মরহুম মুক্তিযোদ্ধা পিতা আব্দুল আজিজকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অর্ন্তভুক্ত, ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা প্রদানের দাবীতে সংবাদ সম্মেলন করলেন দিনাজপুর পৌরসভার বালুবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা অসহায় কন্যা রুকসানা পারভীন।
শনিবার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শহরের উত্তর বালুবাড়ী (পানির ট্যাংকি মোড়) এলাকার বাসিন্দা মৃত আব্দুল আজিজ সিদ্দিকীর কন্যা রুকসানা পারভীন। এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার বাবা আব্দুল আজিজ সিদ্দিকী একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি মুক্তিযোদ্ধার জন্য সরকার কর্তৃক স্বীকৃতি কিংবা সহযোগিতা ভোগ করতে পারেন নাই। ১৯৭১ সালে তিনি ছাত্র অবস্থায় পড়ালেখা বাদ দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। ১৯৭১ সালের ৮আগষ্ট তিনি ভারতের ইয়ুথ রিসিপশন ও ট্রেনিং ক্যাম্পে যান এবং তিন মাস সামরিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। প্রশিক্ষণ শেষে হামজাপুর ক্যাম্পের ৭নং সেক্টর অধীনে থাকা সর্বমঙ্গলা অপারেশন ক্যাম্পের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে কৃতিত্বের অবদান রাখেন। আমার বাবার সাব-সেক্টর হামজাপুরের সনদ নম্বর এম/এফ ১০৫৩। যুদ্ধ শেষে সর্বমঙ্গলা অপারেশন ক্যাম্পে অস্ত্র জমা দেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বেসরকারী চাকুরিতে কর্মরত থাকার কারনে আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধার তালিকায় সময়মত নাম তালিকাভ‚ক্ত করতে পারেননি। পরবর্তীতে সরকারী উদ্দীপনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভ‚ক্তি করন, মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রম চালু হওয়ায় আমার পিতা বিভিন্ন সরকারী দপ্তরে দিনের পর দিন ধর্ণা ধরেন মুক্তিযুদ্ধের তালিকায় নাম অর্ন্তভ‚ক্তির জন্য। প্রতিটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কার্যক্রম প্রক্রিয়ার তালিকায় আমার পিতার নাম রয়েছে। সরকারী নির্দেশনা মোতাবেক তিনি সকল প্রক্রিয়ায় চেষ্টা চালিয়েছেন। জীবনের শেষ বয়সেও আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি ও সম্মাননার জন্য। তিনি ছিলেন একজন সৎ, ন্যায়পরায়ন, নিষ্ঠাবান ও দূর্নীতি বিরোধী, মনে প্রাণে বিশ^াস করতেন একদিন না একদিন কাঙ্খিত সফলতায় পৌঁছাতে পারবেন। এভাবেই সফলতার আশা বুনতে বুনতে গত ২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
তিনি বলেন, আমার বাবার মৃত্যুর পর আমার মা স্বামীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতির জন্য অফিসে অফিসে ধর্ণা ধরেন মুক্তিযোদ্ধার তালিকা অর্ন্তভ‚ক্তির জন্য। যাচাই বাছাইয়ের জন্য বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে ডাকযোগে নোটিশ প্রেরণ করা হতো সেই নোটিশের আলোকে উপজেলা ভিত্তিক যাচাই বাছাই কার্যক্রমে পিতার রেখে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধের সকল দলিলাদি উপস্থাপন করা সহ আমার মায়ের জবানবন্দী দেওয়া হয়েছে। যাচাই বাছাইয়ের চুড়ান্ত ফলাফলে বারবার আমরা হয়রানির শিকার হয়েছি। প্রশাসনের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, এমপি, মন্ত্রী সকলের কাছে গিয়েছি, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি।
বঙ্গবন্ধুর জম্মশত বাষির্কী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ সবার কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি আমার পিতা মরহুম আব্দুল আজিজকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করে ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা দেয়ার।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মরহুম আব্দুল আজিজের স্ত্রী মঞ্জুরা বেগম ও বড় জামাতা মো: ওয়াসিম।