বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর)প্রতিনিধিঃ যে মুহূর্তে ক্লিনিকে সিজারের দিকে ঝুঁকছে সন্তান সম্ভবা মায়েরা, ঠিক সে সময় নিরাপদ প্রসব সেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত রেখে চলেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। অন্যান্য সেবার পাশাপাশি কৈশোর বান্ধব সেবা ও নরমাল ডেলিভারী হওয়ায় বদলে গেছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চিত্র। গর্ভকালীন পরিচর্যা, নিরাপদ প্রসব, প্রজনন সেবায় প্রতিনিয়ত রেখে চলেছে অনন্য উদাহরণ। নিরাপদ প্রসবে নিয়মিত পরামর্শ দেয়া হচ্ছে মায়েদের। এখানে দিবারাতী ২৪ ঘণ্টা প্রসূতি মায়েরা আসেন নিরাপদে সন্তান প্রসবের জন্য। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বিনা খরচে সন্তান প্রসব শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফিরে যান। এতে সন্তুষ্ট সেবা গ্রহীতারাও। হঠাৎ কীভাবে কার উদ্যোগে বদলে গেল স্বাস্থ্যকেন্দ্রটির চিত্র। সেই মানুষটি হলেন উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাকিরুল ইসলাম। তার অকান্ত পরিশ্রম ও দিক নির্দেশনায় মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় টানা তৃতীয় বারের মত এবছরো বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক হিসেবে মো. শাহিনুর ইসলাম, ২০২০ইং সালে জেলা পযার্য়ে শ্রেষ্ঠ পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা হিসেবে টানা দুই বছর মোছা. সাবিনা ইয়াসমিন এবং জাতীয় পর্যায়ে দুই বার ও বিভাগীয় পর্যায়ে ছয় বার শ্রেষ্ঠ পরিবার কল্যাণ সহকারী হিসেবে মোছা. মরিয়ম বেগম নির্বাচিত হয়েছিলেন। এবছর বীরগঞ্জ উপজেলা প্রথমবারের মত জেলার শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাচিত হয়েছে বলে জানা যায়। পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা মিসেস সাবিনা ইয়াসমিন জানান, এখানে ২৪ ঘণ্টা নরমাল ডেলিভারি করা হয়। যখনই প্রসূতি আসেন, তখনই সেবা দেওয়া হয়। অনেক সময় গভীর রাতেও ঘুম থেকে উঠে সন্তান প্রসব করাতে হয়। তিনি আরো জানান, ইউনিয়নের গর্ভবতী মায়েদের তথ্য রয়েছে তাঁদের কাছে। মাঠপর্যায়ে থাকা কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গর্ভবতী মায়েদের নাম-ঠিকানা ও মুঠোফোন নম্বর নিয়ে আসেন। এরপর ওয়ার্ড ও গ্রামভিত্তিক গর্ভবতী ও প্রসবযোগ্য মায়েদের নিয়ে মাসিক বৈঠক করা হয়।নিজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ খালেক সরকার জানান, বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি সেবাবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারী করার জন্য আমরা মা সমাবেশ সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সন্তান সম্ভবা মায়েদের উদ্বুদ্ধ করি। প্রসূতি মায়েদের কথা চিন্তা করে এ বছরে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়নে নরমাল ডেলিভারির পরে মা ও নবজাতকদেরকে জন্য অন্তত তিনটি বেড বা শয্যা রাখার জন্য পোস্ট ডেলিভারি কক্ষ তৈরি করা সহ ২০১৭ সালে ১৯ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স কেনা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কর্তৃক মা ও শিশুস্বাস্থ্য কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখায় রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে ২০১৮, ২০২০ ইং সালে এই ইউনিয়ন শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে। এবারো রংপুর বিভাগীয় পর্যায়ে নিজপাড়া ইউনিয়ন শ্রেষ্ঠ হয়েছেন বলে তিনি জানান। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য জনাব মনোরঞ্জন শীল গোপাল, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আমিনুল ইসলাম ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের মাধ্যমে ২০২০ইং সালের ১৩ জুলাই নিজপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নিরাপদ প্রসব কক্ষ উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে প্রসূতি মায়েদের সন্তান প্রসব সেবাদান শুরু করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য মহোদয় ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মহোদয় ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান উক্ত কেন্দ্রে মতবিনিময় সভায় এলাকার মানুষের কাছে নরমাল ডেলিভারী করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন যার ফলে এই প্রোগ্রাম একটি আলাদা মাত্রা পায়। এরই ফলে নিজপাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সর্বশেষ ছয় মাসে নরমাল ডেলিভারী হয়েছে ১৬ টি। শুধু বেতনভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই নন এলাকাবাসীর সচেতনতা বৃদ্ধি ও ভালো সেবা নিশ্চিতে কাজ করছেন স্থানীয় সমাজকর্মীরাও। সেবার মানসিকতা নিয়ে কাজ করার কারণেই, স্থানীয়দের এ কেন্দ্রের প্রতি আস্থা বেড়েছে ও গত মার্চ মাসের ২৪ তারিখে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাও সফলতা দেখে গেছেন। যারা এই মহামারী করোনাকালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই কাজগুলো করছেন তাদের তিনি শ্রদ্ধা জানান।তিনি আরো বলেন, এই প্রোগ্রামটি চলমান রাখার জন্য অন্তত তিনজন সিএসবিএ/ মিডওয়াইভস দরকার। সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো.আমিনুল ইসলাম জানান,, বদলে গেছে নিজপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম। প্রসূতি সেবাদানে এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি আজ অনন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের অর্থায়নে গতবছরের জানুয়ারি মাসে নিজপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের সীমানা প্রাচীর নিমার্ণ ও গেট করা সহ একই সালের ৭জুলাই নরমাল ডেলিভারি লক্ষ্যে ৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নিজপাড়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র সহ ৪টি ইউনিয়নে ২৬ প্রকারের সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। পরবর্তীতে অন্যান্য ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সরঞ্জাম সহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে খুব শীঘ্রই প্রতিটি ইউনিয়নে প্রসূতিদের কাছে নিরাপদ সন্তান প্রসবের এক আপন ঠিকানা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।