রবিবার , ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেঁতুলিয়ায় অর্গানিক সবজি চাষে ঝুঁকছে কৃষক

প্রতিবেদক
ঠাকুরাগাঁও সংবাদ
ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২২ ৬:৪১ অপরাহ্ণ

তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি :
কৃষিবান্ধব সরকার রাসায়নিক সার পরিহার করে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছে। দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় প্রাকৃতিকভাবে বিষমুক্ত শাক-সবজি আবাদ হচ্ছে। উপজেলার ৫ শতাধিক সবজি চাষিকে কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে প্রশিক্ষন দেয়া হয়েছে। এবছর রবি মৌসুমে দেড়শ কৃষক প্রায় ২’শ বিঘা জমিতে প্রায় ৩ হাজার মেট্রিক টন পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদন হয়েছে। কৃষকদের উৎপাদিত স্বাস্থ্যসম্মত এসব সবজিতে বাড়ছে চাহিদা, লাভবান হচ্ছেন তারা।

চিকিৎসকরা বলছেন, কিটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে বিষযুক্ত শাক-সবজিতে মারাত্মকভাবে বাড়ছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি। এসব উৎপাদিত সবজি খেয়ে মানুষের দেহে বিভিন্ন প্রকার রোগ-বালাই সৃষ্টি হচ্ছে। কৃষকরা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও চরম হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে ভোক্তাদের। অন্যদিকে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারে পরিবেশ দূষণ, প্রকৃতির উপকারী পোকা মাকড় ধ্বংস হওয়ায় পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। যার কারণে কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক উপায়ে সবজি উৎপাদনের জন্য চাষিদের মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষনও দেয়া হচ্ছে। কৃষকদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কৃষক ক্লাব। ক্লাবের মাধ্যমে সংগঠিত হয়ে চাষিরা নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন। এই সবজি বিক্রীর জন্য তেঁতুলিয়া বাজারে গড়ে তোলা হয়েছে বিষমুক্ত সবজির দোকান।

উপজেলা কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ অফিসার মোতালেব হোসেন জানান, মূলত শীতকালেই সবজি উৎপাদন বেশি হয়ে থাকে। তবে সবজির চাহিদা তো সারাবছরই। তাই ২০১৮ সাল থেকে প্রান্তিক কৃষকদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষন দিয়ে সারাবছরই জৈব সার ব্যবহার করে বিষমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে। এজন্য কৃষক মাঠ স্কুল তৈরি করে কৃষকদের বাড়িতেই পরিচালনা করা হয়। নির্দিষ্ট গ্রামের চাষিরা পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনের প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরাই ক্লাব গঠনের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নিজেদের আত্মনির্ভরতা তৈরি করছেন।

স্থানীয় চাষিরা বলছেন, সবজি উৎপাদনে রাসায়নিক সারের বিপরীতে জৈব সার ব্যবহার করছেন। এজন্য তারা গোবর, গাছের লতাপাতা ব্যবহার করে কম্পোষ্ট তৈরি করে জৈব সার উৎপাদন করছেন। কিটনাশকের পরিবর্তে তারা নিজেরাই জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করছেন। পেয়াজ রসুনের নির্যাস, ভাট ফুলের নির্যাস, নিম পাতার নির্যাসসহ আরও অনেক ধরনের উদ্ভিত থেকে তারা নির্যাস তৈরী করে সবজি খেতে স্প্রে করে থাকেন। পোকা মাকড়ের সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য তারা হাত জাল ব্যবহার করেন। ফোরমোন ফাঁদে স্ত্রী পোকার গন্ধ যুক্ত করেন। এই গন্ধ পেয়ে অন্যান্য পোকারা এই ফাঁদে আটকে যায়। চাষিরা বলছেন পরিবেশ বান্ধব সবজি উৎপাদনে খরচ কম। ফলনও ভালো হয়।

