রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি: ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানসহ স্বাধীনতা পরবর্তীতে আ’লীগকে সু-সংগঠিত করা। পর্যায়ক্রমে আ’লীগের দূর্দিনে আ’লীগের পাশে থাকা বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্যরাসহ তৎকালীন ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে অনেকে এবারে ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলা আ’লীগের পূর্ণাঙ কমিটিতে ঠাই পায়নি।
গত ২২ মে জেলা আ’লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশি ও সাধারণ সম্পাদক দীপংক কুমার রায় স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট উপজেলা আ’লীগের কমিটির অনুমোদন দেয়। এ কমিটি ঘোষনার পর থেকেই উপজেলা জুড়ে পদ বঞ্চিত নেতাকর্মিদের মাঝে বিরুপ মন্তব্য সৃষ্ঠি হয়। এর আগে গত ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর পৌরশহরের রাণীশংকৈল মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় পুনরায় সভাপতি হন অধ্যাপক সইদুল হক ও গোপন ভোটের মাধ্যমে সাধারণ সম্পাদক হিসাবে নির্বাচিত হন তাজউদ্দীন।
অভিযোগ উঠেছে, এবারের কমিটিতে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হক তার নিজের চাচাতো ভাই ও ভগ্নিপতি অন্যান্য চাচাতো ভাই স্ত্রী’কে অন্তভুক্ত করে গুরত্বপর্ণ পদ দিয়েছেন। এছাড়াও তার পৈত্রিক এলাকা উপজেলার বাচোর ইউনিয়ন থেকেই ১৫ জনকে কমিটিতে অন্তভুক্ত করেছেন। এছাড়াও আ’লীগের অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছে এমন ব্যাক্তি যারা উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হকের কঠোর সমর্থক তাদের কমিটিতে স্থান দিয়ে নিজের আজ্ঞাবহ কমিটিতে রুপান্তর করেছেন উপজেলা আ’লীগের কমিটিকে।
এ নিয়ে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোঃ সইদুল হকের সাথে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, এখানে আ’লীগ সর্মথিত অনেক মানুষ রয়েছে। এবারের কমিটি হচ্ছে ৭১ সদস্য বিশিষ্ট। সবাইকে কি কমিটিতে রাখা যাবে ? আর যারা বিগত সময়ে কমিটিতে ছিলেন তিনারা কি সব সময়েই জায়গা পাবে? নতুনরা কি জায়গা পাবে না। এবং এর মধ্যে অনেকে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, নৌকার বিপক্ষে নির্বাচন করেছে তাই বেশ কয়েকজন এবার বাদ পরেছে।
উপজেলা আ’লীগের সাবেক যুগ্ন সম্পাদক আনিসুর রহমান বাকী বলেন, সইদুল হক তার ভগ্নিপতিকে জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি চাচাতো ভাইদের সহ স্ত্রীকে সদস্য পদ দিয়েছেন। এছাড়াও আ’লীগের রাজনীতির সাথে সদ্য জড়িত এমন ব্যাক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদ দিয়েছেন। এ নেতা আরো বলেন, আমরা যারা বিএনপিজোট সরকারের আমলে নির্যাতিত কিন্তু তার আজ্ঞাবহ না। এ কারণেই আমাদের পদ বঞ্চিত করে নিজের মত কমিটি করে নিয়েছেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সইদুল হক।
তিনি আরো বলেন, ইতিপূর্বের কমিটি বিশ্লেষন করে দেখা গেছে, রানীশংকৈল উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগ কমিটিতে দুঃসময়ের দলের ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও এই উপজেলায় বেশ সুনামধন্য ত্যাগী কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা আ’লীগের রাজনীতি করে প্রয়াত হয়েছেন। তাদের আ’লীগ ও এলাকার জন্য অবদানের কথা এখনো মনে রেখেছে এলাকবাসী। যা এখনও বয়বৃদ্ধদের কাছে শুনতে পাওয়া যায়।
তাদের মধ্যে অন্যতম উপজেলা আ’লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মরহুম আলী আকবর এমপি আ’লীগের আমৃত্যু সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান, উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবুল কাশেম,উপজেলা আ’লীগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক নুরুল ইসলাম আফসার আলী, সহ আরও বেশ কয়েকজন।এসব ত্যাগী নেতাদের উন্নয়নের কথা যা এখনও শোনা যায় জনমুখে। জনগনের প্রতি তাদের ভালবাসা ও আ’লীগে তাদের অবদানের কথা এখনও জনমুখে ভেসে উঠে।
