বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ দিনাজপুরের বীরগঞ্জে নৌকায় ঢেপা নদী পারা-পারের একমাত্র মাধ্যম এখন শুধুই কল্পনা আর স্মৃতি। একসময় পালতোলা নৌকার চলাচল করতো সারা বছর জুড়ে।আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস ভরা বর্ষাকাল মাঝি মল্লার ভাটিয়ালী আর পল্লীগিতি গানের সুরে সুরে ভরে উঠতো ঢেপা নদীর এপার-ওপার দুই কুল। সকাল থেকে রাত দুপুর পর্যন্ত চলত নৌকায় মানুষ ও ধান-চালসহ কৃষিপণ্য পারাপার করতো। পালতোলা নৌকা নিয়ে উত্তরের হিমালয়ের প্রদেশ থেকে সওদাগরেরা পূর্ণ বাহী নৌকায় বহন করতো মসলাসহ বিভিন্ন মালামাল। সওদাগরের হাজারো বাঁসের সোমারোহে নৌকা তৈরী করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ঢেপা নদী হয়ে ভাটিতে চলে যেত আর বাণিজ্য করত। এই নদী পথেই কাবলীওলারা কাপর-চোপরসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে বানিজ্য করতে আসতো। তারা ভাল্লুক-বানর ও বিষাক্ত সাপ নিয়ে আসতো মানুষকে খেলা দেখিয়ে আনন্দ দিয়ে টাকা রোজগার করত এবং তাবিজসহ বিভিন্ন রোগের ঔষুধ বিক্রি করতো। নদীর পানিতে ভেসে আসতো হাঙ্গর, কুমির, গরু, মহিষ, বাড়ী-ঘর, বিভিন্ন গাছ-পালা। আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস ভরা বর্ষাকাল শতশত নারী-পরুষ উৎসুক জনতা নদীর উভয় তীরে সকাল থেকে রাত দুপুর পর্যন্ত অধির আগ্রেহে অপেক্ষা করতো ওইসব দৃশ্য দেখার জন্য।বর্তমানে সারা বছর যেন নদীতে পানি শুন্য। হঠাৎ উত্তরের একসময় পাহাড়ী ঢল আর অতি বৃষ্টি ছাড়া নদীতে পানি দেখা মেলে না। নদীর দিকে তাকালেই দেখা যায় মাঝে মাঝে চর আর চিক চিক বালি। চাষীরা বর্তমানে নদীর বুকে হালচাষ করে ধান, গম, আলু, ভূট্টা, আদা, রশুন হলুদ, মরিচ, পেয়াজ, তরমুজ ও পাটসহ বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করছে। নদীতে এখন পুকুর ও ডোবা থেকে উঠে আসা মাছ ছাড়া নদীয়ালী মাছ দেখা মিলছে না। নদীতে পানি না থাকার কারণে মৎস্যজীবি হাজার হাজার পরিবার ঐতিহৃবাহী পেশা বদলিয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তাঁদের দুঃখ কষ্টের শেষ নেই। সাবেক সাংসদ ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আমিনুল ইসলাম এর ঢেপা নদীর ঐতিহ্য ধরে রাখতে স্লুইচগেটে অভায় আশ্রয় স্থাপন করেন। পরবর্তীতে ওই এলাকার সৌন্দর্য বজায় রেখে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলেন। বর্তমানে বীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোশাররফ হোসেন বাবুল এর প্রচেষ্টায় উক্ত স্থানটি ঢেপা নদীর ঐতিহ্য ফিরে পাচ্ছে।