এবার বৃষ্টির আশায় নেচে-গেয়ে মহাধুমধামে দিনাজপুর শহরের হিরা বাগান রক্ষাকালী মন্দিরে সনাতন ধর্মের দেশাচার (হিন্দু) নিয়মে ব্যাঙের বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রায় পাঁচ শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথি ছিল।
শুক্রবার দিবাগত সন্ধা সাড়ে ৭টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত দিনাজপুর শহরের রাজবাড়ী চত্তরের হিরা বাগান রক্ষাকালী মন্দিরে এ ব্যাঙের বিয়ে চলে।
এ বিয়েতে ছায়ামন্ডপ, পুষ্পমাল্য, গায়ে হলুদ, আশীর্বাদের ধান-দূর্বা, খাওয়ার আয়োজনসহ সব ব্যবস্থাই ছিল। বিয়ের বাজনা, সাদনা তলায় পুরোহিতের মন্ত্রপাঠ, সাতপাকে বাঁধা, মালাবদল, সিঁদুরদান সনাতন ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুযায়ী সব আয়োজনের মধ্যে হলো এ ব্যাঙের বিয়ে।
আয়েজকরা জানান, গত সাতদিন ধরে চলে বিয়ের প্রস্তুতি। রাজবাড়ীতে বসবাসকারী পরিবারের শিশুরা সাতদিন আগে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেচে-গেয়ে টাকা, চাল, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও তেল ইত্যাদি সংগ্রহ করে। এ সময় প্রতিটি বাড়িতে বিয়েতে আসার দাওয়াত দেওয়া হয়। শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে মানুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে আসতে থাকে। কলা গাছ ও ফুল দিয়ে সাজানো বিয়ের ছায়া মন্ডপে রাত ৮টার দিকে বর ভানু সরকারকে নিয়ে বরের মা সুমনা সরকার ও কনে মতিকে নিয়ে কনের মা আল্পনা মহন্ত হাজির হন। রঙ-কাদা মেখে শুরু হয় নাচ-গান। পাশেই চলে বড় বড় ডেকে রান্না। আমন্ত্রিত অতিথিরা বর কনেকে দেখে উপহার দিয়ে খিচুড়ি খেয়ে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।
১০১ টাকা প্রতীকী পণে বিয়ে পড়ান হিরা বাগান রক্ষাকালী মন্দিরের পুরোহিত নারায়ন চন্দ্র ঝাঁ। তিনি বলেন, অনাবৃষ্টি ও খরা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে শিশুরা এ ব্যাঙের বিয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করলেও পরে সেটি উৎসবে রূপ নেয়। আমাদের বিশ্বাস এ ব্যাঙের বিয়ের মধ্য দিয়ে অনাবৃষ্টি ও খরা কেটে যাবে। সেই বিশ্বাস থেকেই এই আয়োজন করা হয়।
বর-কনের মায়েরা বলেন, খরা থেকে মুক্তি পেতে এবং বৃষ্টির আশায় এ আয়োজন। অনাবৃষ্টির কবলে পড়লে তারা বৃষ্টির জন্য ব্যাঙের বিয়ে দিয়ে থাকেন। আর এই রীতি শতবর্ষ আগে থেকেই চলে আসছে। হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ণের দেশাচারে বর্ণিত বৃষ্টির দেবতাকে খুশি করার জন্য সেই সময় থেকে ব্যাঙের বিয়ের প্রচলন হয়।
শুক্রবার ছিল আষাঢ় মাসের শেষ দিন। কিন্তু বৃষ্টি নেই। জমিতে পানি নেই। আমন চারা রোপণ করা যাচ্ছে না। আবার যে জমিগুলোতে চারা রোপণ করা হয়েছে, সে জমিগুলো পানির অভাবে ফেটে চৌচির। অনেকে শ্যালো মেশিন দিয়ে ক্ষেতে পানি দিচ্ছেন। এ কারণে বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের এ আয়োজন করা হয় বলে আয়োজকরাও জানান।