তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি
ভোরের কনকনের ঠান্ডায় বরফ জলে নদীতে পাথর তুলে জীবিকা
নির্বাহ করছে হাজার হাজার পাথর শ্রমিক। পরিবারের মৌলিকা
চাহিদা পূরণে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীর ঠান্ডা পানিতে
ডুবে ডুবে পাথর তুলছেন তারা। জীবিকার তাগিদে প্রচন্ড
শীতেও নদীতে নামতে হয় তাদের। দিনভর পাথর তুলে সন্ধ্যায়
মহাজনের কাছে বিক্রি করে চলছে সংসার। এ যেন বরফ জলে
জীবিকার লড়াই। এ চিত্র দেশের উত্তরের সীমান্ত প্রবাহিত নদী
মহানন্দার।
দেশের সীমান্তবর্তী উপজেলার দেড় লাখ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়
অর্ধেক জনগোষ্ঠীই পাথর শ্রমিক। বাংলাদেশ-ভারতের দুই
সীমান্তের বুক চিরে প্রবাহিত নদী মহানন্দা নদী যেন হাজার
হাজার শ্রমিকের জীবিকার বিশাল ভান্ডার। কেউ কেউ ভাগ্যদেবতাও
মনে করে মহানন্দাকে। প্রতিদিন লাখ লাখ সিএফটি নুড়ি পাথর
তোলা হচ্ছে এ নদী থেকে।
সকালে বরফগলা পানিতে শ্রমিকরা দল বেধে হাওয়ায় ফুলানো
গাড়ির টিউব, লোহার জাকলা, চালুনি ও লোহার রড নিয়ে নেমে
পড়ে। দিনভর চলে পাথর উত্তোলন। পাথর ভাসানো টিউবের ঢাকিতে
করে নদীর কিনারে এনে নদী তীরে স্তূপ করে। সন্ধ্যায় মহাজনের
কাছে বিক্রি করে মজুরি হিসেবে মিলে ৪শ থেকে ৫শ টাকা।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সরদারপাড়া, বারঘড়িয়া, দর্জিপাড়াসহ বেশ
কয়েকটি গ্রাম থাকা আসা পাথর শ্রমিকদের সাথে কথা হলে
তারা জানান, মহানন্দা নদীটা আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে।
করোনার পর থেকে অনেক জায়গায় পাথর তোলা বন্ধ। তাই
মহানন্দায় পাথর তুলে কোনমতে ডাল-ভাতে বেঁচে আছি।
সকালে নদীর পানি বরফের মতো ঠান্ডা ভাই। কাজ না করলে কি
খাব।
জাহেরুল, তাহেরুল ও হবিবর রহমান জানায়, আমাদের প্রায়
পরিবারের ৪ থেকে ৭ জন সদস্য। পরিবারের ভরণ পোষণের যাবতীয়
চাহিদা মেটাতে হয় এই জীবিকার ওপর। দিনভর দলের সঙ্গে ঠান্ডা
পানিতে পাথর তুলে সন্ধ্যায় পারিশ্রমিক নিয়ে পরিবারের
চাহিদা পূরণ করার চেষ্টা করি। এত ঠান্ডা পানিতে কাজ করছেন,
অসুখ হয় না? প্রশ্ন করলে রহিম নামের আরেক শ্রমিক জানান,
‘হ্যাঁ ভাই, সর্দি-জ্বর তো হয়। কয়দিন জ্বর থেকে সেরে উঠলাম।
কিন্তু কাজ না করলে তো উপায় নাই।
পুরুষ পাথর শ্রমিক ছাড়াও এ নদীর তীরে পাথর নেটিং, শোটিং ও
ক্রাশিংয়ের কাজ করছে শতশত নারী পাথরশ্রমিক। তেঁতুলিয়া শহর
থেকে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার নদীর তীরসহ
সড়কের উভয় পার্শ্বে চলে পাথর লোড-আনলোড, নেটিং,
শোটিং ও ক্রাশিংয়ের কাজ।
কদবানু, জরিনা খাতুন জানান, ফজরের আজান শুনে ঘুম থেকে
উঠতে হয়। তাড়াহুড়া করে রান্না করে সন্তানদের খাইয়ে বের হতে
হয়। দেরি করে কাজে পৌঁছালে শুনতে হয় মহাজনের গালি।
কোনো কোনো দিন দেরি করার কারণে কাজেই নেওয়া হয় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহাগ চন্দ্র সাহা জানান,
শীত মৌসুমে এ উপজেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ
করে। ফলে কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই মহানন্দা নদী থেকে শ্রমিকরা
পাথর তুলে জীবিকানির্বাহ করেন। শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের
মানুষের শীত মোকাবিলার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সব রকম
প্রস্তুতি রয়েছে।