“নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি,নতুন সমাজ নির্মান করি“ প্রতিপাদ্য নিয়ে এবার আর্ন্তজাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরাধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দিনাজপুেের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার সকালে দিনাজপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ দিনাজপুর জেলা শাখার আয়োজনে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি কানিজ রহমান সভাপতির বক্তব্যে বলেন, সংবিধানে নারীর মৌলিক অধিকারের কথা নিশ্চিত থাকলেও সকল ক্ষেত্রেই বৈষম্য আর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠিত নয়। নারীর প্রতি বৈষম্যই হচ্ছে তার নির্মম বাস্তবতা। নারী নির্যাতন কেন হচ্ছে ? এই নির্যাতনের মূল শিকড় কোথায় ? নারীর জন্য ক্ষতিকর প্রথা যেমন যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহু বিবাহ, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, পারিবারিক সম্পদের অসমবন্টন, বৈষম্যমূলক আইন, ধর্মের বিধিনিষেধ, নারী বিদ্বেষী প্রচার-প্রচারনায় প্রতিনিয়ত লঙ্ঘিত হচ্ছে নারীর মানবাধিকার। এছাড়া ঘরে বাইরে গণপরিবহনে কর্মস্থলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোথাও নারী নিরাপদ নয়। নিরাপদ নেই আদিবাসী,প্রতিবন্ধী,সংখ্যালঘু,প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ ৩ বছরের শিশুসহ ৭০ বছরের বৃদ্ধাও।
তিনি আরো বলেন, আমরা নারীর ক্ষমতায়ন চাই,এজন্য দরকার নারীর সামাজিক নিরাপত্তা। সে যেন ঘরে ও বাইরে নিরাপদে বের হতে পারে। কোভিড মহামারীর কারণে লকডাউন বা অর্থনৈতিক সংকটের ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৬৭% বাল্য বিয়ে ঘটেছে আর এর পিছনেও আছে নারীর নিরাপত্তার অভাব। আমাদের মনে হয় সম্মানহীনতায় যে কোন পুরুষ সুযোগ পেলেই কোন নারীর প্রতি সহিংস আচরণ করে। এবং ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটায়। কন্যাশিশুদের হত্যা,এসিড নিক্ষেপ,উত্ত্যক্ত ও অবহেলা এভাবে বাড়তে থাকলে তা মহামারী আকার ধারণ করবে। দিনাজপুর জেলার নারী ও শিশু আদালত এবং স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুসারে নভেম্বর’২১ হতে নভেম্বর এই সময়কালে নারী ধর্ষণ মামলা হয়েছে -০৮টি, যৌতুকের জন্য নির্যাতিত মামলা হয়েছে -১০৭টি, অপহরণ ও হত্যা মামলা হয়েছে -৩টি,শিশু ধর্ষণ হয়েছে-২টি এবং অন্যান্য মামলা হয়েছে-৭২টি। এসময় তিনি দিনাজপুর মহিলা পরিষদের রেজিষ্টার অনুযায়য় ধারাবাহিক কাজের অর্জন তুলে ধরে বলেন,অভিযোগ ২৯টি,তদন্ত হয়েছে ২২টি এবং সালিশ হয়েছে ৬টির। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলন থেকে দাবী করা হয় এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে পরিবার থেকে শুরু করে সমাজ ও রাষ্ট্রের সকলের ভূমিকা তথা বিবেক জাগ্রত করতে হবে। আর এক্ষেত্রে গণমাধ্যম এবং নারী আন্দোলন পারস্পরিক সম্পূরক শক্তি হিসেবে কাজ করলে সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকটাই কমে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে দিবস পালন উপলক্ষে মহিলা পরিষদ দিনাজপুর কর্তৃক গৃহিত ৫টি কর্মসুচী সর্ম্পকে সাংবাদিকদের অবহিত করা হয়। সংগঠনের সাধারন সম্পাদক ড.মারুফা বেগম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। উপস্থিত ছিলেন নারী নেত্রী নুরুন নাহার, মনোয়ারা সানু,জিন্নুরাইন পারু,রুবিনা আকতার,শাহনাজ পারভীন,শুক্লা কুন্ডু ও রেহেনা বেগম।
উল্লেখ্য, প্রায় তিন দশক ধরেই বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর ২০২২’ আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কর্মসূচী নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়ে আসছে। “নারী ও কন্যা নির্যাতন বন্ধ করি, নতুন সমাজ নির্মাণ করি” এই শে¬াগান নিয়ে পক্ষকালীন কর্মসূচী পালন করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ কেন্দ্রসহ সকল জেলা শাখা সমুহ।