পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবিতে গতকাল মঙ্গলবার আরও ১৭টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে নৌ দূর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাড়াল ৬৮ জনে। এদের মধ্যে নারী ৩১ জন, শিশু ২০ জন ও পুরুষ ১৭ জন। মঙ্গলবার উদ্ধার হওয়া ১৭টি মরদেহের মধ্যে ১১ জনের নাম জানা গেছে। তারা হলো শৈল বালা (৫১), সনেকা রাণী (৫৫), হরি কিশোর (৪৫), শিল্টু বর্মন (৩২), মহেন চন্দ্র (৩০), ভ‚মিকা রায় পুজা (১৫), আঁখি রাণী (১০), সুমি রাণী (৩৮), পলাশ চন্দ্র (১৫), ধৃতি রাণী (১০) ও সজিব রায় (১০)। এখনও নিখোঁজ রয়েছে ২০ জনের বেশি।
উদ্ধার অভিযানের তৃতীয় দিনে গতকাল সকাল থেকে উদ্ধার অভিযানে নামে ফায়ার সার্ভিসের সাথে স্থানীয় উদ্ধাকারীরা। দূর্ঘটনাস্থলের ভাটি অংশ থেকে একে একে উদ্ধার হতে থাকে মরদেহ। সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয় ১৭টি মরদেহ। দূর্ঘটনার নিহত স্বজনদের দাবি ধীর গতিতে উদ্ধার কাজ চলার কারণে এখনও অনেক মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। স্থানীয় উদ্ধারকারীরা জানান, মরদেহ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দলের কোন অবদান নেই। স্থানীয়রাই নিজ উদ্যোগে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। হাত ধরে কয়েকজন দল বেঁধে চিরুণী অভিযান চালাচ্ছেন স্থানীয় উদ্ধারকারীরা। তারা অভিযোগ করেছেন সকাল থেকে সারাদিন তারা উদ্ধার কাজ চালালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের কোন ধরণের খাবার ও পানি সরবরাহ করছে না।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই নিখোঁজ স্বজনের মরদেহের খোঁজে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাট ও এর আশপাশের এলাকা এবং মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদে খোলা তথ্যকেন্দ্রে ভিড় করতে থাকে। স্বজন হারারা বলছেন, এখন আর জীবিত উদ্ধারের সুযোগ নেই। তিনদিন ধরে লাশের জন্য হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছেন তারা। তারা তাদের স্বজনের মরদেহটি দ্রæত উদ্ধার করে দেয়ার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
তথ্যকেন্দ্রের সামনে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে গত দু’দিন ধরে অপেক্ষা করছেন বোদা উপজেলার মাড়েয়া কাউয়াখাল গ্রামের সন্তোষ কুমার। তিনি জানান, ওই দিন নৌকায় তার পুত্রবধূ সুমিত্রা ও নাতি সজিব (৭) ছিল। পুত্রবধুর লাশ পেলেও এখনও নাতির লাশ খুঁজে পাননি তিনি।
বোদা উপজেলার মাড়েয়া ফুটকিবাড়ী এলাকার জয় জানান, রোববার বোদেশ্বরী মন্দিরে যাওয়ার জন্য আমার ৭ জন আত্মিয় উঠেছিল। শুরুতেই একটি শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সে সুস্থ্য হওয়ার পর তাকে বাড়িতে এনেছি। স্থানীয় উদ্ধারকারীরা ৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। ফায়ার সার্ভিস কোন কাজ করেনি। তারা আমাদের কোন উপকার করছেনা। এখনো একজন শিশু নিখোঁজ রয়েছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপংকর কুমার রায় জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনদিনে সর্বমোট ৬৮ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বোদা উপজেলার ৪৫ জন, দেবীগঞ্জ উপজেলার ১৭ জন, আটোয়ারী উপজেলার ২ জন, পঞ্চগড় সদরের ১ জন এবং ঠাকুরগাঁও সদরের ৩ জন। তিনি আরও জানান, আমাদের তালিকা অনুযায়ী ৪ জন নিখোঁজ রয়েছে। এ কারণে বুধবারও উদ্ধার অভিযান চলবে। #