সাধারণ কণ্ঠ থেকে সহজেই ভিন্ন করে নেওয়া যায় এমনই দুজন শিল্পী হৃদয় সৈকত এবং নোশিন আদিবা। দু’জনের শিল্পী হয়ে ওঠা দুই অঞ্চলে, দুই প্রকৃতির। কিন্তু গায়কীতে মিল নিগূঢ়! দু’জনই মেলোডি কণ্ঠের!
প্রকৃতিগতভাবে গড়ে ওঠা শিল্পী হৃদয় সৈকত
হবিগঞ্জের ছেলে হৃদয় সৈকতের মধ্যে অনেকটা প্রকৃতিগতভাবেই গানের প্রতিভা প্রকাশ পায়। ছেলেবেলায় যখন গান বোঝার মতো ক্ষমতা হয়নি। তখন থেকেই পারিবারিকভাবে সাংগীতিক আবহে বেড়ে উঠতে থাকে এই ছোট কিশোর। বাড়িতে বড় ভাই অসীম রায় ভালো গান করেন! মা সবিতা রায় ও গান করেন। বাড়িতে নিত্যদিন কীর্তন হতো। এসব দেখতে দেখতে সৈকত নিজের মধ্যে সংগীতকে খুঁজে পাওয়া শুরু করলো। বড় ভাই – অসীম রায় এর অনুপ্রেরণায় সংগীতকে সাথে নিয়ে পথ চলার ¯^প্ন দেখার সাধ করতে লাগলো সৈকত। কিন্তু বাবা মাকে গানের প্রতি তার আগ্রহ জানানোর পরও মা-বাবা গান নিয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে পারেন না। গান দিয়ে তো আর পেশা গড়া যায়না। পেশা হিসেবে গান এ যেন তাঁদের কাছে মানতে পারাটা ভীষণ কষ্টের। বাড়িতে গানচর্চার জন্য তখনও কোনো হারমোনিয়াম ছিল না। তাই স্কুলে ভালো গান গাইলেও হারমোনিয়াম বাজাতে না পারায় পুরস্কার পাওয়া হতো না সৈকতের। অবশেষে সব পিছুটান, সবার বিরুদ্ধে যেয়ে বড় ভাই-এর চেষ্টায় বাড়িতে অনেক দিন পর একটি হারমোনিয়াম এলো। প্রথম দিনেই সৈকত প্রবল আগ্রহের বশে ‘পাগল মন’ গানটি নিজে নিজে হারমোনিয়ামে তুলে ফেলল। সবাই তো অবাক! এ কী ছেলে! কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই হারমোনিয়ামে এই গান তুলতে পারলো কীভাবে! একদিনের মধ্যেই আরো কয়েকটি গান নোটে ফেলে দেয় সৈকত। এরপর থেকে আশ্চর্যজনকভাবে নিজে নিজেই সকল গান হারমোনিয়ামে নিঁখুতভাবে বাজাতে পারে সে। রক্তে যার গান তাকে আর কেউ থামাতে পারে? স্কুলের সকল গানের প্রতিযোগিতায় সে পুরস্কৃত হতে লাগলো। সকলের ভালোবাসা পেতে শুরু করলো। মা খুশি হয়ে বললেন ‘বাবা তোকে গানেই সঁইপা দিলাম’। বড় ভাই বললেন, আমাদের পরিবার থেকে তোমাকে আমরা গানের জন্য উৎসর্গ করলাম।
উচ্চ মাধ্যমিকে ঢাকার সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ভর্তি হলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি সকল গানের প্রতিযোগিতায় প্রথম হলেন। সকল শিক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এই ছেলেটি। এরই মধ্যে সাংস্কৃতিক নানাবিধ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে শুরু করে সৈকত। যেন গান ছাড়া সে আর কিছু বোঝে না। এরপর ওই কলেজের একজন শিক্ষকের হাত ধরে তার গানের জগতে আনুষ্ঠানিকভাবে পদার্পণ ঘটে। বর্তমানে’ গানকবি’ সুন্দরবন থিয়েটার’, প্রথম আলো বন্ধুসভা’র নিয়মিত শিল্পী হৃদয় সৈকত। এছাড়া ছায়ানটে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখছেন তিনি। ক্লাসিক্যাল ও মেলোডি সুরের গান পছন্দ তাঁর। সুর করেছেন এবং কণ্ঠ দিয়েছেন বেশ কিছু মৌলিক গানে। তাঁর ইচ্ছা গানের ধারায় একটি ¯^তন্ত্র রূপ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাঁর ¯^প্ন, গানের ভুবনে নিজেকে জনমানুষের শিল্পী হিসেবে পরিণত করা।
স্বতন্ত্র কণ্ঠের অধিকারী শিল্পী নোশিন আদিবা।
আড়ং ডেইরি চ্যানেল আই বাংলার গান ২০১৫’ এবং ‘ফিজ আপ চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ ২০১৭’-এর মতো কঠিন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গানের ভুবনে আসেন শিল্পী নোশিন আদিবা। স্বরগাম৫-এর লিড ভোকালিস্টও ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেয়ে নোশিন আদিবা। বর্তমানে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগে পড়ছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইচ্ছা আছে একটা মিউজিক্যাল একাডেমি খোলার যেখানে অ্যাডভান্স মিউজিক টেকনিকস বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে। এটি বাংলাদেশকে প্রফেশনাল মিউজিশিয়ান পেতে সাহায্য করবে।
আদিবা মূলত আধুনিক গান করেন। তবুও উর্বশী গানের সিঁড়ির ফোক গানে কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, গানটির ডেমো শুনেই ভালো লেগে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে হৃদয় সৈকত অত্যন্ত সাহস জুগিয়েছে। আর গানটির কথা, সুর, কম্পোজিশন এতোটাই সুন্দর যে আমি গাইবার সময় খুব অভিভূত হয়েছি। তবে এই সিজনেই আমি ড. মো. হারুনুর রশীদ-এর লেখা একটি আধুনিক গান সৈকত-এর সঙ্গে যৌথভাবে গেয়েছি। ওই গানটিও আমার মনের মতো।
উল্লেখ্য, কোন সে জাদু করিয়া’ গানটির গীতিকার জহিরুল ইসলাম বাদল; সুরকার হৃদয় সৈকত। মিউজিক কম্পোজিশন করেছেন এএইচ তূর্য। আগামী ০৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল ০৫টায় উর্বশী ফোরাম চ্যানেল থেকে গানটি অনএয়ার হবে।
