তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
উত্তরের সীমান্তঘেষা নদী মহানন্দা। এ নদীতে পাথর তুলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের অপরিকল্পিতভাবে পাথর উত্তোলনে নদীর তীর ভাঙ্গনের কারণে ফসলি জমি আমবাগান, চাবাগানসহ একরের পর একর জমি ক্ষতিগ্রস্তের পথে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও নদীর তীর সংরক্ষণের স্বার্থে মহানন্দার এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে পাথর তোলা বন্ধ ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মহানন্দার তীরবর্তী এলাকায় পাথর উত্তোলনের ফলে পুরনো ডাকবাংলো ভবন, পিকনিক কর্ণার, কেন্দ্রীয় গোরস্থান, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ, মডেল থানা ভবন, পুরাতন বাজার, শিব মন্দিরসহ প্রায় ৭০০ একর আবাদি জমি ভেঙে নদীর সঙ্গে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় গত ৮ মার্চ একটি চিঠির মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। এতে বেকার হয়ে পড়েছে হাজারও শ্রমিক ও ব্যবসায়ী।
কিন্তু পাথর উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিরাজ করছে উত্তেজনা পরিস্থিতি। জীবিকার তাগিতে প্রশাসনের মুখোমুখিতে প্রতিবাদ করেছে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা বলছেন, এ নদীর পাথরেই চলে তাদের জীবিকা। চলে পরিবারের মৌলিক চাহিদা। একদিন নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকলে জুটে না পরিবারের মুখে। এ কারণে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই শুক্রবার সকালে পাথর তুলতে নদীতে নেমে যান তারা। শনিবারও সকালে পাথর তুলতে দেখা যায় শ্রমিকদের।
পাথর বালি সমিতির সাধারন সম্পাদক তৌহিদ হাসান তুহিন জানান, মহানন্দা নদীর এই এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক পাথর উত্তোলন করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু হঠাৎ করে পাথর উত্তোলন বন্ধ করে দেয়ায় বিপাকে পড়েছে এসব শ্রমিকরা। এ নিয়ে উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানগণের সাথে কথা বলেছি, উনারা সময় নিয়েছেন। যদি না হয় তাহলে বৃহৎ আন্দোলনে নামবো।
ডাকবাংলো থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সিসি বøক নির্মাণ বাঁধটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হুমকির মুখে পড়েছে। এভাবে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন চলতে থাকলে মহানন্দা নদীতে ভাঙন সৃষ্টি হবে। অদূর ভবিষ্যতে মূল শহরও হুমকির মুখে পড়বে। অন্যদিকে নদী হারিয়ে ফেলছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
উপজেলা প্রশাসনের অভিযোগ, নদীতে পাথর উত্তোলনকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। গত ২২ ফেব্রæয়ারি দুপুরে সদর ইউনিয়নের ঈদগাহ্’র সীমান্ত পিলার ৪৪৩/১৩ এস হতে ভারতের ১৭৬ বিবেকানন্দ বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দল বাংলাদেশি শ্রমিকদের ধাওয়াসহ সতর্কপূর্বক ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। বিষয়টি গুরুত্ব দিতে পাথর উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনার চিঠি সরাসরি পাঠানো হলেও অদৃশ্য কারণে গ্রহণ করেননি বিজিবি তেঁতুলিয়া কোম্পানি সদর। পরে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দেওয়া হয়। বিজিবি বলছে, এখনো তারা কোনো চিঠি পাননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানান, ডাকবাংলো থেকে পুরাতন বাজার পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর রক্ষার্থে বøক নির্মাণ করে প্রতিরোধ করছি। কিন্তু পাথর উত্তোলনের কারণে এসব স্থাপনাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়। এ জন্য তড়িৎভাবে সার্ভে টিম পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়ার ইউএনওর সাথে কথা হয়েছে।