বিকাশ ঘোষ, বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ – দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী ডাক্তার খানার মাঠটি প্রায় ৫০ বছর ধরে পরিত্যাক্ত হয়ে পড়ে থাকায় বেদখল হতে চলছে। আর এতে করে সম্পত্তিটি নিজেদের দখলে নিতে তৎপর একটি সুবিধাভোগী চক্র। বীরগঞ্জ পৌর শহরের বিজয় চত্বরের পাশেই ১৮৯০ সালে থানা গঠনকালে ১৮৭টি মৌজার জনগনের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের ধারে জেলা পরিষদের ২ দশমিক ৩৭ একর জমিতে চিকিৎসা সেবার জন্য ডাক্তারখানা নির্মাণ করে তৎকালিন বৃটিশ সরকার। সেখানে ছিলো একটি চিকিৎসক চেম্বার, চিকিৎসকের থাকার জন্য একটি কোয়ার্টার ও একটি কম্পাউন্ডার(চিকিৎসকের সহকারি) কোয়ার্টার। স্বাধীনতার পরে সরকার সুজালপুর ইউনিয়নের চাকাই মৌজায় ৩১ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স (চাকাই হাসপাতাল) নির্মাণ করে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি নির্মাণের পর পুরাতন ডাক্তারখানাটি পরিত্যাক্ত হয়। পরিত্যাক্ত থাকায় একটি কোয়ার্টার দীর্ঘদিন কুষ্ঠ চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হতো। পুরো এলাকাটি অবহেলা আর অযতেœ পড়ে থাকায় ডাক্তার খানা মাঠটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়। রাতের অন্ধকারে ইট, কাঠ, টিন, লোহার পিলারসহ যাবতীয় মালামাল লুটের ফলে তা নিশ্চিহৃ হয়ে যায়। পড়ে থাকা মাঠটি এলকার লোকজনের কাছে পরিচিতি পায় ডাক্তারখানার মাঠ হিসেবে। যেখানে মাঝে মাঝে সভা সমাবেশ হতো। বর্তমানে পরিত্যাক্ত মাঠটির পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে ২ দিকে মহাসড়ক ও বীরগঞ্জ-পীরগঞ্জ সড়কের ধারে দখল করে দোকান বসালেও ফাঁকা যায়গায় কার মাইক্রো রেখে মাইক্রোষ্টান্ড হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে। বাকী ফাঁকা জায়গা পরিণত হয়েছে দোকানগুলোর ময়লা আবর্জনা ও জনগনের মল-মূত্রের ভাগাড়ে। ফলে এলাকাটি পরিণত হয়েছে ছিচকে চোর ও মাদক সেবীদের নিরাপদ অভয়ারণ্যে। সরকারী জায়গা হলেও একশ্রেণীর অসাধু লোক মাঠটি দখল করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যাবসায়ীদেরকে ঘরের পজিশন ভাড়া দিয়ে নিজেদের মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে। দোকানগুলির একেকটির ভাড়া ৫শত হতে ৮ হাজার টাকা পযর্ন্ত। ঘরের হাত বদল হচ্ছে ১ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ টাকায়। ২/১ জন দিনাজপুর জেলা পরিষদের কাছ থেকে লিজ নিয়ে ব্যবসা করলেও বেশীরভাগ জায়গা দখলদারদের হাতে রয়েছে। জেলা পরিষদ ও স্বাস্থ্য বিভাগের কিছু অসৎ কর্মচারী ও একশ্রেণীর দালাল ব্যাবসায়ীদেরকে কাগজ করে দেওয়ার নামেও হাতিয়ে নিয়েছে মোটা অংকের টাকা বলে অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষ বহুতল সুপার মার্কেট নির্মাণের দাবী করলেও স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা পরিষদের মালিকানা নিয়ে টানা টানিতে দাবীপূর্ণ হয়নি। বর্তমান সরকারের দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপালের হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য বিভাগ তাদের দাবী প্রত্যাহার করে নেয়। জেলা পরিষদ মালিকানা ফিরে পেয়ে প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যায়ে ”বহুতল সুপার মার্কেট” নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। গত ২০১০ সালের ২৬ অক্টোবর মার্কেট নির্মানের ভিত্তিপ্রস্তর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করেন। যা পরে আর আলোর মুখ দেখেনি। বীরগঞ্জ পৌর মেয়র মোঃ মোশারফ হোসেন বাবুল জানান, মহাসড়কের ধারে পৌর শহরের প্রানকেন্দ্রে ডাক্তারখানার মাঠ জায়গাটি জেলা পরিষদের কাছে পৌরসভার জন্য চাওয়া হয়েছে। পৌরসভা উক্ত জায়গাটি পেলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাকে সমন্নত রাখতে জনগনের স্বার্থে পরিকল্পনা মাফিক বহুতল সুপার মার্কেট নির্মাণসহ সরকার ও পৌরসভার রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ব্যাপারে এলাকার সচেতন মহল দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের জাতীয় সাংসদ মনোরঞ্জন শীল গোপালের আশু হস্তক্ষেপ কামনাসহ সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জোর দাবী জানান।