অথচ এসব পরিবারের মধ্যে আলী আকবর এমপির জ্যেষ্ঠ কন্যা সাবেক এমপি সেলিনা জাহান লিটা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের পরিবারে তিন জন সদস্যকে ছাড়া অন্যান্য প্রয়াত নেতাদের পরিবার থেকে কাউকে এবারে উপজেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। অথচ তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য এখনো রাজনীতিতে সক্রিয়।
মিজানুর রহমানের ছেলে বর্তমানে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না,তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। ১/১১ এর সময় আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে একাধিক মামলার আসামী ছিলেন।পরে অব্যশই কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিও নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রের রাজনীতি ছেড়ে এলাকায় এসে বাবার পথে রাজনীতি ধরেছেন । একইভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতে করে আসা। বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের আমলের নির্য়াতিত নেতা ও প্রয়াত আ’লীগ নেতা নুরুল ইসলামের ছেলে রুকুনুল ইসলাম ডলার। এছাড়াও মরহুম আবুল কাশেম,আফসার আলীর পরিবারের সদস্যরা রাজনীতে সক্রিয়ও থাকলেও তাদের এবারের কমিটিতে রাখা হয়নি। অথচ সদ্য রাজনীতি আসা ব্যাক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়েছেন উপজেলা আ’লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
এছাড়াও ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে উঠে আসা বিগত কমিটির যুগ্ন সম্পাদক আনিসুর রহমান বাকী উপজেলা যুবলীগের সাবেক সম্পাদক বাবর আলী উপজেলা আ’লীগের সাবেক সহ-সভাপতি প্রভাষক সফিকুল আলম আ’লীগ নেতা জেলা পরিষদের সদস্য এখলাসুর রহমান লিটন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আইয়ুব আলী সাবেক ভিপি রফিউল ইসলাম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নওরোজ কাউসার কানন ও সাবেক পৌর মেয়র উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর আলমগীর সরকারকেও কমিটিতে রাখা হয়নি। এদের মধ্যে সাবেক মেয়র আলমগীর সরকার উপজেলা আ’লীগের অনুষ্ঠিত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়ে হেরে যান।
পদ বঞ্চিত উপজেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক সম্পাদক বাবর আলী বলেন, যখন থেকে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি পদে সইদুল হক নির্বাচিত হন তখন থেকেই পুরাতন আ’লীগ নেতার সমর্থিত মানুষজন বিভক্ত হতে শুরু করে। তিনি আরো বলেন, এবারের কমিটিতে সভাপতির পরিবার ও আত্নীয় স্বজনদের মধ্যে থেকে ১৭ জনকে বিভিন্ন পদে তিনি জায়গা করে দিয়েছেন। এহেন স্বেচ্ছাচারিতায় রানীশংকৈল উপজেলা আ’লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছেন বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
পদবঞ্চিত নেতা রুকুনুল ইসলাম ডলার বলেন, বিগত নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে গিয়ে প্রার্র্থী হয়ে ভোট করেছেন ঘোষিত কমিটির সদস্য আবু সুলতান,আব্দুল কাদের। এছাড়াও নৌকার বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট করেছেন মহাদেব বসাক জিতেন্দ্র নাথ রায়সহ অনেকে তাদের কমিটিতে রাখা হলো। আর আমাদের দোষ কি তাহলে। এছাড়াও উপদেষ্টা কমিটিতেও পক্ষপাতিত্ব করেছেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি বলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, উপদেষ্টা কমিটিতে বাণিজ্যে করা হয়েছে। তাছাড়া পরবর্তীতে সইদুল হককে যারা অর্থনৈতিক সহযোগিতা করবে এমন অনেককেই তিনি উপজেলা কমিটিতে ও উপদেষ্টা কমিটিতে রেখেছেন।
জানতে চাইলে জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক দীপংক কুমার রায় গতকাল শনিবার দুপুরে মুঠোফোনে বলেন, উপজেলা থেকে যে কমিটি পাঠিয়েছি। আমরা অনুমোদন দিয়েছি। উপজেলার কমিটিতো আর আমরা পরিবর্তন করতে পারি না। নৌকার বিপক্ষে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে এমন ব্যক্তি কমিটিতে রয়েছে প্রশ্ন করলে তিনি কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।