ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: লেখাপড়া করে শুধু যে চাকরির পেছনে ছুটেলে বা চাকরিই সফলতা এনে দেবে এরকম ভাবাটা ভুল। লেখাপড়া শেষ করে নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে চাইলে অন্যভাবেও সফল হওয়া যায়। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ ঠাকুরগাঁওয়ের সফল উদ্যোক্তা মোস্তাফিজুর রহমান শিমুল।
শিমুলের তৈরিকৃত টাইলস এখন নিজ জেলার গণ্ডি পেরিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। ব্যবসা শুরুর আট মাসেই পাওয়া ব্যাপক সাফল্য আজ হাসি ফুটিয়েছে শিমুল সহ আরও অনেকের মুখে। এখন আর চাকরির পেছনে ছোটেনা শিমুল। এখন তিনি চাকরি দিচ্ছেন।
ঠাকুরগাঁও শহরের শান্তিনগর এলাকায় ছোটো আকারে গড়ে উঠা শিমুলের ব্লক পার্কিং টাইলসের কারখানাটি উকি দিচ্ছে বিরাট সম্ভাবনার। বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়াটা এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র বলে মনে করছেন এই উদ্যোক্তা।
শিমুল জানান, ২০১১ সালে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করে তিন বছর চাকরির পেছনে ছুটেও লাভ হয়নি। এরকম শিক্ষিত বেকার থাকাটাই নিজের কাছে নিজেকে বোঝা বলে মনে হচ্ছিলো। তাই শেষে হতাশ হয়ে ২০১৬ সালে প্রবাসে পারি জমান তিনি। শিমুল কাতারের একটি পার্কিং টাইলসের কম্পানিতে চাকুরী করতেন।
শিমুল বলেন, আমি সেই টাইলসের কম্পানিতে প্রায় তিন বছর কাজ করেছি। খেয়াল করি যে, কারখানায় তৈরিকৃত পার্কিং টাইলসে ব্যবহৃত প্রধান কাচামাল সিমেন্ট, বালু ও নুড়ি পাথর আমাদের দেশে তথা নিজ এলাকাতেই বেশ সহজলভ্য। ছোটো আকারে শুরু করতে পুঁজিও তেমন লাগছে না। তখনি দেশে ফিরে এমন একটি কারখানা গড়ে তুলার সিদ্ধান্ত স্থির করি।
২০১৯ সালে দেশে ফিরেই এই কারখানা দেওয়ার পরিবেশ যাচাই করতে থাকেন শিমুল। দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা পার্কিং টাইলসের কারখানা ঘুরে দেখেন। বাজারে চাহিদা বুঝার চেষ্টা করেন। এতে করে কাতার ভিত্তিক প্রযুক্তি দেশের জন্যে সঠিক বলে মনে হয় তার।
শিমুল বলেন, ২০২০ থেকে কারখানা দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দুই লক্ষ টাকা পুঁজি নিয়ে ২০২১ এর পহেলা জানুয়ারিতে বাণিজ্যিক ভাবে উৎপাদ শুরু করি পার্কিং টাইলস। নিজ জেলায় ব্যাপক সাড়া পাই। আস্তে আস্তে পার্শ্ববর্তী জেলায় যাওয়া শুরু করে আমার পণ্য। তবে এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অর্ডার পাচ্ছি।
পার্কিং টাইলসের কারখানায় কর্মরত শ্রমিক আজম আলী শারীরিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় তার আগের পেশা রিক্সা চালাতে বেশ কষ্ট হতো। তবে তিনি জানান, এক বন্ধুর কাছে জানতে পেরে তিনি শিমুলের কারখানায় কাজ নিয়েছেন। হালকা কাজে ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে তার মতো বাকিরাও বেশ খুশী।
প্রথমে ১ জন শ্রমিককে কাজ শিখিয়ে তাকে নিয়ে পথচলা শুরু শিমুলের। এখন এই কারখানায় ১৭ জন শ্রমিক কাজ করছে। সরকারি সহযোগীতা পেলে এই কারখানাটি আরও বৃহৎ আকারে করলে ১৫০/২০০ শ্রমীকের কর্মসংস্থান তৈরি করা সম্ভব বলে মনে করেন এই উদ্যোক্তা।
শিমুলকে সরকারিভাবে সহযোগীতা করে তার কাজে উৎসাহ দেওয়া উচিত বলে জানান ঠাকুরগাঁও চেম্বার অফ কমার্সের পরিচালক মামুনুর রশিদ। তিনি জানান, শিমুলের মাধ্যমে বৃহত্তম কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। তার সফলতা অন্যান্য তরুণদেরকে উদ্যোক্তা হতে উৎসাহীত করবে।
ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরীর উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ নূরেল আলম জানান, আমরা চাই ভালো ভালো উদ্যোক্তা সৃষ্টি হোক। শিমুলের উদ্যােগ বেশ সম্ভাবনাময়। তার যেকো সহযোগীতায় আমরা পাশে থাকবো।