, মা, সুবাস( ভাতিজা), নওয়াজেস, বিপুল, আমার ছোট ভাই, নাম না বলা অফিসের সহকর্মী ও ভাবীদেরকে ৷ তাঁদের সকলের নিকট আমি ঋনী ৷
মা খুব দুর্বল, বুকের দুধ পায়না, মেয়ের খাওয়া তাই ল্যকটোজেন ও সেরেলাক ৷ প্রায় ৪ মাস পর চোখের পাতা ও ভুরুতে চুল গজাতে শুরু করে ৷ মাথার মাঝখানে ছোট একটু জায়গা ব্যতীত মাথার উপরিভাগ শক্ত হতে থাকে ৷ প্রায় ১ বছর পর মাথার খুলি পরিপূর্ণ শক্ত হয় এবং চূল গজাতে শুরু করে ৷ টেনশন শুরু হয় কথা বলতে না পারা নিয়ে ৷ হাটতে শিখল কিন্তু কথা বলতে পারে না ৷ ২ বছর ১ মাসের সময় বিকালে হঠাৎ প্রথম “দা” বলে ডেকে উঠে ৷ মনে হয় সেদিন আমার আনন্দে চৌষট্টিখানা অবস্থা হয়েছিল ৷ বাসায়, গ্রামের বাড়ীতে এবং আত্বীয় স্বজনদের মধ্যে আনন্দের আম্ফান বয়ে যায় ৷
মেয়ের বয়স যখন ৪ বছর ১ মাস তখন তার মা মারা যায় ৷ তার মা মারা যাওয়ার পর আমি কান্না কাটি করেছি কিনা জানি না শুধু ভেবেছি মেয়েকে খাওয়াব কিভাবে, বড় করব কিভাবে ৷ সেসময় আমার ছোটভাই প্রায় হিমুর মায়ের ভূমিকা পালন করেছে ৷
যেসব মানুষের চেহারা খারাপ, তাদের ভাগ্যও নাকি খারাপ হয়- পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এ কথাই প্রমাণ করে ৷ সেন্ট যোসেফ্স স্কুলে লেখাপড়া শুরু করাটা ছিল খুব কষ্টের ৷ সেই স্কুল থেকে বেবী, ১ম ও ২য় শ্রেনী শেষে ১ম বারেই পরীক্ষা দিয়ে দিনাজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে ৩য় শ্রেনীতে চান্স পায় ৷ ১বছর পড়ার পর পারিবারিক অনেক ঘটনা- দুর্ঘটনা শেষে হিমু এখন খোলাহাটি ক্যন্টের দশম শ্রেণীর ছাত্রী ৷
আমাদের দেশে মেয়েদের স্বাবলম্বী এবং আত্মনির্ভরশীল হওয়া অনেক বেশি প্রয়োজন ৷ বেশীরভাগ পরিবাররূপী বিদ্যালয়ে সবাই শিক্ষক, ছাত্রী শুধু বৌমা ৷ সবাই শিখাতে চায়- বৌমাকে শুধু শিখতে হয় ৷ আত্মনির্ভরশীল নাহলে সকলের ইচ্ছার রোবট হয়েই চলতে হয়- নিজের ইচ্ছা, ভাললাগা, খারাপলাগা বা মতামতের কোন গুরুত্ব থাকে না ৷ তাই বন্ধু, স্বজন, সুহৃদ সবার নিকট আবেদন, আমার চাওয়ার সহযাত্রী হয়ে সবাই চাই- কারো মেয়ে, কারো বোন, কারো মা বা কারো বৌ- এই পরিচয়ে পরিচিত না হয়ে ” হিমু” নিজস্ব পরিচয়ে পরিচিত হোক- এই হোক জন্মদিনের উপহার ৷ জন্মদিন শুভ হোক, জয়তুঃ জন্মদিন।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে প্রথম ব্লাকস্টোন আমদানি

দিনাজপুর সরকারি কলেজে আন্ত :ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ডাকে  কলম বিরতি পালিত

দিনাজপুর সরকারি কলেজে আন্ত :ক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ডাকে কলম বিরতি পালিত

ঠাকুরগাঁওয়ে অসময়ে শিলাবৃষ্টি !

ঠাকুরগাঁওয়ে শিবগঞ্জ ডিগ্রী কলেজে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত

ইউপি উপনির্বাচন উপলক্ষে হরিপুর ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

কাহারোলে ভ‚ট্টা চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের সম্ভাবনা

দালালদের দৌরাত্ম্যে বীরগঞ্জ হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি বন্ধের উপক্রম

বোচাগঞ্জে হা-ডু-ডু টুর্ণামেন্ট উদ্বোধন খেলায় উপচেপড়া ভীড়

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সকল প্রকার কুচক্রীমহলকে  উৎখাত করবেন -মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি

বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সকল প্রকার কুচক্রীমহলকে উৎখাত করবেন -মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি

আটোয়ারী উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক বঙ্গবন্ধুর জুলিও কুরি প্রাপ্তির ৫০ বছর উদযাপন