তারা আরও জানান, জৈব সার ব্যবহারে সবজি পোকায় নষ্ট করতে পারেনি, ফলনও ভালো। এ বছর লালশাক, ডাটাশাক, সীম, মরিচ, পেয়াজ, রসুন, বেগুন,ফুল কপি, বাঁধা কপি, লাউ, মিষ্টিকুমড়ো, সহ আরও নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন। এসব সবজি উৎপাদন করে তারা নির্ধারিত দোকানে পৌছে দেন । বিষমুক্ত সবজি চাষে শুধু পুরুষরা নয় নারী কৃষকরাও এগিয়ে এসেছে। তারা সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি বাড়ির আশপাশে এবং আঙ্গীনা জুড়ে নানা ধরনের সবজি উৎপাদন করছেন। কৃষি বিভাগের সার্বিক সহযোগিতা ও পরামর্শে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে উৎসাহিত হয়ে সফলতা পাচ্ছেন।

দর্জিপাড়া বাগানবাড়ীর কৃষাণী হালিমা বেগম জানান, কৃষক মাঠ স্কুলে প্রশিক্ষন নিয়ে এবার বাড়ির পাশের ১৫ শতক জমিতে লাউ এবং মিষ্টি কুমড়ো চাষ করি। আমার ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। আমার নিজের পোষা ছাগল গরুর গোবর ব্যবহার করেছি। আর ভাটগাছের পাতা থেকে রস বানিয়ে গাছে ছিটিয়েছি।

শারিয়ালজোত এলাকার কৃষক শুকুর আলী জানান, আমি ৩৩শতক জায়গায় সবজি আবাদ করেছি। কোনো কীটনাশক ও রাসায়নিক ব্যবহার না করেই ফেরোমন পদ্ধতিতে ক্ষতিকর পোকা নিধন করে এ সবজি উৎপাদন করছি। এতে করে আমার দেড়লাখ টাকা লাভ হয়েছে।

তেঁতুলিয়া চৌরাস্তা বাজারের বিষমুক্ত সবজি বিক্রেতা হাসিবুল জানান, রাসায়নিক-কিটনাশক সার দেয়া উৎপাদিত শাক-সবজি পরিহার করে জৈব সারে আবাদকৃত সবজি বিক্রি করছি। দাম একটু বেশি হলেও দিনদিন ক্রেতা বাড়ছে, বিক্রি হচ্ছে ভালো।

এ প্রসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলামের সাথে। তিনি জানান, আমরা বিষাক্ত খাবার খেতে খেতে নানান রোগবালাইয়ে শিকার হচ্ছি। আমি চেষ্টা করছি, নিজের আবাদের পাশাপাশি বাজার থেকে নিরাপদ বিষমুক্ত সবজি কিনতে। এটা যেমন স্বাস্থ্যসম্মত, সুস্বাধু ও উপকারি বটে। এরকম সবারই করা উচিত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, নিরাপদ খাদ্য মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। আমরা নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য থেকে পিছিয়ে আছি। এ চাহিদা পূরণের জন্য এটি একটি উত্তম পন্থা। আমরা নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করার জন্য সবজি চাষিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিচ্ছি। তাদের সংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে কৃষক ক্লাব গঠিত হচ্ছে। এতে তারা নিজেরা সমৃদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি অন্যান্য কৃষকরাও নিরাপদ সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।

সর্বশেষ - ঠাকুরগাঁও

আপনার জন্য নির্বাচিত

ফুলবাড়ীতে আলুচাষে লাভের মুখ দেখছেন চাষিরা

দিনাজপুরে নাসিব এর উদ্যোগে উদ্যোক্তা কর্মশালায় এমপি জুঁই

দিনাজপুরে ওয়ার্ল্ড ভিশনের আয়োজনে শিশুর প্রতি জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতা ও শিশু শ্রম প্রতিরোধে সামাজিক জাগরণ-হান্ড্রেড হিরোজ ফলোআপ

বিশ্বজুড়ে বিপর্যয় ডেকে আনছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট

হরিপুরে নানা কর্মসুচিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালিত

বীরগঞ্জে সরিষা চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা

ইয়াবা ব্যবসায়ী সোহেল রানা ঠাকুরগাঁও ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতার!

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘কফিনবন্দি বাংলাদেশ’ নাটক মঞ্চায়ন

হরিপুরে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান দিবস পালিত

পঞ্চগড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ শুরু তেঁতুলিয়ায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা নামল সিঙ্গেল ডিজিটে