আজ ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুরের বিরল, সদর দিনাজপুর ও ঘোড়াঘাট মুক্ত দিবস। দিবসটি পালনে বিভিন্ন কর্মসুচী নেয়া হয়েছে।
১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিল কাঞ্চন রেল ব্রীজ উড়িয়ে দিয়ে পাক হানাদার বাহিনী বিরল উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্যাম্প স্থাপন করে। টানা ৯ মাস যুদ্ধ করার পর ১৩ ডিসেম্বর ভোররাতে পাকিস্তানী বাহিনীদের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিতে হামজাপুর ৭ সেক্টরের ক্যাপ্টেন ইদ্রিসের নেতৃত্বে প্রায় ৫ শতাধিক মুক্তি বাহিনী পানির মত গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে চৌপুকুরিয়া, জগৎপুর হয়ে বিরল অভিমুখে প্রবেশ করে তিন দিক থেকে পাক বাহিনীদের ঘিরে ফেলে। এসময় পাক বাহিনী ও তাদের দোসররা তাদের পরাজয় নিশ্চিত জেনে বিরল বাজার, ঢেলপীরসহ বিভিন্ন গ্রামের আগুন লাগিয়ে দিয়ে পিছন দিকে সরতে থাকে।
সন্ধ্যায় তারা দঃ বহলা গ্রামে গণহত্যা চালিয়ে ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে। সারা রাত যুদ্ধ চলার পর ১৪ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তি বাহিনী ও জনতা রেল লাইনের ধার দিয়ে জয় বাংলার শ্লোগান দিতে দিতে দিনাজপুরের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে বগুলা খাড়ী জলুকা নামক রেল ব্রীজের নিকট পুর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা পাকসেনারা আবারো গুলি ছুঁড়তে থাকে এসময় ১১ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। হাতে গুলি বিদ্ধ হয় ক্যাপ্টেন ইদ্রিস। টানা দুই ঘন্টা সম্মুখ যুদ্ধ চলার পর পাকা হানাদার বাহিনীরা বিরল উপজেলা সীমানা ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। আর রাজাকাররা দেয় গাঁ ঢাকা।
দিনাজপুরের বিরল, মঙ্গলপুর এলাকা মুক্ত করে ১৩ডিসেম্বর ভোররাতে মুক্তিবাহিনী শহরের কাছাকাছি এসে উপনীত হয়। খানপুর, কমলপুর, রামসাগর এলাকা মুক্ত করে মুক্তি বাহিনীর আরেকটি দল শহরের কাছাকাছি এসে দাড়ায়। এদিকে পাক সেনারা ক্রমাগতভাবে বিভিন্ন এলাকায় কোণঠাসা হতে হতে ১৩ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরে পিছিয়ে আসে।
পাক বাহিনী ক্রমাগত পিছু হটতে হটতে ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার মধ্যে দিনাজপুর শহরের কুঠিবাড়ীতে সমবেত হন এবং মুক্তিবাহিনীর অগ্রাভিযানের মুখে রাতের মধ্যেই ফুলবাড়ী-খানসামা হয়ে সৈয়দপুুরের দিকে পালিয়ে যায়। ফলে কোন প্রকার প্রতিরোধ ছাড়াই দিনাজপুর শহর মুক্তিবাহিনীর দখলে আসে। ১২ থেকে ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে দিনাজপুর জেলার হাকিমপুর, নবাবগঞ্জ, ঘোড়াঘাট, বীরগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধাদের দখলে চলে আসে। ১৪ ডিসেম্বর সকাল বেলাই দিনাজপুর মুক্ত হয়।
ঘোড়াঘাট থেকে ৪১জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেছিল। যুদ্ধ চলাকালীন ১৩ জন শহীদ হন। দীর্ঘ ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হানাদার বাহিনীর হাতে প্রান হারায় কুলালন্দ গ্রামের আইয়ুব আলী,আফসারাবাদ কলোনীর সোহরাব আলী,মোশারফ হোসেন, খাইরুল গ্রামের মহেন্দ্রনাথ সরকার,পালশা গ্রামের তৎকালীন চেয়ারম্যান কাজী আঃ রশিদ ,সাইফুল ইসলাম, ডুগডুগি গ্রামের বগা মন্ডল ও তার ছেলে, কশিগাড়ী গ্রামের সিরাজ উদ্দিন, হিজল গাড়ীর ওসমান আলী, জোড়গাড়ী গ্রামের সায়েদ আলী,ভেপসিগ্রামের আঃ সাত্তার,ঘোড়াঘাট সদরের বদর উদ্দিন,আমিরুল ইসলাম ও আঃ রশিদ (খোকা)।
মুক্তিবাহিনীসহ যৌথবাহিনীর অব্যাহত গেরিলা হামলার মুখে ১৩ ডিসেম্বর গভীর রাতে পার্শ্ববর্তী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভিতর দিয়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। আজ ১৪ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট।